আইন-আদালত

‘দ্বিতীয় জাহালম’ আরমানের মামলার সব নথি চেয়েছেন হাইকোর্ট

মাদক মামলায় ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত শাহাবুদ্দিন বিহারির পরিবর্তে ভুল আসামি হিসেবে ৩ বছর ধরে কারাগারে থাকা আরমানের (৩৬) সংশ্লিষ্ট মামলার যাবতীয় নথিপত্র তলব করেছেন হাইকোর্ট। আগামী ৬ মে’র মধ্যে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতকে সমস্ত নথি পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

Advertisement

একইসঙ্গে আরমানকে আটক রাখা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তাকে কেন মুক্তি দেয়া হবে না, তাকে হাইকোর্টে হাজির করার কেন নির্দেশ দেয়া হবে না এবং তাকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।

আগামী ১০ দিনের মধ্যে স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের আইজি, ঢাকার পুলিশ সুপার, পল্লবী থানার ওসিসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

জনস্বার্থে দায়ের হওয়া এ সংক্রান্ত এক রিটের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।

Advertisement

আদালতে আজ আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার হুমায়ুন কবির পল্লব। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু।

আরমানকে আদালতে হাজির করার নির্দেশনা ও মুক্তি চেয়ে, কারাগারে রাখায় তার ক্ষতিপূরণ চেয়ে এবং আরমানের আটকাদেশ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না’-এই মর্মে রুল জারির আর্জি জানিয়ে গত ২১ এপ্রিল হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। ওই রিটের শুনানি থেকে আজ এ আদেশ এসেছে।

সোনালী ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় ২৬ মামলার ভুল আসামি পাটকল শ্রমিক জাহালম প্রায় ৩ বছর কারাভোগের পর হাইকোর্টের নজরে আনার পর মুক্তি পান।

এরপর গত ১৮ এপ্রিল একটি জাতীয় দৈনিকে ‘কারাগারে আরেক জাহালম’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন সংযুক্ত করে রিট আবেদনটি দায়ের করা হয়।

Advertisement

প্রতিবেদনে বলা হয়, অপরাধী না হয়েও পাটকল শ্রমিক জাহালমকে জালিয়াতির ৩৩ মামলার আসামি হয়ে ৩ বছর কারাভোগ করতে হয়েছিল। অনেক ঘাটের জল পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত উচ্চ আদালতের হস্তক্ষেপে তিনি কারামুক্ত হন। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা এখন মানুষের মুখে মুখে। এর রেশ না কাটতেই আরেক জাহালম-কাণ্ড বেরিয়ে এসেছে অনুসন্ধানে। জানা গেছে, পল্লবীর বেনারসি কারিগর মো. আরমান নির্দোষ হয়েও ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে গত ৩ বছর ধরে কারাভোগ করছেন।

রাজধানীর পল্লবী থানার একটি মাদক মামলায় ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি মাদক কারবারি শাহাবুদ্দিন বিহারি এ মামলার প্রকৃত আসামি। কিন্তু তার পরিচয়ে, তার পরিবর্তে সাজাভোগ করছেন আরমান।

শুধু বাবার নামে মিল থাকায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে শাহাবুদ্দিন নামে আদালতে সোপর্দ করেছে বলে জোর অভিযোগ করেছে তার পরিবার। অন্যদিকে, প্রকৃত আসামি শাহাবুদ্দিন কারাগারের বাইরে দিব্যি মাদক কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন।

পুলিশের ভুলে অথবা গোপন কারসাজিতে মৃত ইয়াছিন ওরফে মহিউদ্দিনের ছেলে শাহাবুদ্দিনের পরিবর্তে দীর্ঘ ৩ বছর ধরে কারাগারে মানবেতর জীবনযাপন করছেন মো. আরমান (৩৬)। শুধু পিতার নামে (মৃত ইয়াছিন) মিল থাকায় শাহাবুদ্দিনের বদলে পল্লবীর সেকশন-১০-এর তেজগাঁও নন লোকাল রিলিফ ক্যাম্পের বাসিন্দা আরমানকে বিনা অপরাধে সাজা ভোগ করতে হচ্ছে।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুর্টি অ্যার্টনি জেনারেল মোতহার হোসেন সাজু ও রিটকারী আইনজীবী হুমায়ুন কবির পল্লব সাংবাদিকদের বলেন, মামলার নথি তলবের পাশাপাশি রুলও জারি করেছেন। রুলে আরমানকে আটক রাখা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তাকে কেন মুক্তি দেয়া হবে না, তাকে হাইকোর্টে হাজির করার কেন নির্দেশ দেয়া হবে না এবং তাকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।

সোনালী ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় ২৬ মামলার ভুল আসামি পাটকল শ্রমিক জাহালম প্রায় ৩ বছর কারাভোগের পর তার বিষয়টি উচ্চ আদালতের নজরে আনার পর মুক্তি পান। একটি জাতীয় দৈনিকে গত ১৮ এপ্রিল এ রকম আরেক জাহালমের ঘটনা প্রকাশিত হয়। মাদক মামলায় ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত শাহাবুদ্দিন বিহারির পরিবর্তে আসামি হিসেবে ৩ বছর ধরে কারাগারে ‘নির্দোষ’ আরমান (৩৬)।

প্রকাশিত এ প্রতিবেদন যুক্ত করে একটি মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষে রোববার হাইকোর্টে রিটটি করে ‘ল’ অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশন।

ওই পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, পল্লবীর বেনারসি কারিগর মো. আরমান নির্দোষ হয়েও ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে গত ৩ বছর ধরে কারাভোগ করছেন। রাজধানীর পল্লবী থানার একটি মাদক মামলায় ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি মাদক কারবারি শাহাবুদ্দিন বিহারি এ মামলার প্রকৃত আসামি। কিন্তু তার পরিচয়ে, তার পরিবর্তে সাজাভোগ করছেন আরমান।

এফএইচ/এনএফ/এমএস/জেআইএম