অর্থনীতি

‘তারা অন্যায় করেছে’

শেয়ারবাজারে আস্থার সংকট থাকা উচিত না এমন মন্তব্য করে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেন বলেছেন, ‘কেউ যদি ট্রেড করে থাকে বাজারের স্টেকহোল্ডার হইয়া, পার্টিসিপেট হইয়া, বিনিয়োগকারী হইয়া, এটা তারা অন্যায় করছে। কারণ নিজের পারসেপশন দিয়ে পুরো মার্কেটকে প্রভাবিত করা ঠিক না।’

Advertisement

সোমবার বিকেলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কার্যলয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসার কারণ হিসেবে বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, বাজেটে পুঁজিবাজারের কিছু ইস্যু আছে। বাজাটে পুঁজিবাজারকে ভালো অ্যাড্রেস করা হবে। স্যার’র (অর্থমন্ত্রী) সময় তো লিমিটেড। ওনার কোনো শুক্রবার নাই, বন্ধের দিন নাই। প্রতিদিনই কাজ আছে।

এ সময় শেয়ারবাজারের সকল বিনিয়োগকারীর জন্য টিআইএন বাধ্যতামূলক হচ্ছে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়া এবং গ্রামীণফোনের কাছে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা দাবি করার কারণে শেয়ারবাজারে বর্তমানে মন্দাভাব দেখা দিয়েছে এমন ইঙ্গিত করেন বিএসইসির চেয়ারম্যান।

Advertisement

তিনি বলেন, ‘আট বছর ধরে আমরা যেটা করে আসছি, এমন কিছু ঘটে নাই। তিনটা কাজ একসঙ্গে ঘটছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) টিআইএন, গ্রামীণফোনের কোথায় কি লাগবে, আরও দুই একটা ইস্যু মিলে...।’

বিটিআরসি গত ২ এপ্রিল একটি দাবিনামার মাধ্যমে গ্রামীণফোনের কাছে বিটিআরসিকে ৮ হাজার ৪৯৪ কোটি ১ লাখ টাকা এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে ৪ হাজার ৮৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা পরবর্তী ১০ কর্মদিবসের মধ্যে পরিশোধ করার নির্দেশ দেয়।

বিটিআরসির নিয়োগ করা জেভিসিএ অব তোহা খান জামান অ্যান্ড কোম্পানি নামের একটি অডিট ফার্ম গ্রামীণফোনের যাত্রার সময় ১৯৯৭ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সময়ে ইনফরমেশন অ্যান্ড সিস্টেম অডিট পরিচালনা করে এই টাকা (৮ হাজার ৪৯৪ কোটি ১ লাখ) দাবি করে।

তবে এরপর গ্রামীণফোনের পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়, এই অডিটে বিটিআরসির দাবি করা ৮ হাজার ৪৯৪ কোটি ১ লাখ টাকার মধ্যে প্রায় ৭৩ শতাংশ বা ৬ হাজার ১৯৪ কোটি ৩ লাখ টাকাই হলো সুদ যা ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ধরা হয়েছে।

Advertisement

এর আগে ২০১৮ সালের আগস্টে বিটিআরসি গ্রামীণফোনকে অডিটের প্রতিবেদনের ওপর আনুষ্ঠানিক জবাব দিতে বলে। গ্রামীণফোন নির্ধারিত সময়ে সেপ্টেম্বর ২০১৮ সালে বিস্তারিত ব্যাখ্যা ও যুক্তি উপস্থাপন করে। কিন্তু বিটিআরসি তাদের দাবিনামায় শুধুমাত্র ২০১৮ সালে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেয়া গ্রামীণফোনের ব্যাখ্যা আমলে নিয়েছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়েছে।

এদিকে ২ এপ্রিল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে প্রাকবাজেট আলোচনা করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এরপর গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের জন্য টিআইএন বাধ্যতামূলক হচ্ছ। তবে ১৬ এপ্রিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে এ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলা হয়, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের বেনিফিসিয়ারি ওনার্স (ডিও) একাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে টিআইএন নম্বর বাধ্যতামূলক নয়।

প্রায় তিন মাস ধরে শেয়ারবাজারে চলা মন্দাভাবের মধ্যে এই দু’টি ঘটনা শেয়ারবাজারে বড় ধরণের নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ফলে মূল্য সূচকের বড় পতনের পাশাপাশি দেখা দেয়া চরম লেনদেন খরা। বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকটের কারণে শেয়ারবাজারের এই মন্দা দেখা দেয় বলে বাজার সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়।

এ বিষয়ে বিএসইসির চেয়ারম্যানকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, 'শেয়ারবাজারে আস্থার সংকট থাকা উচিত না। কেউ যদি ট্রেড করে থাকে বাজারের স্টেকহোল্ডার হইয়া, পার্টিসিপেট হইয়া, বিনিয়োগকারী হইয়া, এটা তারা অন্যায় করছে। কারণ নিজের পারসেপশন দিয়ে পুরো মার্কেটকে প্রভাবিত করা ঠিক না।'

‘মার্কেটে কথা বলার বিষয়ে একটা রেস্ট্রিকশন আছে। কথা যদি বাস্তব ও জ্ঞান নির্ভর হয় তাহলে সমস্যা নেই। কিন্তু যা তা তো বলা যাবে না’ বলেন খায়রুল হোসেন।

এদিকে শেয়ারবাজারের টানা দরপতন ও লেনদেন খরা দেখা দেয়ায় দুই সপ্তাহ ধরে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সামনে বিক্ষোভ করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। বিক্ষোভ থেকে বিএসইসির চেয়ারম্যান পদ থেকে খায়রুল হোসেনের পদত্যাগসহ আরও কয়েকটি দাবি জানান তারা।

বিনিয়োগকারীদের এই বিক্ষোভের সমালোচনা করে বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘ভারতের শেয়ারবাজারের সূচক এখন ৩৯ হাজার। এই সূচক ২১ হাজার থেকে ৭ হাজারে নেমেছিল। ভারতের লোকজন কিন্তু বিক্ষোভে নামেনি। আমেরিকায় বিক্ষোভ করেনি। জাপানে বিক্ষোভ করেনি। আমাদর বিনিয়োগকারীদের শিক্ষিত করতে হবে।’

এমএএস/এসএইচএস/পিআর