অর্থনীতি

ইইউয়ের সঙ্গে বাণিজ্য সমস্যা ৬ মাসে সমাধান

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে বাণিজ্য ক্ষেত্রে চলমান সমস্যা চিহ্নিত করে তা যুক্তিসঙ্গত সমাধানের জন্য গঠিত ৫টি ওয়ার্কিং গ্রুপ করা হয়েছে। আগামী ‘‘ইইউ-বাংলাদেশ ৬ষ্ঠ বিজনেস ক্লাইমেট ডায়ালগ’’ শীর্ষক সংলাপে এ গ্রুপগুলোকে যুক্তিসঙ্গত সমাধানের সুপারিশ দিতে বলা হয়েছে। আগামী অক্টোবরে ‘‘ইইউ-বাংলাদেশ ৬ষ্ঠ বিজনেস ক্লাইমেট ডায়ালগ’’ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।’

Advertisement

রোববার সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ‘‘৫ম ইউরোপীয় ইউনিয়ন- বাংলাদেশ বিজনেস ক্লাইমেট ডায়ালল’’ শীর্ষক সংলাপ শেষে যৌথ প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষে ব্রিফ করেন ইইউ রাষ্ট্রদূত রেন্সজে তেরিংক।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এ ডায়ালগ ২০১৬ সালে শুরু হয়ে আজকে পঞ্চম রাউন্ড অনুষ্ঠিত হলো। ইইউয়ের সঙ্গে বাণিজ্য ক্ষেত্রে চলমান সমস্যা চিহ্নিত করে তা যুক্তিসঙ্গত সমাধানের জন্য গঠিত পাঁচটি ওয়ার্কিং গ্রুপ করা হয়েছে। আগামী ৬ষ্ঠ রাউন্ড অনুষ্ঠিত হওয়া পর্যন্ত এ গ্রুপগুলোকে সময় দেয়া হয়েছে। এর মধ্যেই ওয়াার্কিং গ্রুপ পর্যালোচনা করে আগামী রাউন্ডে সমস্যা সমাধানের বিষয়ে সুপারিশ প্রদান করবে।’

তিনি বলেন, ‘এ ধরনের ডায়ালগ আমরা বছরে দুটি করে থাকি। সুতরাং আগামী ৬ মাসের মধ্যেই তথা অক্টোবরে ‘‘ইইউ-বাংলাদেশ ৬ষ্ঠ বিজনেস ক্লাইমেট ডায়ালগ’’ অনুষ্ঠিত হবে।’

Advertisement

টিপু মুনশি বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ফার্মাসিউটিক্যাল সেক্টর, ফাইনান্সিয়াল ফ্লো, ইমপোর্ট ডিউটি কাস্টমস ট্রেড ফেসিলিটেশন, লাইসেন্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ইন দি সার্ভিস সেক্টর এবং ট্যাক্স রিজিম বিষয়ে ৫টি ওয়ার্কিং গ্রুপ করা হয়েছে।’

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আজকের বৈঠকে একটি বড় বিষয় উঠে এসেছে-সেটা হচ্ছে আমরা সময়টা ঠিক রাখতে পারি না। আমরা এ বিষয়ে গুরুত্ব দেব। এ ছাড়া ইজ অব ডুয়িং বিজনেসের সূচকে উন্নতি করা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করা হচ্ছে। অনস্টপ সার্ভিস দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘যেকোনো আলোচনা অনন্তকাল চলতে পারে না। আলোচনা করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ জন্য আমরা আগামী ৬ষ্ঠ রাউন্ড পর্যন্ত সময় দিয়েছি।’

২০১৬ সালেই এ পাঁচটা গ্রুপ করা হয়েছিল-এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা পেছনের দিকে ফিরে তাকাতে চাই না। কারণ তখন শুরু হয়েছিল। আজকের বৈঠকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে যে, এ গ্রুপ পাঁচটা যেন অবশ্যই আগামী মিটিংয়ে একটা কংক্রিট সিদ্ধান্ত দেয়। এ জন্য যতবার প্রয়োজন হবে গ্রুপগুলো বৈঠক করবে। তবে তারা যেন ব্যবসাবান্ধব সুপারিশ দিতে পারে সে জন্য বলা হয়েছে।’

Advertisement

বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ইইউর বাজারে এখন আমরা জিএসপি সুবিধা পাই। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হলে আমরা এ সুবিধা পাব না। তাই আমরা জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে চাই। এ সুবিধা পাওয়ার জন্য আমাদের ২৭টি কম্পোনেন্ট ফুলফিল করতে হবে। এসব কম্পোনেন্ট পূর্ণ করার ক্ষেত্রে ইইউর সহযোগিতা চাই।’ এ ছাড়া রফতানির বাজারে বৈচিত্র্য আনতে ইইউএর সহযোগিতা চান বাণিজ্যমন্ত্রী।

বাংলাদেশে বিনিয়োগ-বাণিজ্যে এখনও অনেক বাধা : ইইউ

ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত রেন্সজে তেরিংক বলেন, ‘বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে আইনি সংস্কার প্রক্রিয়া এখনও জটিল। নীতি কাঠামোর অনিশ্চয়তা ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার দুর্বল তদারকির মতো বাধাগুলো এখনও রয়েছে।’ বাংলাদেশ যেহেতু উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হচ্ছে, তাই ২০২১ সালের মধ্যে মানসম্মত বিনিয়োগ পরিবেশ নিশ্চিতের আহ্বানও জানান তিনি।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ভালো কাজ করছে। বাংলাদেশের ব্যবসা ও বিনিয়োগে তা ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। যদিও বাংলাদেশে এখনো সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আশাব্যঞ্জক নয়। এর নানা কারণও আছে। এই যেমন চট্টগ্রাম বন্দর ও ঢাকা বিমানবন্দর এ দেশের প্রধান গেটওয়ে। কিন্তু তা ব্যবসা-বাণিজ্যবান্ধব নয়। নতুন নুতন অবকাঠামো তৈরি ও তদারকির মাধ্যমে এ গেটওয়েকে আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে।’

রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে ইইউ দুই দেশের জন্যই লাভজনকভাবে বাণিজ্য করতে চায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইজ অব ডুয়িং বিজনেসের সূচকে ১৭৬ থেকে কমিয়ে দুই অঙ্কের কোটায় নিয়ে আসতে চান। আশা করি বাংলাদেশ এটি বাস্তবায়ন করতে পারবে।’

‘‘ইইউ-বাংলাদেশ পঞ্চম বিজনেস ক্লাইমেট ডায়ালগ’’ শীর্ষক সংলাপে সভাপতিত্ব করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। সংলাপে বাংলাদেশের পক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মফিজুল ইসলাম, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী আমিনুল হক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি এবং এতে ইইউ রাষ্ট্রদূত রেন্সজে তেরিংকসহ আটটি দেশের রাষ্ট্রদূত এবং ইইউ বিজনেস সেক্টরের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ইইউভুক্ত দেশগুলো বাংলাদেশের রফতানির সবচেয়ে বড় অংশীদার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ইইউ দেশগুলোতে ২১ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করা হয়, যা মোট রফতানির প্রায় ৫৮ শতাংশ। বাংলাদেশ ইইউভুক্ত দেশে রফতানির ক্ষেত্রে ইবিএর (অস্ত্র ছাড়া বাকি সব পণ্য) আওতায় জিএসপি সুবিধা ভোগ করছে।

এমইউএইচ/এনডিএস/পিআর