বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়েছে। রিটে স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, জনপ্রশাসন সচিব ও দেশের সকল জেলা প্রশাসকদের বিবাদী করা হয়েছে।
Advertisement
ব্রিটিশ দৈনিক ‘দ্য টেলিগ্রাফ’সহ দেশের কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় এ-সংক্রান্ত প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে আজ বুধবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি করেন।
হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে এ রিটের শুনানি হতে পারে বলে জাগো নিউজকে জানিয়েছেন আইনজীবী সুমন।
গত ২২ এপ্রিল দ্য টেলিগ্রাফ ‘সুপারবাগস লিঙ্কড টু এইট আউট অব টেন ডেথস ইন বাংলাদেশ আইসিইউ'স’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) ৮০ শতাংশ মৃত্যুর জন্য অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সুপারবাগ দায়ী।
Advertisement
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসক সায়েদুর রহমানকে উদ্বৃত করে টেলিগ্রাফের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি হয়েছিলেন ৯০০ রোগী। তাদের মধ্যে ৪০০ জনই মারা গেছেন।
মৃতদের মধ্যে ৮০ শতাংশের মৃত্যুর কারণ হিসেবে ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাকজনিত ইনফেকশনকে দায়ী করা হয়েছে। মৃত রোগীর বেশিরভাগ আসে সরকারি আইসিইউ থেকে। তবে, সেখানে এসব রোগী যথাযথ নজরদারিতে ছিলেন না।
বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে এই অবস্থা বেশি দেখা যায়। কারণ এসব দেশে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের পরামর্শ যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয় না। আবার ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নিজ থেকেই অ্যান্টিবায়োটিক নেয়া এবং দোকান থেকে অবৈধভাবে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে রোগীরা ব্যবহার করেন। আবার মানুষের ব্যবহৃত ওষুধ অধিক লাভের জন্য পশুর ওজন বাড়াতেও প্রয়োগ করা হয় বলে জানিয়েছে ওই প্রতিবেদন।
রিট আবেদনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরে বলা হয়েছে, অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি শরীর প্রতিরোধ গড়ে তুললে সে অবস্থাকে বলা হয় অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স।এসব কারণে প্রতিবছর বিশ্বে সাত লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। ২০৫০ সাল নাগাদ এ সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াতে পারে এক কোটিতে।
Advertisement
পশুখাদ্য, মাছ এবং কৃষিতে অতিমাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। সবচেয়ে বেশি অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হচ্ছে কৃষিতে, যা দেশে ব্যবহৃত মোট অ্যান্টিবায়োটিকের প্রায় অর্ধেক। ফলে খুব সহজেই কৃষি খাদ্যের মধ্য দিয়ে এই অ্যান্টিবায়োটিক মানুষের শরীর ঢুকছে। এতে একদিকে যেমন অ্যান্টিবায়াটিকের কার্যকারিতা হারাচ্ছে, তেমনি শরীরও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারাচ্ছে।
রিটে আরও বলা হয়, অপ্রয়োজনীয় ব্যবহারের কারণে অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা যে নষ্ট হয় বা হুমকি তৈরি করে-সে বিষয়টি তুলে ধরতে জাতীয় ওষুধ নীতি ব্যর্থ হয়েছে। অ্যাটিবায়োটিকের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার মানুষের মৃত্যুর ফাঁদ তৈরি করছে। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে এই ফাঁদ থেকে মানুষকে রক্ষা করা।
এফএইচ/এমএসএইচ/এসআর/এমকেএইচ