সুশাসনের জন্য নাগরিক-এর (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, মানবসেবার সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা হচ্ছে রাজনীতি। রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই দেশে গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। আর এ জন্য প্রয়োজন সুস্থ ধারার রাজনীতি তথা আদর্শভিত্তিক জনকল্যাণমুখী রাজনীতি।
Advertisement
শনিবার বিকেলে সুজনের সিলেট জেলা শাখা আয়োজিত ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কার ও নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. বদিউল আলম বলেন, গতানুগতিক রাজনীতি থেকে রাজনীতিবিদদের বেরিয়ে আসতে হবে। তাহলেই নাগরিকদের ভাবনার প্রতিফলন ঘটবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের শাসন ব্যবস্থা ভঙ্গুর। শাসন ব্যবস্থার সংস্কার প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে সবার সদিচ্ছা থাকতে হবে। কারণ, সদিচ্ছা ছাড়া কোনো কিছুর উন্নয়ন হবে না।
Advertisement
বক্তারা বলেন, রাজনীতির সংস্কার করা এখন সময়ের দাবি। পাশাপাশি কার্যকর করতে হবে জাতীয় সংসদকেও। আর তা না করতে পারলে আইনের শাসন, মৌলিক অধিকার, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হবে না। বক্তারা বিরোধী দল ছাড়া গণতন্ত্র হয় না উল্লেখ করে বলেন, নিয়ম রক্ষার জন্য বিরোধী দলের প্রয়োজন নেই।
বৈঠকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কারের ১৮টি প্রস্তাবনা পেশ করা হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন, নির্বাচনী সংস্কার, কার্যকর জাতীয় সংসদ, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন, স্বাধীন বিচার বিভাগ, সাংবিধানিক সংস্কার, স্বাধীন বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান, দুর্নীতি বিরোধী সর্বাত্মক অভিযান, বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় সরকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, শক্তিশালী নাগরিক সমাজ, মানবাধিকার সংরক্ষণ, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, আর্থিক খাতের সংস্কার ইত্যাদি।
রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন বিষয়ে প্রস্তাবনায় বলা হয়, বর্তমানে আমাদের সমাজে বিভিন্নমুখী বিভাজন লক্ষ্য করা যায়। তাই রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার বিষয়টি আমাদের অগ্রাধিকারে পরিণত হতে হবে।
নির্বাচনী সংস্কার বিষয়ে বলা হয়, নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সম্মতির শাসন তথা গণতান্ত্রিক শাসনের সূচনা হয়। তাই এ নির্বাচন হতে হবে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনটি ছিল একতরফা ও বিতর্কিত। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত কয়েকটি স্থানীয় সরকার ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে আজ এর ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন।
Advertisement
কার্যকর জাতীয় সংসদ বিষয়ে প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়, জাতীয় সংসদকে একটি স্বাধীন ও কার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে হবে, যাতে এটি রাষ্ট্রের আইন প্রণয়ন ও নীতি নির্ধারণসহ নির্বাহী বিভাগের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারে। সংসদকে কার্যকর করার জন্য অনেকগুলো বিষয়ে ভাবতে হবে।
বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচেনায় সংসদকে কার্যকর করার জন্য বিরোধী দলকে সাজানো বা নিয়ন্ত্রিত বিরোধী দলের ভূমিকায় অবতীর্ণ না হয়ে প্রকৃত বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে হবে। কারণ কার্যকর বিরোধী দল ছাড়া গণতন্ত্র হয় না।
সিলেট শাখার সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহ সাহেদার পরিচালনায় বৈঠকের শুরুতে প্রবন্ধ পাঠ করেন সুজনের প্রধান সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএমএ’র সাবেক কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি ডা. শামীমুর রহমান, অধ্যাপক তাহমিনা ইসলাম, সিলেট জেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি তাপস দাস পুরকায়স্থ, সিনিয়র আইনজীবী বেদানন্দ ভট্রাচার্য, সুজনের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দা শিরীন আক্তার, অ্যাডভোকেট ইরফানুজ্জামান, সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সহসভাপতি সমিক শহীদ জাহান, কবি একে শেরাম প্রমুখ।
ছামির মাহমুদ/এমএসএইচ/এমএস