শ্রীলঙ্কার স্থানীয় উগ্রবাদী দল ন্যাশনাল তৌহিদ জামাতের প্রধান জাহরান হাশিমই দেশটিতে একযোগে সমন্বিত হামলার মূল হোতা বলে চিহ্নিত করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা। ইস্টার সানডের হামলার মূল হোতা এই উগ্রবাদী নেতা প্রতিবেশী ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের একটি প্রদেশে দীর্ঘদিন বসবাস করেছিলেন বলে দেশটির ইংরেজি দৈনিক দ্য হিন্দু এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে।
Advertisement
লঙ্কান সেনাবাহিনীর উঁচু স্তরের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে শুক্রবার হিন্দু এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। লঙ্কার তদন্তকারী কর্মকর্তারা রোববার শক্তিশালী সমন্বিত সিরিজ বোমা হামলার পেছনে হাশিমকে প্রধান হোতা হিসেবে শনাক্ত করেছেন। ন্যাশনাল তৌহিদ জামাতের প্রধান এই নেতার সমন্বয়ে চালানো ওই হামলায় ২৫০ জন নিহত ও ৫০০ জন আহত হয়েছেন।
হামলার দু’দিন পর জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) দায় স্বীকার এবং ধারাবাহিক আট বোমা হামলাকারীর ছবিও প্রকাশ করে। ওই আট হামলাকারীর মাঝে মুখ খোলা অবস্থায় একজনকে দেখা যায়; ধারণা করা হচ্ছে এই আইএস জঙ্গিই লঙ্কান হামলার মূল হোতা। অন্য জঙ্গিদের মুখ কালো কাপড়ে ঢাকা ছিল।
আরও পড়ুন : বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে হামলার হুঁশিয়ারি দিল আইএস
Advertisement
তবে শ্রীলঙ্কার তদন্তকারীরা একজন নারীসহ ৯ আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীকে শনাক্ত করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশটির জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা দ্য হিন্দুকে বলেন, ‘আমরা আইএসের দায়ের বিষয়টি মাথায় রেখে তদন্ত করছি। আমরা সন্দেহ করছি, হামলাকারী মৌলবাদী যুবকদের কয়েকজন ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়েছে, সম্ভবত তামিলনাড়ুতে।’
হাশিম যে ভারত সফর করেছিলেন সে ব্যাপারে মন্তব্য করেননি নয়াদিল্লির কর্মকর্তারা। তবে তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, ভারতীয় বংশোদ্ভূত তরুণদের সঙ্গে তিনি ভার্চুয়াল যোগাযোগ করতেন; সেই আলামত পাওয়া গেছে। হাশিমের ফেসবুকের পেজের একশ’র বেশি ফলোয়াড়ের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছেন ভারতের এক কর্মকর্তা।
হাশিমের উগ্রবাদী মতাদর্শ সম্বলিত বেশ কিছু ভিডিও রয়েছে; যেগুলো তরুণদের মৌলবাদে উসকানি দেয়। তার এসব ভিডিও শেয়ার করার খোঁজ পাওয়ার পর সাতজনের একটি দলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। গত বছরের সেপ্টেম্বরে কোয়েম্বাটোর থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা আইএসের প্রতি সহানুভূতিশীল বলে জানায়।
আরও পড়ুন : শ্রীলঙ্কায় হামলার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ প্রকাশ করলো আইএস
Advertisement
ওই কর্মকর্তা বলেন, ভারতের কয়েকজন রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতাকে গুপ্তহত্যার পরিকল্পনা করেছিল হাশিমের এই অনুসারীরা।
হাশিম, সাংগ্রি লা হোটেলে বোমা হামলাকারী
শ্রীলঙ্কা কর্তৃপক্ষ রোববারের ৯ আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী কিংবা সন্দেহভাজনদের নাম এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেনি। তবে কলম্বোর সমুদ্রমুখী গল রোডের পাশের সাংগ্রি লা হোটেল যে দু’জন হামলাকারী আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে; তাদের একজন হাশিম বলে নিশ্চিত করা হয়েছে।
দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশের বাত্তিকালোয়া জেলার কাত্তানকুদি থেকে মৌলবাদী গোষ্ঠী ন্যাশনাল তৌহিদ জামাত পরিচালনা করতেন। চরমপন্থী ধর্মীয় মতাদর্শের প্রচারকারী হিসেবে তার পরিচিতি রয়েছে; যা মুসলিম সম্প্রদায়ের অনেকের মাঝেই বিরক্ত তৈরি করেছিল।
চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে কাত্তানকুদির স্থানীয় বাসিন্দারা দ্য হিন্দুকে বলেন, স্থানীয় এক মৌলবীর সঙ্গে ভয়াবহ মতবিরোধের পর দুই বছর আগে ওই এলাকা ছাড়েন জাহরান হাশিম। মুসলিম নেতারা বলছেন, তখন থেকেই নিখোঁজ ছিলেন তিনি।
এসআইএস/এমকেএইচ