বিনোদন

হানিফ সংকেতকে নিয়ে যা বললেন মুস্তাফা জামান আব্বাসী

লোকসঙ্গীতের জীবন্ত কিংবদন্তি মুস্তাফা জামান আব্বাসী। জীবনমুখী গানের সুরস্রষ্টা প্রয়াত আব্বাস উদ্দিনের যোগ্য উত্তরসূরি তিনি। শুধু গায়কই নন, তিনি একজন লেখক ও খ্যাতিমান সাংস্কৃতিক গবেষক। বৃহস্পতিবার সকালে দেশের আরেক জনপ্রিয় মুখ হানিফ সংকেতের নানা দিক তুলে ধরেছেন তিনি।

Advertisement

নিজের ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে মুস্তাফা জামান আব্বাসী লিখেছেন, ‘যতই লোকটার কথা ভাবি, অবাক হই। বাংলাদেশে এমন আরেকটি লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। যেমন স্মার্ট, তেমনি চটপটে, তেমনি আমুদে, তেমনি অপূর্ব মনের। আমি তাকে বহুদিন থেকে চিনি। একদিন বললেন টেলিফোন করে, আপনি বেঁচে আছেন? বললাম, গলাটা যখন আমারই তখন বেঁচে না থেকে উপায় কি? আমার ভুল যদি না হয়ে থাকে তা হলে আপনার নাম সংকেত।

ভদ্রলোক বললেন, ভুল সংকেত দিলেন না তো? আমার আসল নামটা আপনি নিশ্চয় জানেন? আপনাকে কেন ফোন করেছি জানেন? বললাম, আবার কেন মনে পড়েছে বলে। আপনি চান লোকের কাছে প্রমাণ করাতে যে আমি বেঁচে আছি। এখনও গান গাই, এখনও চেহারা সুন্দর এবং গলা তেমন আছে। হানিফ বললেন, আপনার বোন আর আপনার গান একসঙ্গে করাব। বিরাট বিরাট জায়গায় নিয়ে যাব। ভালো খাওয়াব। যত পয়সা চান দেব। শুরু হয়ে গেল সেদিন থেকে ভাই-বোনে গান শেখান।

তাকে যতই দেখি ততই অবাক হই। নিয়ে গেলেন তার স্টুডিওতে। সুন্দর ষ্টুডিও। বললাম, আপনার সঙ্গে আমার একটি ছবি তোলা থাকলে মন্দ হয় না। যাতে লোকে বুঝবে যে আমি আপনার কত বড় ভক্ত। অনেক ভালো ভালো শিল্পী আপনার প্রোগ্রাম করতে চায়। তারা আমাকে ধরে। আমি যেসব শিল্পীকে একদম না করতে পারি না, তাদের আপনার কাছে পাঠাই। আপনি বেশিরভাগ সুযোগ দেন।

Advertisement

এবার আমার সুযোগ। ফেরদৌসীকে গান শেখান খুব ঝামেলা। আবদুল আহাদ থেকে শুরু করে কানাইলাল শীল সবাই খুব কষ্ট পেতেন কারণ ওর গলা ছিল মসৃণ। আমি সহজেই তুলে নি' সবচেয়ে মজা হত যখন জসীমউদদীন তাকে গান শেখাতেন। জসীমউদদীনের গলা ছিল না, কিন্তু ভাব ছিল। ঠিক যেমন নজরুলের তেমন পোক্ত গলা ছিল না। আব্বা সেটুকুই ধরে নিতেন। আর আমি জসীমউদদীনের ভাব বুঝতাম আর সঙ্গে সঙ্গে তুলতাম। এখানে হানিফ সংকেতের লেখা ও সুর বুঝতে অসুবিধা হত না। এবার শুটিং সারাদিন ধরে। অনেক ছেলেমেয়ে সঙ্গে নিয়ে।

এবার হানিফ সংকেতের ইন্টারভিউ আমার সঙ্গে। জিজ্ঞেস করলাম, কেমন লাগে দাদা অনুষ্ঠান করতে? বললেন, দাদা, পেটের দায়ে করি। নানা রকমের মস্করা করি সব পেটের দায়ে বলে পেটটা দেখালেন। ছোট্ট একটা পেট। বললাম, যে এতটুকু পেটে লাখ লাখ টাকা ধরে। আমার তো ১০০ টাকায় হয়ে যায়। বুঝলাম উনি অত্যন্ত রসিক মানুষ। তার মতো রসিক আমাকে আরেকজন খুঁজে দিন। পাবেন না। শেষ পর্যন্ত আমাকেই খুঁজতে হবে।

তার সম্বন্ধে লিখতে হলে কয়েক পাতা লাগবে। প্রতিটি পাতা হবে মনোমুগ্ধকর। ঠিক তারই মতো টাটকা চটপটে একদম রিয়াল ফুচকার মতো, শেষ হয়ে শেষ হবে না। তাকে আমি ভালোবাসি। শ্রদ্ধা করি।

উল্লেখ্য, হানিফ সংকেতকে চেনেন না এমন মানুষ এই দেশে খুব কমই পাওয়া যাবে। হানিফ সংকেত বাংলাদেশের বিনোদন অঙ্গনের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। আশির দশক থেকে শুরু করে প্রায় দুই যুগ ধরে তিনি বাংলাদেশের জনগণকে জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদির মাধ্যমে আনন্দ দিয়ে যাচ্ছেন। একাধারে তিনি উপস্থাপক, পরিচালক, লেখক ও প্রযোজক।

Advertisement

এমএবি/জেআইএম