খেলাধুলা

‘ম্যাচ না খেললেও আইপিএলে অনুশীলনটা কাজে দেবে সাকিবের’

তিনি নিজে বিকেএসপির ছাত্র, বিকেএসপিতে পড়তে পড়তেই জাতীয় পর্যায়ে ক্রিকেটার হিসেবে আত্মপ্রকাশ। পরে খেলা ছেড়ে বিকেএসপির ক্রিকেট প্রশিক্ষক হিসেবে কাজও করেছেন বেশ কয়েকবছর। তার সহধর্মিনীও বিকেএসপিরই সিনিয়র শিক্ষক। সে সুবাদে থাকেন বিকেএসপির টিচার্স কোয়ার্টারেই।

Advertisement

তাই বিকেএসপিতে খেলা হলে নিয়মিতই দেখা মেলে মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের। আর এবার যেহেতু তার দল গাজী গ্রুপ সুপার লিগে নেই। তাই কাল রাতে হায়দরাবাদ থেকে ফিরে ক্লান্তি থাকলেও আজ বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে চলে এলেন ম্যাচের প্রথম ঘণ্টায়। 

সেখানেই জাগোনিউজের সঙ্গে একান্তে কথা বলেন সালাউদ্দিন। কথোপকথনের পুরোটা জুড়েই ছিলো সাকিব আল হাসানের আইপিএল বিষয়ক খুঁটিনাটি এবং তার সঙ্গে হায়দরাবাদে সালাউদ্দিনের ৮-৯ দিনের অনুশীলনের গল্প। এছাড়াও তিনি কথা বলেছেন সাকিব আল হাসানের বর্তমান অবস্থা প্রসঙ্গেও।

প্রশ্ন ছিলো, আপনি আসলে টিম প্র্যাকটিসের বাইরে কী করলেন সেখানে? কতদিন কাজ করলেন সাকিবের সঙ্গে? সালাউদ্দিনে উত্তর, ‘আমি ৯ দিন হায়দরাবাদে ছিলাম। রাজীব গান্ধী ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুশীলনে ছিলাম। আইপিএলের একটা দলের পাশাপাশি ৭টা নেট প্র্যাকটিসের উইকেট। সেখানে যেমন উইকেট, তাতে এক সপ্তাহ অনুশীলন করলেই যেনো একজনের জন্য ঢের বেশি। কারণ আপনি যেমন চান সেখানে সবধরনের উইকেটই রয়েছে।’

Advertisement

তাহলে আপনি মূলত সাকিবের সঙ্গে কী নিয়ে কাজ করেছেন। সালাউদ্দিন নিচু কণ্ঠের জবাব, ‘আমি মূলত ব্যাটিং নিয়ে কাজ করেছি। সাকিবের বোলিং নিয়ে তেমন কাজ করতে হয় না। কারণ বোলিংটা ওর সহজাত। সাকিব এমন মানের বোলার যে এক-দুই বলের পরই ব্যাটসম্যানের মতিগতি দেখে নিজের করণীয়টা বুঝে ফেলে। তার বোলিং ভ্যারাইটি এবং মেধা- দুইটাই অনেক বেশি। প্রয়োজনে বৈচিত্র আনা এবং ব্যাটসম্যানকে আটকে রাখার কাজটা ভালোই পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সাকিব বেশ ছন্দে আছে। শারীরিকভাবেও ৫-৭ ওজন কমিয়ে এনেছে। মানসিক-শারীরিক উভয়দিকেই দুর্দান্ত অবস্থায় রয়েছে ও। তাই আমি ব্যাটিং নিয়েই কাজটা করেছি বেশি। ব্যাটিংয়ের সময় আমি মূলত সাকিবের শটের ভাণ্ডার আরও বাড়ানো যায় কিনা সেটা নিয়ে কাজ করেছি। সবচেয়ে বেশি কাজ করেছি ফাস্ট বোলিংয়ের বিপক্ষে ইয়র্কার লেন্থ এবং ব্লক হোলে আসা বলগুলোর বিপক্ষে ওর ব্যাটিং পারদর্শিতা বাড়ানোর কাজ করেছি।’

আইপিএলে ম্যাচ না খেললেও অনুশীলন করার সুযোগটাও কম কিছু নয় হিসেবেই মনে করছেন সালাউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘যে যাই ভাবুন আর বলুন না কেন, আমার কাছে মনে হয় সাকিব আইপিএলে ম্যাচ না খেললেও, আমি যাওয়ার আগেই যে প্র্যাকটিসে ছিলো সেটাও কম নয়, অনেক। সেখানে অনুশীলনের যেসব সুবিধার কথা বললাম, সেটা আমাদের দেশে কল্পনাও করা যায় না। পরে আমি যে ৮-৯ দিন কাজ করলাম সেটাও ভালো গেছে। সবমিলিয়ে মনে হয় সাকিব দারুণ ছন্দে আছে। আমার বিশ্বাস সে আইপিএলে কোনো ম্যাচ না খেললেও বিশ্বকাপের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুতই রয়েছে।’

Advertisement

বিশ্বমানের পারফর্মার বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন ভিভিএস লক্ষণ

হায়দরাবাদের হেড কোচ টম মুডি এবং ব্যাটিং কনসালটেন্ট ভিভিএস লক্ষণের সঙ্গে কথা বলেছেন সালাউদ্দিন। ভাবা হচ্ছিলো এমন দুইজন বিশ্বমানের প্রশিক্ষক ও বড় ব্যাটসম্যানের মতো ব্যাটিং কোচ থাকার পরে সালাউদ্দিনের উপস্থিতি কীভাবে নেবে হায়দরাবাদের কোচিং স্টাফ বা টিম ম্যানেজম্যান্টরা।

এ বিষয়ে সালাউদ্দিনের হাসিমুখে জবাব, ‘আমাকে ওরা অত্যন্ত ভালোভাবে বরণ করে নিয়েছে। টম মুডির কথা হলো সাকিব যেভাবে তোমার সঙ্গে থাকতে, কথা বলতে এবং ক্রিকেটীয় কর্মকাণ্ড শেয়ার করতে স্বচ্ছন্দ বোধ করে, তাই তোমার উপস্থিতিটা মনে হয় সে মন থেকেই উপভোগ করবে। তাকে উদ্বুদ্ধ করা এবং মানসিকভাবে চাঙা রাখাটাই তোমার কাজ।’

তিনি আরও বলেন, ‘লক্ষণের মূল্যায়ন হলো সাকিব আসলে বিশ্বমানের পার্ফরমার এবং সন্দেহাতীতভাবেই বাংলাদেশের একমাত্র ক্রিকেটার যে সারাবিশ্বে নিজের মেধা-প্রজ্ঞার প্রমাণ দিয়ে থাকে। তার মতো খেলোয়াড়কে এখন মানসিকভাবে ঠিক রাখাটাই মূলত প্রধান কাজ। এর বাইরে তেমন কাজ করার প্রয়োজন নেই। এছাড়াও বাংলাদেশ ক্রিকেটের ব্যাপারে লক্ষণের অনুধাবন হলো বিশ্বমানের পারফর্মার কম আমাদের। এদিকে আমাদের আরও উন্নতি করা প্রয়োজন বলে মনে করেন লক্ষণ।’

উল্লেখ্য, সাকিব আল হাসানের অনুরোধে তার সঙ্গে একান্ত অনুশীলনের জন্য গত ১৩ এপ্রিল হায়দরাবাদ গিয়েছিলেন মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। সেখানে সাকিবের খরচেই ১০ দিন থেকে গতকাল রাত সোয়া ৮টায় দেশে ফিরে এসেছেন সালাউদ্দিন। প্রাথমিকভাবে পরিকল্পনা ছিলো সাকিবকে সঙ্গে নিয়েই ফিরবেন সালাউদ্দিন। তবে হায়দরাবাদ কর্তৃপক্ষের চাওয়া মোতাবেক ২৮ এপ্রিল দেশে ফিরবেন সাকিব।

এআরবি/এসএএস/পিআর