স্বাভাবিক কিছু চ্যানেলে নজরদারি করার সময় অস্বাভাবিক কিছু দেখতে পায় ভারতীয় গোয়েন্দারা। তখনই তারা জানতে পারে, দক্ষিণ এশিয়ায় জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) রক্তাক্ত এক হামলার বিস্তারিত নীলনকশা আঁকছে।
Advertisement
এ পরিকল্পনার ব্যাপারে অবগত হওয়ার পর দক্ষিণ ভারতে সন্দেহভাজন আইএস সমর্থকদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। কিন্তু তদন্তের সময় আইএসের সমর্থক শ্রীলঙ্কার উগ্রবাদী গোষ্ঠী ন্যাশনাল তৌহিদ জামায়াতের ব্যাপারে সেই সময় কোনো রেকর্ড ছিল না ভারতীয় পুলিশের হাতে।
কর্তৃপক্ষ বলছে, শ্রীলঙ্কায় ইস্টার সানডের সকালে গীর্জা এবং হোটেলে আইএস সমর্থিত এই গোষ্ঠীর সমন্বিত হামলায় ২৫০ জনের বেশি নিহত ও পাঁচ শতাধিক আহত হয়েছেন।
আরও পড়ুন : প্রথম তিন দফার ভোটে বিজেপির ভরাডুবির আভাস
Advertisement
নয়াদিল্লির থিঙ্কট্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর কনফ্লিক্ট ম্যানেজমেন্টের নির্বাহী পরিচালক অজয় সাহনি বলেন, চ্যানেলে নজরদারির সময় পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ভারতীয় গোয়েন্দারা ছদ্মবেশে ওই গোষ্ঠীটির যোগাযোগব্যবস্থায় ঢুকে পড়ে এবং তাদের হামলার পরিকল্পনার বিস্তারিত অবগত হয়।
তিনি বলেন, ‘যে কারণে তারা ওই ঘটনার বিস্তারিত তথ্য পায় এবং এসব তথ্য ছিল খুবই নির্দিষ্ট। তারা ওই গোষ্ঠীটিকে চিনে ফেলে, তাদের টার্গেট, হামলার সময়, আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীদের আস্তানার ব্যাপারেও জানতে পারে। এসব তথ্য দিয়ে শ্রীলঙ্কা সরকারের সঙ্গে যোগাযোগও করা হয়েছিল।’
শ্রীলঙ্কার শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন যে, হামলার দিন সকালে এবং তারও কয়েক সপ্তাহ আগে থেকে বেশ কয়েকটি দেশের গোয়েন্দা ইউনিট সম্ভাব্য হামলার আগাম তথ্য দিয়েছিল। কিন্তু সেই তথ্য হামলা ঠেকানোর জন্য খুব সামান্য ছিল।
আরও পড়ুন : ক্যাটওয়াক মঞ্চে ঢলে পড়ে মারা গেলেন মডেল
Advertisement
প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ও পুলিশের তত্ত্বাবধায়ক। কিছুদিন আগে দেশটিতে যে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়েছিল সেই সময় প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেকে ক্ষমতাচ্যুত করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট। তার পর থেকে উচ্চপর্যায়ের নিরাপত্তা বৈঠকগুলো এড়িয়ে চলেন বিক্রমাসিংহে।
দেশটির এ দুই নেতা বলছেন, হামলা হওয়ার পর তারা ওই নীল নকশার ব্যাপারে জানতে পেরেছেন। প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে বলেন, ‘মূল বিষয় হলো, এটা খুব, খুবই নির্দিষ্ট তথ্য এবং এই তথ্য প্রত্যেকের কাছে লিখিত আকারে পৌঁছেছিল। এ ঘটনায় ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এ ঘটনায় আমরা তদন্ত করছি।’
ভারতীয় গোয়েন্দা তথ্য প্রথম দফায় গত ৪ এপ্রিল লঙ্কান পুলিশের কাছে পৌঁছায়; যা বোমা হামলার প্রায় দুই সপ্তাহ আগে। এতে বলা হয়, কিছু গুরুত্বপূর্ণ গীর্জায় আত্মঘাতী সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা চলছে। এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছয় জনের একটি তালিকাও দেয় ভারত।
আরও পড়ুন : ছিঁচকে চোরের ছেলে থেকে অবাধ্য জঙ্গি হয়ে ওঠেন হাশিম
লঙ্কান পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক ভারতীয় এই গোয়েন্দা তথ্য দেশটির নিরাপত্তাবাহিনীর চারটি ইউনিটের পরিচালকের সঙ্গে শেয়ার করেন। এই পরিচালকরা ভিআইপি ও বিদেশি দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত। ওই তথ্যের ভিত্তিতে তাদের আওতায় থাকা লোকজনের ওপর ও স্থাপনায় অতিরিক্ত নজরদারির আহ্বান জানানো হয়।
ইনস্টিটিউট ফর কনফ্লিক্ট ম্যানেজমেন্টের নির্বাহী পরিচালক অজয় সাহনি বলেন, ইস্টার সানডের সকালে কলম্বোতে হামলা হওয়ার কিছুক্ষণ আগেও ভারতীয় গোয়েন্দারা চূড়ান্ত সতর্কবার্তা দেয়। কেন এসব সতর্কবার্তাকে গুরুত্ব দেয়া হয়নি সেটা নিয়ে তীব্র গণ-বিতর্ক হতে পারে।
এ ব্যর্থতার জন্য শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধের সময় বিদ্রোহীদের কার্যক্রম দ্রুত মোকাবেলা করতে দেশটির সাবেক প্রভাবশালী প্রেসিডেন্ট মাহিন্দ রাজাপাকসের আমলে গড়ে তোলা ব্যবস্থা ভেঙে ফেলাকে দায়ী করছেন অনেকে। দেশটির বর্তমান প্রতিরক্ষা উপ-মন্ত্রী রুয়ান ওয়াইজেওয়ার্দেনে বলেছেন, শ্রীলঙ্কান নিরাপত্তাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ দুর্বলতার কারণেই ইস্টার সানডের বোমা হামলা মোকাবেলা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে।
সূত্র : এসোসিয়েট প্রেস।
এসআইএস/এমএস