দেশজুড়ে

রাজশাহীর মিঠা পান থেকে আয় শত কোটি টাকা

রাজশাহীর মিঠা পান যাচ্ছে সৌদি আরব, বাহরাইন, লিবিয়া, ফ্রান্সসহ মধ্যপাচ্যের বিভিন্ন দেশে। পান থেকে দেশে আসছে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা। রাজশাহী জেলার ৬টি উপজেলায় পান চাষ করে এ বছর ২৮০ কোটি ৪৫ লাখ ৬৯ হাজার ৪০ টাকা লাভ করেছেন পান চাষিরা। আধুনিক পদ্ধতিতে পান চাষ করে জেলার মোট ছয়টি উপজেলায় ১ হাজার ৮২১ হেক্টর জমিতে এ বছর মোট উৎপাদন হয়েছে ২৭ হাজার ৬১৭ মেট্রিক টন পান। চাহিদার পাশাপাশি দাম বেশি থাকায় পান চাষিরা তা বিক্রি করে পেয়েছেন মোটা অঙ্কের টাকা। পান চাষ করে ফিরে আসছে তাদের আর্থিক স্বচ্ছলতা। রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, রাজশাহী জেলার পবা, মোহনপুর, বাগমারা, দুর্গাপুর, পুঠিয়া এবং চারঘাট এই ৬টি উপজেলায় মোট ১ হাজার ৮২১ হেক্টর জমিতে পান চাষ করা হয়। হেক্টর প্রতি এবার পানের গড় উৎপাদন হয়েছে ১৫.১৭ মেট্রিক টন। এ হিসেবে ৬টি উপজেলার পানের আবাদকৃত মোট ১ হাজার ৮২১ হেক্টর জমিতে এবার মোট উৎপাদন হয়েছে ২৭ হাজার ৬১৭ মেট্রিক টন পান। প্রতি হেক্টর জমিতে পান সংগ্রহে খরচ হয় ১৫ লাখ ৬৬ হাজার ৫৪৮ টাকা। আর হেক্টর প্রতি পান থেকে আয় হয় ৩১ লাখ ৭ হাজার ৫২০ টাকা। ওই ছয় উপজেলায় ২৬ হাজার ৯৫৬ জন কৃষক মোট ৩০ হাজার ৮৬৮টি পান বরজ থেকে ২৮৫ কোটি ১৯ লাখ ১৭ হাজার টাকা খরচ করে আয় করেছেন ৫৬৫ কোটি ৫৬ লাখ ৮৬ হাজার ৪০০ টাকা। এক বছরে পান চাষ করে কৃষকরা লাভ করেছেন ২৮০ কোটি ৪৫ লাখ ৬৯ হাজার ৪০ টাকা। মোহনপুর উপজেলার বিষহারা গ্রামের পানচাষি সোহরাব হোসেন জাগো নিউজকে জানান, প্রতি বিঘা জমিতে পান চাষ করে বছরে ২ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। অন্য ফসল উৎপাদন করে পানের মতো আয় করা সম্ভব নয়। বাগমারার পানচাষি আমিনুল ইসলাম  জাগো নিউজকে জানান, প্রতি বছর পান বিক্রি করে তার দুই সন্তানের লেখাপড়ার খরচসহ সংসার চালানো ছাড়াও প্রতি বছরই তিনি কিছু জমি কেনেন।দুর্গাপুরের কাঁচুপাড়া গ্রামের পানচাষি জামাল উদ্দিন জাগো নিউজকে জানান, এক বিঘা জমি থেকে ঠিকমতো পান পাওয়া গেলে বছরে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকার পান বিক্রি করা যায়। এখন পান বিক্রি করতে হাটেও যাওয়া লাগে না। কৃষকরা ইচ্ছে করলে বাড়ির আশপাশের মোড়েই পান বিক্রি করতে পারেন। ব্যবসায়ীরা দুর্গাপুর, মোহনপুর, বাগমারা এবং পবা এলাকার বিভিন্ন হাটে অথবা মোড়ে মোড়ে গিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে পান কিনে নিয়ে যায়। এরপর এই পান তাদের কাছ থেকে অন্য ব্যসায়ীরা কিনে নিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা ছাড়াও বিদেশে নিয়ে যায়। এই এলাকার পান ভালো এবং মিষ্টি হওয়ার কারণে সব জায়গায় এর চাহিদা রয়েছে। চারঘাট উপজেলার পানচাষি রহিম শওকত  জাগো নিউজকে জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার পানের দাম অনেক ভালো ছিল। স্থানীয়ভাবে যদি পান সংরক্ষণ করা যায় এবং সরকারি উদ্যোগে পানগুলো অন্যান্য দেশে রফতানি করা যায় তাহলে পানচাষিরা আরো লাভবান হবে।এদিকে, রাজশাহীর দুর্গাপুর, মোহনপুর, বাগমারা এলাকার শত শত পানচাষি অভিযোগ করে বলেন, পানের মড়ক যখন মহামারি আকার ধারণ করে তখনও সরকারিভাবে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় না। মড়কের কারণে কৃষকরা নিজেদের মতো ব্যবহার করে মিলি সালফার, রিডোমিল, ডায়াথেন এম, রোভরাল, টিল্টসহ বিভিন্ন ছত্রাকনাশক ওষুধ। তাছাড়া পানচাষিদের পুনর্বাসনের জন্য কোনো ঋণদান কর্মসূচি গ্রহণ অথবা কোনো প্রকার অনুদানও দেয়া হয় না। কৃষি ফসল চাষের জন্য যে ঋণ দেয়া হয় তাও অনেকে পায় না। আবার দেয়া হলেও নানা ঝামেলা এবং অতিরিক্ত সুদের কারণে পানচাষিরা ওই পথ মাড়ায় না। তাদের দাবি, কৃষি বিভাগের সময় মতো সহায়তা এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এলাকার চাষিদের ভাগ্যের আরো উন্নয়ন ঘটবে। এ ব্যাপারে রাজশাহী জেলা কৃষি অফিসের উপ-পরিচালক হযরত আলী জাগো নিউজকে জানান, এ অঞ্চলের পানের সুনাম আরো সুদূরপ্রসারী করতে বর্তমানে তারা জোরালো প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আগামী বছর পানের চাষ করে এ অঞ্চলের কৃষকেরা আরো লাভবান হবেন বলে তিনি আশ্বাস প্রদান করেন।  শাহরিয়ার অনতু/এসএস/এমএস 

Advertisement