সাহিত্য

নাজনীন তৌহিদ- এর চারটি কবিতা

নাজনীন তৌহিদ- এর চারটি কবিতাঅনেক কবিতার ভিড়ে যিনি কিছু ভিন্ন স্বাদের কবিতার বীজ বুনে যাচ্ছেন কবিতার মাঠে, তিনি কবি নাজনীন তৌহিদ। তাই প্রেম এবং প্রকৃতির ছোঁয়ায় তাঁর কবিতারা ঊর্বর হয়ে উঠছে নিত্যদিন।নাজনীন তৌহিদ একজন কবি হলেও  সাহিত্যের সব অঙ্গনেই সমান ভাবে পদচারণা তার। জম্ম ১৯৭২ এর ৬ জুলাই বাগেরহাট জেলায়। মো. সামছুল আলম এবং মনোয়ারা আলমের পাঁচ সন্তানের মধ্যে প্রথম সন্তান তিনি। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিতা এবং দু’সন্তানের জননী। স্বামী মো. তৌহিদুল আকবর একজন অবসর প্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা।জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ সম্মানসহ এমএ করেছেন। কৈশোর থেকে তার লেখার জীবন শুরু। এ পর্যন্ত তিনি অসংখ্য কবিতা, ছোটগল্প, স্মৃতিকথা, ভ্রমণ গল্প, উপন্যাস, নাটক, রম্য রচনা, ফিচার ও কলাম লিখেছেন। তার লেখা বিভিন্ন দৈনিক, মাসিক, ত্রৈমাসিক পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত ছাপা হচ্ছে। লেখালেখি ছাড়াও তিনি একজন আবৃত্তি শিল্পী, চিত্রশিল্পী এবং রন্ধন শিল্পী। অনেক বছর  ধরে বাংলাদেশ বেতারে উপস্থাপনা, আবৃত্তি, আলোচনা, ভ্রমণসহ বহু বিষয়ে অংশগ্রহণ করে আসছেন। জাগো নিউজের পাঠকের জন্য তার ৪টি কবিতা উপস্থাপন করা হল- অন্য রকম প্রেম একদিন শতাব্দী পৃথিবীকে বলল,ধ্যাত! কি যে সব গপ্প ফাঁদও না !দিবা আর রাত্রি ?এদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক !পৃথিবী বলল, কেন নয়?সমস্ত খাটাখাটুনির পর দিবা যখন তার ঝলমলে বসন খুলে দিয়েকেবল দুচোখ মুদে আনল ওমনি রাত্রি এসে চুম্বনে চুম্বনে ...।ঘুমের আবেশে কি হতে কি হল বুঝে উঠতেইজন্ম হল ফুটফুটে সকালের ।সকালটা ভারি চঞ্চল!রোদ্দুর নিয়ে খেলতে খেলতে,যৌবনে পা দিতেই হয়ে উঠল দুষ্টু দুপুর !এলো চুল দুলিয়ে নাচছিল দুরন্ত বৈকালিক্ষণজন্মা গোধূলি এসে বললে, দোহাই তোর !যাসনে ওখানে,পুড়ে ভস্ম হবি ।ওমনি মায়াবতি সন্ধ্যা এসেওকে আঁচল তলে লুকিয়ে নিল ।ধীরে ধীরে ওদের তিন সত্তায় বড় হতে লাগলো রাত্রি।চাঁদের অমন গলে গলে পরা রূপ দেখেরাত্রির বুঝি ভালবাসতে ইচ্ছে হয় না ! তাই বুঝি দিবার সাথে আলিঙ্গন ?ঠিক তাই ।আর এ ভাবেই পুরো একটি দিনেরপ্রেমের কাব্যগাথা ।তোমার জন্য ধর এটি একটি কবিতাতোমার জন্য, শুধু তোমার জন্যে ।কিন্তু কবিতা কাকে বলেআজও আমি তা জানিনে ।কখনো মনে হয়, কবিতা কেবলই কোন দুঃখকখনো আনন্দ, কখনো প্রেম, কখনো আবার বিরহ ।কখনো মনে হয় কবিতা মানেমরুভূমির উত্তপ্ত বালুকণায় সুশোভিত কোন বাগান।যেখানে মালি মাটি খুঁড়ে খুঁড়েপানি সেচে সেচেবীজ বুনে বুনেফোঁটা ফোঁটা ঘামে ভিজে ভিজে...অতঃপর ফুটে থাকেলাল, নীল, সাদা, গোলাপিএকেকটা একেক রং এর ফুল । এ বাগান টি সাজানো কেবলই তোমার জন্য। যদি চাও, তোমার জন্য গোটা হৃৎপিণ্ডটাই রাখা । আর আমার জন্য কিছু কষ্ট জমাথাক।সমস্ত নীল রঙ যে আকাশেরএ কথা কে - না জানে !অরুণিমা এবং আমি অরুণিমার সাথে আমার প্রেম হয়েছিলো কিনা জানিনাঅথবা অরুণিমা এবং আমার প্রেম বিচ্ছিন্ন কোন এক ঘটনা ।কিংবা বালক বেলায় ধু -ধু প্রান্তরে চষে বেড়ানোকোন মধ্য দুপুরের মুদে আসা চোখেরমাদকতা জড়ানো কোন খেয়ালি স্বপন ।যেমন অপ্রাপ্ত বালক বালিকাপুতুল খেলার মত, জড়িয়ে পরে প্রেমের খেলায়,যে খেলার অর্থ তারা তখনও বোঝেনা বোঝেনা বলেই তা জমা থাকেবড়দের শাসনের পাতায় ।তারপর যৌবনের কোন এক ক্ষণেতা সযতনে তুলে রাখে হৃদয়ের খাতায় ।অরুণিমা আর আমিকিংবা অরুণিমা আর আমার ছেলেখেলাঅথবা আমাদের প্রেমদুনিয়ার এমন কোন জরুরি খবর নয় যে,বিবিসি, রয়টার্স, কিংবা বাসসে রটেইথারে পাথারে ভেসে ভেসেপৌঁছে যাবে সবার দুয়ারে ।যখন প্রেম বুঝিনি তখন অরুণিমা ছিল পাশে,যখন প্রেম বুঝি,অরুণিমাকে খুঁজে বেড়াই কেবলই অরুণোদয়ের মাঝে ।ক্ষণিকের দীপ্তি ছড়িয়ে সে হারিয়ে যায়দৃষ্টির অদূরে ।তাকে ছুঁতে পারিনা ভস্ম হবার ভয়ে ।তবে অরুণিমার সাথে আমারপ্রেম-ই হয়েছিল !সেই অবুঝ বয়সের নিগূঢ় রহস্যখুঁজে বেড়াই আজ অবেলায় ।অরুণিমা আর আমার প্রেম হয়ত নিছক ছেলেবেলার ছেলেমি ।অথচ পরিণত বয়সে এসে স্মৃতি হাতরে চলা ।অরুণিমাকে বলা হয়নি কখনোকিংবা বলার বয়স হয়নি এখনো ।হবেনা বলা কোনদিনও হয়ত !আমারা ছেলেবেলা হারিয়েছি,যৌবন হারিয়েছি , প্রৌঢ়ে এসেছি কবেই !বুড়ো অশ্বত্থের ডালপালার নিচে এখনবহু পথিকের বসবাস ।আলাপনআজকাল নাকি কবিতা লিখছ বেশ?কে বলল, শুনি?হাওয়ারও যে কান আছে!তাই বুঝি, তা আর কি আছে?তার হাত নেই?বলবো কেন!পৌঁছে দিত তবে দু`চারখানা ।বললে উড়িয়ে আনতে পারত শ`খানা।তোমার হাওয়া আর কী পারে?মানুষ শুদ্ধ সব উড়িয়ে নিতে পারে।তবে কবিতা কেন, কবিকেও চাইতে।চাইলে পারত তাও।সত্যি তাই!তোমার হাওয়া যা পারে আমি তা পারি না!মানেটা কী?এই ধর, হাওয়া চাইলেই তোমার চুল ওড়াতে পারেতোমার শাড়ির আঁচল নিয়ে খেলতে খেলতে...থাক! থাক! আর বলতে হবে না সবসময় হেয়ালি ভাল্লাগে না!তুলে রেখ কবিতার খাতা, দেখব একদিন।কবিতা চাও, কবিকে দেখতে চাওনা?চাইলেই কবি কে পাওয়া যায় নাকি? কবিদের ভালবাসা কেবল কবিতার সাথে।এইচআর/পিআর

Advertisement