জাতীয়

‘বাড়ি ফিরতে না পারলে ক্ষমা করিস মা’

ঘুম ভাঙেনি বিবেকের। ঘুমন্ত বিবেক নিয়ে সড়কে চলাচল করা বিপজ্জনক; এর বড় উদাহরণ লাবণ্যর অবেলায় চলে যাওয়া। অব্যবস্থাপনার সড়কে থামেনি মৃত্যুর মিছিল। জানি না বাইরে থেকে ঘরে নিরাপদে ফিরতে পারব কিনা। বাইরে থেকে বাড়ি ফিরতে না পারলে আমাকে ক্ষমা করিস মা।

Advertisement

রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানা এলাকায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাহমিদা হক লাবণ্যের (২১) মৃত্যুর প্রতিবাদ ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে এভাবেই আবেগতাড়িত বক্তব্য দেন সহপাঠীরা।

শনিবার বেলা দেড়টার দিকে মহাখালী ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে মানববন্ধনে বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাকার্ড হাতে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে অংশ নেন লাবণ্যের সহপাঠীসহ অর্ধশতাধিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী।

মানববন্ধনে প্ল্যাকার্ডগুলোতে লেখা- হোয়ার ইজ মার্ডারার?, ৩০০ টাকার হেলমেট জীবন বাঁচাবে তো?, আজ নিরাপদে বাড়ি ফিরব তো?, উবার-পাঠাও চালকদের দক্ষতা পরীক্ষণের মাধ্যমে আলাদা নীতিমালা চাই, দয়া করে সকালে ঘুম থেকে উঠি, কারণ বিবেকের ঘুম এখন না ভাঙলে হয়তোবা রাস্তায় আপনার শেষ ঘুম হতে পারে, সাবধান, সড়কে মৃত্যুর মিছিল থামে নাই! সড়কে মৃত্যুর মিছিল আর কতো?, লাবণ্যের মতো আর কারো মৃত্যু কাম্য নয়, চলে গেল আমার বোন লাবণ্য, বাড়ি ফিরতে না পারলে মা আমাকে ক্ষমা করিস, আর কতো মেধাবী রক্ত দিবে?

Advertisement

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিইসি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও লাবণ্যের সহপাঠী সারতাজ ইসলাম শোভন জাগো নিউজকে বলেন, লাবণ্যের মৃত্যু চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে, সড়ক আমাদের জন্য মৃত্যুর ফাঁদ। সড়কে শৃঙ্খলা নেই। নেহাত দুর্ঘটনা নয়, লাবণ্যের মৃত্যু হত্যার শামিল। অথচ শুধুমাত্র উবার চালককে পুলিশ আটক করেছে। কিন্তু মূল যে কালপ্রিট সেই কাভার্ডভ্যান চালককে এখনো ট্রেস করতে পারেনি পুলিশ।

তিনি আরও বলেন, বেলা পৌনে ১১টার দিকে দুর্ঘটনাটি ঘটে। ওই সময় তো কাভার্ডভ্যানের মতো ভারী যানবাহন সড়কে থাকার কথা নয়। অথচ পুলিশের সামনেই ওই কাভার্ডভ্যানটি চলাচল করেছে। কেউ কোথাও আটকায়নি। যদি কাভার্ডভ্যানটি চাপা না দিতো, তাহলে আজকে প্রাণোচ্ছ্বাস নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসতো লাবণ্য।

মানববন্ধনে অংশ নেয়া লাবিব সাদ ওয়াহিদ নামে বিবিএ শিক্ষার্থী বলেন, ৩০০ টাকার হেলমেট পরিয়ে উবার কিংবা পাঠাওয়ের মতো অ্যাপসভিত্তিক পরিবহন সেবা গ্রহণ কতোটা যৌক্তিক? আমরাও হরহামেশা উঠছি, চলাচল করছি। সময় এসেছে বদলে যাওয়ার। আমরা চাই ট্রাফিক বিভাগ মানহীন এসব হেলমেট বিক্রি ও ব্যবহার বন্ধে উদ্যোগ নিক। আমরা লাবণ্যের মতো আর কোনো মৃত্যু চাই না।

শাহরিয়ার নামে লাবণ্যের আরেক সহপাঠী বলেন, দুর্ঘটনার পর পুলিশ নয়, আমরা ভিডিও ফুটেজ উদ্ধার করেছি। অভিযুক্ত উবার চালকের ঠিকানা সংগ্রহ করে পুলিশকে দিয়েছি। এরপর উবার চালককে আটক করা হয়েছে। কিন্তু কাভার্ডভ্যান চালককে ধরা যায়নি। পুলিশকে অনুরোধ করবো, লাবণ্যের মতো আর কোনো মৃত্যু যাতে না ঘটে, সেজন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির প্রয়োজন।

Advertisement

উল্লেখ্য, রাজধানীর শেরেবাংলা থানাধীন কলেজগেট এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় লাবণ্য নিহত হওয়ার ঘটনায় পলাতক উবার মোটরবাইক চালক সুমন হোসেনকে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে আটক করে পুলিশ।

পুলিশি হেফাজতে সুমনকে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। একই সঙ্গে লাবণ্যকে বহনে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটিও (ঢাকা-মেট্রো-হ-৩৬-২৩৫৮) হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। তবে ঘাতক কাভার্ডভ্যান ও চালককে এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি।

তেজগাঁও বিভাগের ডিসি বিপ্লব কুমার সরকার জানান, ওই ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করা হয়েছে। এ ঘটনার মূল অভিযুক্ত কাভার্ডভ্যান চালক পলাতক। তাকে আটকের চেষ্টা চলছে।

জেইউ/এমএস