দুইদিনের টানা বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলজট এবং যানজটে নগরবাসীর সীমাহীন দুর্ভোগ রাজধানীর বেহাল চিত্রকেই আবার সামনে নিয়ে এলো। মঙ্গল ও বুধবারের বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় নগরীর অধিকাংশ রাস্তাঘাট। ফলে ভেঙে পড়ে ট্রাফিক ব্যবস্থা। রাস্তায় আটকা পড়া অফিসগামী মানুষ, শিক্ষার্থীসহ লাখ লাখ মানুষের দুর্ভোগের কোনো অন্ত ছিল না। ভুক্তভোগী মানুষের একটাই প্রশ্ন কবে মুক্তি এই দুর্ভোগ থেকে।ঢাকার রাস্তায় জলাবদ্ধতা নতুন কোনো ঘটনা নয়। এ ধরনের দুর্বিপাক ফি বছরই দেখা যায়। ড্রেনেজ ব্যবস্থার অপ্রতুলতা, বর্ষা মৌসুমেও রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, সমন্বয়হীনভাবে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা-এসবই মূলত দায়ী জলাবদ্ধতার জন্য। সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, ঢাকার চারপাশের প্রাকৃতিক জলাশয় খাল-বিল-নদী দখল হয়ে যাওয়া। এরফলে পানি নিষ্কাশনের প্রাকৃতিক উৎস বন্ধ হয়ে গেছে। এখন শুধু ড্রেনেজ ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করতে গিয়ে এই অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পানি নিষ্কাশনের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসা এবং দুই সিটি কর্পোরেশনের। কিন্তু এদের মধ্যে কাজের কোনো সমন্বয় নেই। কেউ কারো ওপর খবরদারিও করতে পারে না। এ কারণে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এক বড় বাধা হিসেবে দেখা দিয়েছে।২০১১ সালে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ নামে দুভাগ করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল নাগরিক সেবা জনসাধারণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া। অনেকদিন পর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হয়েছে। নতুন দুই মেয়র দায়িত্ব নেওয়ার ১০০ দিন পার হয়ে গেছে। নির্বাচনের সময় মেয়ররা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যত দ্রুত সম্ভব একটি বাসযোগ্য ঢাকা তারা উপহার দিবেন। তারা এমনও বলেছিলেন, সমস্যা চিহ্নিত-এবার সমাধানযাত্রা। কিন্তু সমস্যা চিহ্নিত থাকার পরও নতুন করে সেই সমস্যাগুলোই আবার দেখা দেওয়ায় নগরবাসী তাদের কথায় আশ্বস্ত হতে পারছে না। ১০০ দিনেই সব সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়- তবে দৃশ্যমান কিছু উন্নয়ন অবশ্যই জনসাধারণ আশা করে। বিশেষ করে জলাবদ্ধতা এবং যানজট দূর করার মত বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়ে কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতার বিষয়টি কিভাবে কাটিয়ে উঠা যায় সে ব্যাপারেও নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ । এসব ক্ষেত্রে স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনার পাশাপাশি দীর্ঘ ও টেকসই উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। যেতে হবে সমস্যার গভীরে। সমস্যা সমাধানে ওয়াসা, রাজউক, সিটি কর্পোরেশনকে একসঙ্গে কাজ করতে। বিশেষ করে ঢাকার চারপাশের নদী-খাল-বিল দখলমুক্ত রাখতে হবে যে কোনো মূল্যে।নদী-খাল দখল দূষণ দেশে নতুন কোনো ঘটনা নয়। ‘জোর যার মুল্লুক তার’ নীতিতে যে যেভাবে পারে এই দখলদারিত্ব চালিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে সব শেয়ালের এক রা। প্রশাসনও এসব ক্ষেত্রে অনেক সময় নির্বিকার ভূমিকা পালন করে থাকে। দখলদাররা এতটা প্রভাবশালী থাকে যে তারা, আইন প্রশাসন সবকিছুকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখায়। অথচ নদ-নদীর টিকে থাকার সঙ্গে শুধু জলাবদ্ধতা নয় বলা যায় বাংলাদেশের ভূ-প্রাকৃতিক অস্তিত্বের সম্পর্ক জড়িত। কাজেই যে কোনো মূল্যে নদীগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। ইতোপূর্বে ঢাকার চারপাশের নদী বাঁচানোর জন্য হাইকোর্টকে পর্যন্ত হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। কিন্তু দখল বন্ধ হচ্ছে না। একদিকে উচ্ছেদ অভিযান চলে অন্যদিকে নতুন করে দখল হয়। এই সাপলুডু খেলায় শেষ পর্যন্ত জয়ী হয় দখলকারীরাই। অথচ নদী দখল বন্ধ করতে না পারলে এর পরিণতি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। পরিবেশ সচেতনতার এ যুগে নদীর অপমৃত্যু হবে আর সকলে চেয়ে চেয়ে দেখবে এটা হতে পারে না। দখলকারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ছাড়া নদী দখল বন্ধ করা যাবে না। নদী দখলে একটি দুষ্টচক্র অত্যন্ত ক্রিয়াশীল। এ চক্র ভাঙতে হবে। প্রশাসনের কোনো গাফিলতি থাকলে সে ব্যাপারেও ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা নদীমাতৃক বাংলাদেশকে তার আপন মহিমায় দেখতে চাই।এইচআর/আরআইপি
Advertisement