যুক্তরাজ্যে থাকা অনিয়মিত ও অবৈধ বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠাতে ঢাকার সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) আদলে একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) সই করতে চায় ব্রিটিশ সরকার। তবে এতে রাজি নয় বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র এ তথ্য জানায়।
Advertisement
জানা যায়, আজ (বুধবার) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় দুই দেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া তৃতীয় কৌশলগত সংলাপে অবৈধ বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে ঢাকার ওপর চাপ দেবে লন্ডন।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, অবৈধ বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠাতে ২০১৬ সালে ঢাকার সঙ্গে এসওপি স্বাক্ষর করে ইইউ। যুক্তরাজ্যও এখন একই বিষয়ে আলাদা এসওপি সই করতে আগ্রহী।
‘বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনতে ইইউর সঙ্গে এসওপি রয়েছে। ওই এসওপি স্বাক্ষর হওয়ার সময় যুক্তরাজ্যও ইইউয়ের অংশীদার ছিল। ফলে আলাদা করে আর কোনো চুক্তির দরকার নেই,’ বলেন তিনি।
Advertisement
ইতোমধ্যে বৈঠকে যোগ দিতে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দফতরের পররাষ্ট্র সচিব পদমর্যাদার পার্মানেন্ট আন্ডার সেক্রেটারি সাইমন ম্যাকডোনাল্ডের নেতৃত্বে ১৫ থেকে ২০ সদস্যের প্রতিনিধি দল মঙ্গলবার ঢাকায় পৌঁছেছে।
যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধি দলে পররাষ্ট্র দফতর, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন অধিদফতর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, যুক্তরাজ্য সীমান্ত এজেন্সি, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা থাকবেন।
বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. শহীদুল হক বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন। বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলে পররাষ্ট্র, বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, নিরাপত্তা সেবা বিভাগ এবং বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ শাখার কর্মকর্তারা থাকবেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে নিয়মিত বৈঠকের অংশ হিসেবে তৃতীয় কৌশলগত সংলাপ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সংলাপে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে। এবারের বৈঠকে ব্রেক্সিট ও ব্রেক্সিটপরবর্তী বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য বাণিজ্য সম্পর্ক প্রাধান্য দেবে ঢাকা।
Advertisement
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বৈঠকে যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে ইইউয়ের চেয়ে বেশি বাণিজ্য সুবিধা চায় বাংলাদেশ। ঢাকা ইইউয়ের এভরিথিংস বাট আর্মস (ইবিএ) সুবিধা পায়। অবশ্য লন্ডনও অবম্য ইবিএর থেকেও বেশি সুবিধা দিতে চায়।
তবে যতদিন ইবিএর থেকে আরও ভালো কোনো চুক্তিতে দুদেশ না পৌঁছায় ততদিন বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্পর্কে ইবিএর সমান সুবিধা ভোগ করবে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এছাড়া দুই দেশের কৌশলগত সংলাপে ব্রেক্সিট নিয়ে ইউরোপের সার্বিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা, বাংলাদেশের সঙ্গে চীনসহ দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক, অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন সম্পর্ক, নিরাপত্তা ও সামরিক সহযোগিতা এবং অভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট বৈশ্বিক ইস্যুগুলো নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হবে বলে জানা যায়।
এছাড়া দুদেশের সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করার পাশাপাশি বাংলাদেশে আরও ব্রিটিশ বিনিয়োগ বাড়ানো, যুক্তরাজ্যের ভিসা পাওয়ার প্রক্রিয়া ঝামেলামুক্ত করার আহ্বান জানাবে ঢাকা।
রোহিঙ্গা সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানে চাপ অব্যাহত রাখার পাশাপাশি জঙ্গিবাদ দমন, সম্পর্কের নতুন সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র, আঞ্চলিক যোগাযোগ ও স্থীতিশীলতা, জলবায়ু পরিবর্তন, অভিবাসন, জাতিসংঘে শান্তিরক্ষায় সহযোগিতা, উন্নয়ন সহযোগিতা এবং এলসিডি থেকে উত্তরণ নিয়ে প্রক্রিয়া নিয়ে কৌশলগত সংলাপে আলোচনা হবে বলেও জানায় কূটনৈতিক সূত্র।
২০১৭ সালে দুদেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে নিয়মিত বৈঠকে বসতে কৌশলগত সংলাপ চুক্তি স্বাক্ষরের পর প্রথম বৈঠকটি ওই বছরের ২৮ মার্চ বাংলাদেশে এবং দ্বিতীয় বৈঠকটি পরের বছরের ১৫ মার্চ যুক্তরাজ্যে অনুষ্ঠিত হয়।
জেপি/বিএ