পরিচালনায় ব্যর্থ হয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ৭২ কোটি টাকার জাহাজ লিজ দিলো চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এতে ৭২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে মাসে ৪২ লাখ টাকা আয় হবে বন্দরের।মেসার্স সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেড’র কাছে প্রতি মাসে ৪২ লাখ টাকা ভাড়া দেওয়া হয়েছে ‘পানগাঁও এক্সপ্রেস’, পানগাঁও সাকসেস’ ও ‘পানগাঁও ভিশন’ জাহাজ।বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি ইয়ার্ডে এক অনুষ্ঠানে জাহাজ তিনটি হস্তান্তর করা হয়। দুই বছর আগে তিনটি জাহাজ ৭২ কোটি টাকায় কিনেছিল বন্দর কর্তৃপক্ষ। পানগাঁও আইসিটি টার্মিনাল চালুর কথা বলে এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন নৌ-মন্ত্রী ও বন্দর চেয়ারম্যান।এখন দুই বছর পর নৌ-মন্ত্রী ও বন্দর চেয়ারম্যন বলছেন, জাহাজ পরিচালনা বন্দরের কাজ নয়। এজন্য আলাদা কোন লোকবলও নেই। জাহাজ ক্রয়ের সময় এ বিষয়ে আপত্তি উঠলেও তা আমলে নেননি নৌ-মন্ত্রী ও বন্দর চেয়ারম্যান।জাহাজ তিনটি ক্রয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে শুরু থেকেই। এ বিষয়ে তদন্তও করছেন দুর্নীতি দমন কমিশন। অবস্থা বেগতিক দেখে এবং পরিচালনায় ব্যর্থ হয়ে অবশেষে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে জাহাজ তিনটি লিজ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।এদিকে নৌ-মন্ত্রী আবার বলছেন একটি বন্দর দিয়ে কাজ হবেনা দেশে আরো বন্দর সৃষ্টি করতে হবে। তাহলে প্রবৃদ্ধি স্থিতিশীল থাকবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, নৌ মন্ত্রীর এমন বক্তব্য চট্টগ্রাম বন্দরকে ধংসের একটি পূর্বাভাস মাত্র। এতে করে সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর কথাই সত্যি প্রমাণিত হতে যাচ্ছে। গত শনিবার তাঁর বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, চট্টগ্রাম বন্দরকে মাফিয়াদের আড্ডা খানা হতে দেবেন না। বন্দরের জন্য বিভিন্ন সরঞ্জাম ক্রয়ের নামে লুটপাট হচ্ছে। যার প্রমাণ ৭২ কোটি টাকায় কেনা তিনটি জাহাজ দু বছর পর লিজ দেওয়া। এদিকে জাহাজ লিজ অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম বন্দরের পক্ষে চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ ও মেসার্স সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেড’র পক্ষে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান মো. আজিজ খাঁন উপস্থিত ছিলেন।জাহাজ কেনার জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের যুক্তিটা খুব জোরালো না থাকলেও বড় ধরনের অনিয়মের মাধ্যমে পুরনো তিনটি জাহাজ ক্রয় করে। পানগাঁও নৌ-টার্মিনাল ও চট্টগ্রাম বন্দরের মধ্যে পণ্যবাহী কনটেইনার আনা-নেওয়ার জন্য প্রায় ৭২ কোটি টাকা ব্যয় করে তিনটি পুরোনো জাহাজ কেনার প্রক্রিয়ায় পদে পদে অনিয়ম করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সফল হতে পারেনি বন্দর কর্তৃপক্ষ। ৩২টি জাহাজ পানগাঁও রুটে চলাচলের অনুমতি দেওয়া হলেও অলাভজনক হওয়াতে একটি জাহাজও চলাচল করেনি। জাহাজ কেনার পর নানাভাবে পানগাঁও রুট চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোন উদ্যোগই সফল হয়নি। তবে নৌ-মন্ত্রী শাজাহান খান ও বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল নিজাম উদ্দিনের বিশ্বাস এই রুটে শিগগির অনেক জাহাজ আসবে। ব্যর্থ হয়ে উদ্যোগ নেওয়ার দুই বছর পর মন্ত্রী স্বীকার করলেন জাহাজ পরিচালনা বন্দরের কাজ নয়। তিনি বলেন, ‘জাহাজ তিনটি পরিচালনা করার জন্য সামিটকে দিচ্ছি কারণ জাহাজ চালানো বন্দরের কাজ নয়।’একইভাবে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, চট্টগ্রাম কোন ব্যবসায়িকে প্রতিষ্ঠান নয়। এখানে কন্টেইনারবাহী জাহাজ পরিচালনা করে মুনাফা করা আমাদের কর্মপরিধির অন্তর্ভুক্ত নয়। জাহাজগুলো পরিচালনার জন্য আলাদা লোকবল ছিল না। বন্দরের জাহাজের লোকবল দিয়ে জাহাজ পরিচালনা করেছি।বন্দর চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের বলেন, দেশের নদীপথে প্রথমাবারের মতো কন্টেইনার জাহাজ পরিচালনায় অগ্রণী ভূমিকা পালনে সরকারের পক্ষ থেকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সে দায়িত্ব পালন করতে আমরা এই ভূমিকা নিয়েছিলাম।তবুও এই উদ্যোগে সফল হয়েছেন দাবি করে তিনি বলেন, প্রথম বছর তিনটি জাহাজ দিয়ে ১৮০০ জাহাজ পরিবহন করেছি। ভাড়া বাবদ সোয়া কোটি টাকা আয় হয়েছে। সর্বোপরি কন্টেইনার পরিবহনে গতি এসেছে।এসএইচএস/আরআইপি
Advertisement