আন্তর্জাতিক

শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থা

গির্জা এবং হোটেলে প্রাণঘাতী বোমা হামলায় ২৯০ জনের প্রাণহানির পর শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থা জারির পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে দেশটির ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল। শর্তযুক্ত জরুরি অবস্থা সোমবার মধ্যরাত থেকে কার্যকর হবে।

Advertisement

দেশটির প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় জনগণের সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এসব পদক্ষেপ নেয়ার লক্ষ্য হলো সন্ত্রাসবাদ, মত প্রকাশের অধিকার খর্ব করা নয়। নতুন করে জরুরি অবস্থা জারির পাশাপাশি রাজধানী কলম্বোতে কারফিউ অব্যাহত রেখেছে দেশটির সরকার।

শ্রীলঙ্কা সরকারের মুখপাত্র রাজিথা সেনারত্নে বলেছেন, বিলাসবহুল হোটেল এবং গির্জায় হামলায় ২৯০ জনের প্রাণহানির পর জরুরি অবস্থা জারির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে জরুরি অবস্থা জারির ফলে নাগরিকদের কোনো ধরনের অধিকার খর্ব হবে না।

তিনি বলেন, হামলায় অংশ নেয় সাত আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী। এ হামলাকারীদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক একটি গোষ্ঠী জড়িত। হামলাকারীরা একটি আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কের সহায়তায় হামলা চালিয়েছে। দেশের ভেতরে থাকা একদল ব্যক্তি এসব হামলা করেছে; এটা আমরা বিশ্বাস করি না।

Advertisement

আরও পড়ুন : শ্রীলঙ্কায় ফের নতুন করে বিস্ফোরণ

তিনি বলেন, এখানে একটি আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক আছে; যাদের ছাড়া এ হামলা সফল হতো না।’ শ্রীলঙ্কার ফরেনসিক বিভাগের জেষ্ঠ কর্মকর্তা আরিয়ানন্দা ভেলিয়াঙ্গা বলেন, হামলাকারীদের মধ্যে দু’জন কলম্বোর সাগর তীরে হোটেল শাংরি লাতে গিয়ে নিজেদের উড়িয়ে দেয়। বাকি হামলাকারীরা আরো দুটি হোটেল ও তিনটি গির্জায় হামলা চালায়।

প্রাণঘাতী এই হামলার সঙ্গে স্থানীয় ইসলামি চরমপন্থী গোষ্ঠী ন্যাশনাল তাওহীদ জামায়াত (এনটিজে) জড়িত বলে সন্দেহ করছে সরকার। সেনারত্নে বলেন, প্রাণঘাতী এই হামলার পেছনে স্থানীয় এই চরমপন্থী গোষ্ঠী জড়িত। রোববার দেশটির তিনটি বিলাসবহুল হোটেল ও তিনটি গীর্জা-সহ আরো দুটি স্থাপনায় সিরিজ বোমা হামলায় অন্তত ২৯০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এছাড়া আহত হয়েছে আরো অন্তত ৪৫০ জন।

আরও পড়ুন : আন্তর্জাতিক সহায়তা ছাড়া হামলা চালানো সম্ভব নয় : শ্রীলঙ্কা

Advertisement

দেশটির মন্ত্রিসভার এই সদস্য বলেন, ওই গোষ্ঠীটিকে আন্তর্জাতিক কোনো সমর্থন পেয়ে হামলা চালিয়েছে কি-না সে ব্যাপারে জানতে তদন্ত চলছে। তিনি বলেন, সোমবার সকালের দিকে পেত্তাহ শহরের একটি বাস স্টেশন থেকে কলম্বো পুলিশ ৮৭টি বিস্ফোরক উদ্ধার করেছে।

এখন পর্যন্ত কোনো গোষ্ঠী এই হামলার দায় স্বীকার না করলেও অনলাইনে জঙ্গি কার্যক্রম পর্যবেক্ষণকারী মার্কিন সাইট ইনটেলিজেন্স গ্রুপ বলছে, ক্রাইস্টচার্চ মসজিদে গোলাগুলির প্রতিশোধে শ্রীলঙ্কায় সন্ত্রাসী হামলার প্রশংসা করেছে আইএসের সমর্থকরা। শ্রীলঙ্কার পুলিশ বলছে, অজ্ঞাত একটি চরমপন্থী মুসলিম গোষ্ঠী হামলা চালাতে পারে; এমন আশঙ্কার তথ্য দেশটির গোয়েন্দারা ১০দিন আগেই পেয়েছিল।

অন্যদিকে, সাইট ইনটেলিজেন্স গ্রুপের পরিচালক রিটা কাটজ বলেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আইএসের সমর্থকরা শ্রীলঙ্কায় হামলার প্রশংসা করে হতাহতের ঘটনায় উল্লাস প্রকাশ করেছে। আইএস পরিচালিত চ্যানেলে শ্রীলঙ্কায় বিস্ফোরণের বুনো উল্লাস করা হয়েছে। এতে আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীদের যেন আল্লাহ কবুল করে নেন সেই প্রার্থনাও করা হয়েছে।

আরও পড়ুন : হামলায় ইসলামি চরমপন্থী এনটিজেকে দায়ী করছে শ্রীলঙ্কা

তার দাবি, অনলাইনে এই প্রশংসার দ্বারা বোঝা যাচ্ছে সম্ভবত জঙ্গিগোষ্ঠীটি হামলার দায় নেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ ধরনের দাবি নিউজিল্যান্ডে হামলার প্রতিশোধ হিসেবেও করা হতে পারে। আর এটা অনেক পরিকল্পিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

গত ১৫ মার্চ নিউজিল্যান্ডের দুটি মসজিদে নারকীয় তাণ্ডব চালিয়ে ৫০ জন মুসল্লিকে হত্যা করে। হামলাকারী অস্ট্রেলীয় বংশোদ্ভূত শেতাঙ্গ সন্ত্রাসী ব্রেন্টন ট্যারেন্ট। তার বিরুদ্ধে নিউজিল্যান্ডের আদালতে হত্যা মামলা বিচারাধীন রয়েছে।

রিটা কাটজ বলেছেন, আইএসের বিভিন্ন পদে শ্রীলঙ্কার যোদ্ধাদের নাম উল্লেখ রয়েছে। যে কারণে দেশটিতে আইএসের সমর্থকরা অবাধ প্রবেশ করতে পারে। বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলছে, শ্রীলঙ্কার উচ্চশিক্ষিত এবং এলিট মুসলিম পরিবারের বেশ কিছু সদস্য সিরিয়ায় জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসে যোগ দিয়েছে।

এসআইএস/এমএস