বিশেষ প্রতিবেদন

অধিকাংশ ভবনেই ‘বিচ্যুতি’

>> সাড়ে ৩ হাজারের বেশি ভবনের মধ্যে পরিদর্শন ১৮১৮টির>> অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই অধিকাংশ ভবনের, নেই বিকল্প সিঁড়িও>> নকশা দেখাতে ব্যর্থদের ২ মে পর্যন্ত সময় দিয়েছে রাজউক

Advertisement

বনানীর এফআর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর নগরীর ১০তলার বেশি উচ্চতার বহুতল ভবনে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাসহ অন্যান্য ত্রুটি-বিচ্যুতি খতিয়ে দেখতে মাঠে নামে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। বহুতল ভবনের নির্মাণ, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাসহ সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি দেখতে আটটি জোনে ২৪টি টিম গঠন করা হয়। গত ১ এপ্রিল থেকে টিমগুলো ১০তলার অধিক উচ্চতার এক হাজার ৮১৮টি ভবন সরেজমিন পরিদর্শন করে।

এফআর টাওয়ারের অগ্নিদুর্ঘটনার পর ব্যাপক তোড়জোড় শুরু হলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বহুতল ভবন নিয়ে প্রতিবেদন জমা দিতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। প্রায় সাড়ে তিন হাজারের বেশি ভবনের মধ্যে নির্ধারিত সময়ে এক হাজার ৮১৮টি বহুতল ভবনের তথ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম হয় রাজউক।

আরও পড়ুন >> ফায়ার হাইড্রেন্ট নেই ঢাকার রাস্তায়!

Advertisement

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পরিদর্শন করা ভবনগুলোর মধ্যে বেশির ভাগ বহুতল ভবনের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া অগ্নিকাণ্ডের সময় দ্রুত প্রস্থানের জন্য বিকল্প সিঁড়ির ব্যবস্থাও পায়নি সংস্থাটি। যেসব ভবনে এ সিঁড়ি আছে তার অনেকগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী।

রাজউকের ২৪ দলের তদন্তে সবচেয়ে বেশি অনিয়মের চিত্র মেলে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থায়। অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র যেমন- ফায়ার এক্সটিংগুইশার, ফায়ার অ্যালার্ম, হোস পাইপ, ফায়ার হাইড্রেন্ট ব্যবস্থা বেশির ভাগ ভবনেই পর্যাপ্ত নেই।

এদিকে রাজধানীর বহুতল ভবনের নকশা দেখাতে আগামী ২ মে পর্যন্ত মালিকদের সময় বেঁধে দিয়েছে রাজউক। গত ১ এপ্রিল থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত রাজউক পরিচালিত বহুতল ভবনের তথ্য সংগ্রহ অভিযানে যারা নকশা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন তাদের নকশা দেখানোর জন্য আগামী ২ মে পর্যন্ত সুযোগ দেয়া হয়। বিষয়টি জানিয়েছেন রাজউকের সচিব সুশান্ত চাকমা।

আরও পড়ুন : প্রথম জীবনের মৃত্যু হয়েছে, দ্বিতীয় জীবন পেলাম

Advertisement

এ বিষয়ে তিনি এক অফিস আদেশে বলেন, ঢাকা শহরে বহুতল ভবন সম্পর্কিত তথ্য রাজউকের পরিদর্শন টিম গত ১ এপ্রিল থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত সরেজমিন পরিদর্শন করেছে। পরিদর্শনকালে যেসব ইমারতের মালিক, ডেভেলপার কোম্পানি পরিদর্শন টিমকে নকশা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন তাদের আগামী ২ মের মধ্যে সংশ্লিষ্ট পরিচালক বা অথরাইজড অফিসারের কাছে নকশা জমা দেয়ার অনুরোধ করা হলো। এ সময়ের মধ্যে নকশা দেখাতে ব্যর্থ হলে সেসব ভবনে নকশা নেই বলে গণ্য হবে। এ কারণে ঢাকা মহানগর ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ও বিল্ডিং কোড অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ২০১৬ সালে করা জরিপ অনুযায়ী, রাজউক আওতাধীন এলাকায় ২২ লাখের বেশি ইমারত রয়েছে। এর মধ্যে ৮৪ শতাংশ ছোট ভবন। ১০তলার অধিক তিন হাজার ২৭৩টি বহুতল ভবন রয়েছে। ২০১৬ সালের পর গত তিন বছরে এ সংখ্যা আরও বেড়েছে। সব মিলিয়ে বহুতল ভবনের সংখ্যা সাড়ে তিন হাজারের বেশি।

জানতে চাইলে রাজউকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে বলেন, ‘গত ১৫ এপ্রিল আমাদের একটি মিটিং হয়েছে। সেখানে এক হাজার ৮১৮টি বহুতল ভবনের তথ্য তুলে ধরা হয়। অধিকাংশ ভবনেই বিচ্যুতি পাওয়া গেছে।’

আরও পড়ুন : থাইগ্লাসে ‘মৃত্যুকূপে’ পরিণত হয়েছিল এফআর টাওয়ার

গত ২৮ মার্চ বনানীর এফআর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর রাজধানীর বহুতল ভবনের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা এবং আইনগত বিষয়গুলো খতিয়ে দেখার ঘোষণা দেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। মন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী রাজউক ১ থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত সংস্থাটির সব জোনে জরিপ চালায়।

বনানীর এফআর টাওয়ারের ভয়াবহ আগুনে ২৬ জন নিহত হন। আহত হন অনেকে। এর আগে ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে পুরান ঢাকার চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৭১ জন নিহত হন। অল্প সময়ের ব্যবধানে রাজধানী ঢাকায় দুটি বড় অগ্নিকাণ্ডের পর বহুতল ভবনের অগ্নিনিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়।

এএস/এনডিএস/এমএআর/এমএস