জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেছেন, মানবপাচারের ঘটনায় মামলার সংখ্যা বাড়ছেই। মানবপাচার রোধে ২০১২ সালে আইন হয়েছে, আজ ২০১৯ সাল। দেশে অনেক প্রতিষ্ঠান হয়েছে, আদালতও গঠন করা হয়েছে। কিন্তু মানবপাচারের মামলা নিষ্পত্তিতে আলাদা ট্রাইব্যুনাল গঠন করা যায়নি।
Advertisement
শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর প্যান প্যাসেফিক সোনারগাঁ হোটেলের বলরুমে আয়োজিত মানবপাচার প্রতিরোধবিষয়ক ‘রিজিওনাল কনফারেন্সে’ এ কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
অনুষ্ঠানে মানবপাচারের বিষয়ে প্রারম্ভিক বক্তব্যে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, ২০১২ সালে মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন তৈরি হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, আলাদা একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা। যেখানে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের মামলার বিচারকার্য চলবে। কিন্তু নানা কারণেই সেটা সম্ভব হয়নি। আজকের অনুষ্ঠানে মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রয়েছেন। মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন তৈরির কাজটি ছিল তার মন্ত্রণালয়ের। এই আইনের করা মামলার নিষ্পত্তির জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠনের উদ্যোগও উচিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে গ্রহণ করা। সময় এসেছে মানবপাচারের মামলা নিষ্পত্তিতে আলাদা ট্রাইব্যুনাল গঠনের।
তিনি বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে, হিউম্যান ট্রাফিকিংয়ের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয় উঠে এসেছে। ওই সব মামলার তদন্ত ও বিচারকার্যের জন্য মানবপাচার রোধের ট্রাইব্যুনাল হলে বেশি কার্যকরী হবে।
Advertisement
মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান বলেন, মানবপাচার রোধে পুলিশ, বিজিবি, কোস্টগার্ড নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে। পুলিশ সদর দফতর হিউম্যান ট্রাফিকিংয়ের ক্ষেত্রে যে পরিমাণ অপরাধী ধরার কথা বলছে তাদের অধিকাংশই ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে।
তিনি পুলিশ সদর দফতরের দেয়া এক প্রতিবেদন তুলে ধরে বলেন, মানবপাচারের ক্ষেত্রে ছয় হাজারের অধিক লোককে আটক করা হয়েছে। কিন্তু বিচার ও তদন্তে মাত্র ২৫ জনকে অপরাধী শনাক্ত করা গেছে। এসব মামলা ও ঘটনায় অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন আইনজীবীর প্রয়োজন।
তিনি বলেন, পাকিস্তান, ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে আমাদের অনেক বাংলাদেশি আটকে আছেন। নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও আমরা তাদের আনতে পারছি না। আমরা কতজনকে মুক্ত করে দেশে ফিরিয়ে আনতে পারছি? গত দুই বছরে মানবপাচারের সিনারিও খুবই খারাপ। বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রে বিশ্বে সুনাম কুড়াচ্ছে। অগ্রগতি এনেছে। কিন্তু মানবপাচারের মতো গুরুতর মানবাধিকারের লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে বিশেষ অগ্রগতি আনা সম্ভব হচ্ছে না।
বিনা দোষে হত্যা মামলায় আসামি হয়ে ভারতের দিল্লির তিহার জেলে প্রায় ১০ বছর ধরে বন্দি থাকার পর বাংলাদেশে আনা হয়েছে বাদল ফরাজিকে। তবে তিনি বন্দিবিনিময় চুক্তির আওতায় বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রয়েছেন।
Advertisement
বাদল ফরাজির উদাহরণ টেনে কাজী রিয়াজুল হক বলেন, ২০০৮ সালে টুরিস্ট ভিসায় বেনাপোল বর্ডার পার হওয়ার পরপরই দিল্লির অমর কলোনির এক বৃদ্ধা হত্যা মামলায় বাদল ফরাজিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ২০০৮ সালের ৬ মে সেই বৃদ্ধাকে হত্যার ঘটনায় দিল্লির পুলিশ বাদল সিং নামে এক ব্যক্তিকে খুঁজছিল। ওই বছরের ১৩ জুলাই বেনাপোল বর্ডার দিয়ে বাদল ফরাজি ভারতে প্রবেশ করলে বাদল সিং মনে করে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ইংরেজি এবং হিন্দি ভাষা না জানার কারণে দীর্ঘদিন ধরে তাকে কারাবন্দি হয়ে থাকতে হয়। তিনি যে নিরাপরাধী তাও তিনি বলতে পারেননি। বাদল ফরাজির মতো ইনোসেন্ট বাংলাদেশির ভারতে আটকা থাকার বিষয়টি আলোচনায় আসার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বন্দিবিনিময় চুক্তির আওতায় দেশের কারাগারে স্থানান্তর করে।
তিনি বলেন, বাদল ফরাজির তো জেলে থাকার কথা না! তাকে মুক্ত করতে আমরা ব্যারিস্টার নিয়োগ করতে চাই। মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে আমরা ভারত সফর করেছি। ভারতীয় হাইকমিশনের সাথে কথা বলেছি। আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ করবো ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলে বাদল ফরাজিকে মুক্তির বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে উচিত বিশ্লেষণ করা, বাদল ফরাজিকে আমরা কোন কোন ধরনের আইনি ও কূটনৈতিক সাপোর্ট দিতে পারি। কারণ ভারতের যাবজ্জীবন মানে আমৃত্যু কারাভোগ। ভারতীয় সর্বোচ্চ আদালতও নিম্ন আদালতের রায় বহাল রেখেছে। তবে বাংলাদেশ স্বরাষ্ট্র কিংবা পরাষ্ট মন্ত্রণালয় যদি আবেদন করে তবে ভারতীয় সরকার বাদল ফরাজিকে ক্ষমার ব্যবস্থা করতে পারেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক, জাতিসংঘের অভিবাস সংস্থা আইওএমর বাংলাদেশ প্রধান গিওরগি গিগাউরি, ইন্ডিয়ান অ্যাটসেকের ন্যাশনাল কোঅর্ডিনেটর মানবেন্দ্র নাথ মন্ডল প্রমুখ।
জেইউ/বিএ/আরআইপি