দেশজুড়ে

ঘুঘু দম্পতিকে বাথরুম ছেড়ে দিলেন সরকারি কর্মকর্তা

মনীষীরা বলেছেন, ‘জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর’। আমাদের সমাজে বাস করা এমন কিছু মানুষ আছে যারা সবার অগোচরে নীরবে কাজ করে যাচ্ছেন। পাখির প্রতি এমন ভালোবাসা থেকেই বাথরুম ছেড়ে দিয়েছেন মুলতান হোসেন নামে সরকারি এক কর্মকতা। তিনি নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা।

Advertisement

২০১৪ সালের আগস্টে মহাদেবপুর উপজেলায় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) হিসেবে যোগদান করেন মুলতান হোসেন। যোগদানের পর থেকে তার বাথরুমের ভেতরে ভেন্টিলেটরে বাস করতো একজোড়া ঘুঘু। ভেন্টিলেটরে ডিম দেয়ার পর বাচ্চা ফুটিয়ে বড় হওয়ার পর আবার প্রকৃতির কোলে ফিরে যেত। কিন্তু গত দুদিন অফিস বন্ধ থাকায় ঘুঘুটি ডিম পাড়তে ভেন্টিলেটর থেকে বেসিনের ওপর এসে বাসা বানিয়ে ডিম দেয়।

গত ৪ এপ্রিল বিকেলে মুলতান হোসেন অফিস শেষে বাড়ি চলে যান। শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটি থাকায় অফিস বন্ধ ছিল। ৭ এপ্রিল রোববার অফিসে এসে বাথরুমে তিনি গিয়ে দেখেন এই দুদিন অফিস বন্ধ থাকার মাঝেই ওই ঘুঘু দম্পতি ভেন্টিলেটর থেকে নেমে এসে তার বেসিনের কাচে বাসা বানিয়ে ডিম দিয়ে দিব্বি বসে থেকে ডিমে তা দিচ্ছে। এ দৃশ্য দেখে তিনি অবাক।

মুলতান হোসেন বলেন, উপজেলায় যোগদানের কিছুদিন পর হঠাৎ দেখি আমার বাথরুমের ভেন্টিলেটরে একজোড়া ঘুঘু দম্পতি বাসা বেঁধেছে। এরপর থেকে প্রতিবার প্রজনন কালে বাসা বেঁধে ডিম দিয়ে বাচ্চা ফুটানোর পর আবার চলে যায়। গত বছর বর্ষাকালে তিনি দেখেন ডিমে তা দেয়ারত ঘুঘু দম্পতি বৃষ্টির ছিটা পানিতে ভিজে যাচ্ছে। এ দৃশ্য দেখে তাদের গায়ে পানি যেন না পড়ে তার জন্য ভেন্টিলেটরের একটি অংশ ঢেকে দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত চার বছর ধরে ঘুঘু দম্পতি তাদের নিরাপদ এ আশ্রয়ে থেকে নির্বিঘ্নে বংশবিস্তারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

Advertisement

তিনি আরও বলেন, গত ৪ এপ্রিল অফিস শেষে বিকেলে বাড়ি চলে যাই। শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটি থাকায় অফিস বন্ধ ছিল। ৭ এপ্রিল রোববার অফিসে এসে দেখি ঘুঘু দম্পতি ভেন্টিলেটর থেকে নেমে এসে বেসিনের কাঁচে বাসা বানিয়ে ডিম দিয়ে তা দিচ্ছে। এ দৃশ্য দেখার পর ঘুঘুর সুবিধার্থে আমি অফিসের অন্য বাথরুম ব্যবহার শুরু করি। পাখিদের একটু নিরিবিলি পরিবেশ করে দিতে বাথরুমের দরজায় প্রবেশ নিষেধ সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেই, যাতে ভুল করেও কেউ ওই ঘুঘুজোড়ার বিঘ্ন সৃষ্টি না করে। বাচ্চা বড় হওয়ায় মঙ্গলবার সকাল থেকে ঘুঘু দম্পতিকে আর দেখা যাচ্ছে না বলেও জানান তিনি।

মহাদেবপুর উপজেলা প্রাণ ও প্রকৃতি সংগঠনের সভাপতি কাজী নাজমুল হোসেন বলেন, পাখি সংরক্ষণ ও শিকার না করার বিষয়ে আমাদের প্রচার ও প্রচারণায় মানুষ এখন সচেতন হয়েছে। পাখিদের নিরাপদ আশ্রয় ও বেড়ে উঠতে একটা সুন্দর নিরিবিলি পরিবেশ দরকার। ঘুঘু দম্পতিকে ডিম ও বাচ্চা ফুটাতে সহযোগিতা করায় নিঃসন্দেহ একটা ভালো উদ্যোগ বলে মনে করেন তিনি। জীব ও পাখি প্রেম ভালোবাসা থেকেই সৃষ্টি হয়।

আব্বাস আলী/এমএএস/পিআর

Advertisement