বাংলাদেশ বার কাউন্সিল নির্বাচনে আনুষ্ঠানিকভাবে ভোট গণনা করে ফলাফল ঘোষণার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আইন অনুযায়ী কাউন্সিলের চেয়ারম্যান সারাদেশ থেকে পাঠানো সকল ভোট গণনা করে ফল ঘোষণা করতে চাইলেও সরকার সমর্থক আইনজীবীদের চাপের মুখে তিনি তা করতে পারেননি।পরে তিনি গণনা ছাড়াই ফল ঘোষণা শুরু করেন। এ নিয়ে বুধবার বেলা সোয়া ২টা থেকে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীদের মধ্যে তীব্র উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সরকার সমর্থক আইনজীবীরা অ্যাটর্নি জেনারেলকে বিএনপির দালাল আখ্যায়িত করে তার পদত্যাগও দাবি করেন।অভিযোগ উঠেছে, গণনা ছাড়াই ফল ঘোষণায় অ্যাটর্নি জেনারেলকে বাধ্য করার ক্ষেত্রে পেছনে থেকে কলকাঠি নেড়েছেন সরকার সমর্থিত প্যানেলের অন্যতম প্রার্থী ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলামের মেয়ে ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর।বুধবার (২৬ আগস্ট) আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রক ও তদারক সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাচনে সারাদেশে একযোগে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ওই দিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ৭৮টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হয়, যাতে ভোটার ছিলেন ৪৩ হাজার ৩০২। ৬১ জন প্রার্থীর মধ্যে ভোটে নির্বাচিত ১৪ জন আগামী তিন বছর কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। অনানুষ্ঠানিক ফলাফলে ১৪টি পদের মধ্যে ১০টিতে জয় লাভ করে সরকার সমর্থিত সাদা প্যানেল এবং চারটিতে জয় পায় বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেল। ১৫ সদস্যের কমিটিতে অ্যাটর্নি জেনারেল পদাধিকার বলে বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান।ফলাফল ঘোষণার পূর্ব নির্ধারিত সময় অনুযায়ী দুপুরে বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মাহবুবে আলম কাউন্সিলের সচিবসহ অন্য কর্মকর্তাদের নিয়ে ভোট গণনার উদ্যোগ নেন। এ সময় নীল প্যানেলের অন্যতম প্রার্থী মাহবুব উদ্দিন খোকন সেখানে উপস্থিত থাকলেও সাদা প্যানেলের কোনো প্রার্থী তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। এক পর্যায়ে তানিয়া আমীর সেখানে উপস্থিত হয়ে এর প্রতিবাদ জানান।তিনি দাবি করেন, ‘ভোট গণনা ছাড়াই ফলাফল ঘোষণা করতে হবে। বার কাউন্সিলের ৪২ বছরের ইতিহাসে এটাই হয়েছে।’ তবে অ্যাটর্নি জেনারেল জবাবে জানান, আইন অনুযায়ী কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ভোট গণনার পরে ফলাফল ঘোষণা করবেন। এটি তার এখতিয়ার।এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে মধ্যকার তর্কাতর্কির সময় কিছু আইনজীবী তানিয়া আমীরের সমর্থনে অ্যাটর্নি জেনারেলকে দালাল আখ্যায়িত করে তার পদত্যাগ দাবি করেন। সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদী, কে এম সাইফুদ্দিন, সানজিদা খানম এমপিসহ কয়েকজন আইনজীবী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের বিরুদ্ধে স্লোগানও দেন।এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল বেশ বিমর্ষ ও অসহায় মনে হয়। এর এক পর্যায়ে তিনি ফলাফল ঘোষণা স্থগিত করে রোববার বিষয়টি নিয়ে আপিল বিভাগে যাওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান। পরে সাদা প্যানেলের আরেক প্রার্থী সিনিয়র আইনজীবী আবদুল বাসেত মজুমদার অ্যাটর্নি জেনারেলের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করে বার কাউন্সিল ভবন ত্যাগ করেন। কিন্তু তানিয়া আমীর তার সিদ্ধান্তে অটল।পরে তিনি তার বাবা আমীর-উল ইসলামকে সেখানে ডেকে আনেন। ব্যারিস্টার আমীরও আজই ফলাফল ঘোষণার দাবি জানান। এভাবে আইনজীবীদের চাপের মুখে অ্যাটর্নি জেনারেল রোববারের তারিখ থেকে সরে এসে ফলাফল ঘোষণার জন্য বৃহস্পতিবার বেলা ২টার সময় নির্ধারণ করেন। ব্যারিস্টার আমীরসহ অন্য আইনজীবীরা তাতেও জোর অসম্মতি জানালে অ্যাটর্নি জেনারেল অবশেষে জানান, আজ সন্ধ্যা ৬টায় ফলাফল ঘোষণা করা হবে।সন্ধ্যা ৬টায় অ্যাটর্নি জেনারেল আবারো ভোট গণনা শুরু করতে চাইলে আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা তাতে বাধা দেন। এ সময় মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘আইনে বলা আছে, ভোট গণনা করতে হবে। গণনা ছাড়া ফলাফল ঘোষণা করা যায় কি? গণনা করতে সমস্যা কোথায়? আপনাদের ভয় কী? গণনার পরের ফলাফলে আমি হেরে গেলেও তা মেনে নেবো।’কিন্তু সরকার সমর্থকরা তাতে অসম্মতি জানান। এরপরে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আমি মনে করি এটি একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। আইনগত কারণে একে বিতর্কিত হতে দেয়া যায় না। আইন অনুযায়ী আমি তাই ভোট গণনা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সম্ভব হচ্ছে না। তাই আমি প্রিজাইর্ডিং অফিসারের পাঠানো ফলাফলই ঘোষণা করছি।’এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল প্রতিটি কেন্দ্রের বুথ অনুযায়ী ফলাফল ঘোষণা শুরু করেন।এফএইচ/বিএ
Advertisement