২০১৭ সালে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে আমদানি করা কয়েক টন খেজুর। মেয়াদ শেষ হওয়ায় ২০১৮ সালে পুরনো স্টিকার ছিঁড়ে নতুন স্টিকার লাগানো হয়। সেটির মেয়াদ ছিল ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। অর্থাৎ ভুয়া মেয়াদও শেষ।
Advertisement
অথচ গত বছর এই প্রতিষ্ঠানটিতে অভিযান চালিয়ে মানসম্মত খেজুর পাওয়ায় তাদের ‘ধন্যবাদ’ স্বীকৃতি দিয়েছিল র্যাব।
মঙ্গলবার সরেজমিন পুরান ঢাকার বাদামতলীর মেসার্স মৌসুমি ট্রেডার্সে গিয়ে দেখা গেল এই চিত্র। অভিযানে তাদের গুদাম ও শোরুম থেকে দেড় থেকে দুই বছর আগের মেয়াদোত্তীর্ণ খেজুর জব্দ করা হয়েছে।
আজ দিনভর বাদামতলীতে এ অভিযান পরিচালনা করেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম ও র্যাব-১০।
Advertisement
অভিযানের শুরুতে মৌসুমি ট্রেডার্সের দুটি গুদামে যায় র্যাব। দেখা যায়, সেখানে বিপুল পরিমাণে পচা ও মেয়াদোত্তীর্ণ খেজুর মজুত রয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণ খেজুরের প্যাকেট ছিঁড়ে নতুন চকচকে প্যাকেটে ঢুকিয়ে নতুন করে মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখের স্টিকার লাগানো হচ্ছে।
মেয়াদোত্তীর্ণ এই খেজুরগুলোকে মদিনা থেকে আমদানিকৃত সাঊদি ডেটস (আম্বার-এ) বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। এগুলোর মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ দেয়া হয়েছে ২০২০ সালের ১ আগস্ট।
দুই গুদামের কার্যক্রম থামিয়ে বাদামতলীর সরকার কান্দিলেনের ১৯/১ নম্বর মৌসুমি ট্রেডার্সের শোরুম ও কোল্ডস্টোরেজে অভিযান চালানো হয়। প্রতিষ্ঠানটির কোল্ডস্টোরেজের নাম মা এসি মার্কেট।
তাদের কোল্ডস্টোরেজে অভিযান চালিয়ে দেখা যায়, ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারির মেয়াদোত্তীর্ণ সৌদির খেজুর রাখা হয়েছে। স্টোরেজের ভেতরের খেজুরের কার্টনগুলো খুলে ফ্যাকাসে রঙের জরাজীর্ণ অবস্থায় দেখা যায়। ইতোমধ্যে রাজধানীর কয়েকটি বাজারের খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করা হয়েছে এই খেজুর। বিকেলে আরও কয়েকজন ব্যবসায়ীর কাছে ডেলিভারি দেয়ার কথা ছিল।
Advertisement
অভিযানের পর র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম মৌসুমি ট্রেডার্সের তিন ম্যানেজারকে দুই বছর করে জেল দিয়েছেন। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটিকে ২৬ লাখ টাকা জরিমানা করে তাদের ৪ টন খেজুর জব্দ করেন। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির কোল্ডস্টোরেজ, গুদাম ও শোরুমকে সিলগালার সিদ্ধান্ত দেন ম্যাজিস্ট্রেট।
সাজাপ্রাপ্ত তিন ম্যানেজার হলেন- ফারুক, তানভীর ও শফিকুল। তারা সিল দেয়া ও মোড়ক পাল্টানোর কাজে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। এই প্রতিষ্ঠানের মালিক হাজি তারেক আহম্মেদ বর্তমানে পলাতক। তার বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হবে বলে জানান ম্যাজিস্ট্রেট।
অভিযানে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
অভিযান শেষে সারওয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখানে আমরা যা দেখেছি তা অত্যন্ত দুঃখজনক। রমজানের মতো পবিত্র মাসে আমরা দেশের মানুষকে ভেজাল মানহীন খেজুর খেতে দিতে পারি না। তাই আমাদের এই অভিযান। অভিযানে আমরা দেড় থেকে দুই বছর আগের মেয়াদোত্তীর্ণ খেজুরও পেয়েছি। এসব অনিয়মের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির নানা অনিয়মের প্রেক্ষিতে সিলগালা, জরিমানা ও তিন ম্যানেজারকে সাজা দেয়া হয়েছে। অভিযানের মাধ্যমে রমজানের আগেই বাজার থেকে এসব মানহীন মেয়াদোত্তীর্ণ খেজুর জব্দ করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেসব দোকান এই প্রতিষ্ঠান থেকে খেজুর কিনে বাজারে বিক্রি করছে আমরা তাদের নাম সংগ্রহের চেষ্টা করছি। আমরা তাদের কাছ থেকেও এসব মানহীন খেজুর উদ্ধার করব।’
এআর/জেএইচ/পিআর