অর্থনীতি

মালয়েশিয়ার সঙ্গে শিগগিরই মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি

দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়ানো এবং প্রবাসীদের সুরক্ষায় মালয়েশিয়ার সঙ্গে দ্রুত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করতে চায় বাংলাদেশ। বেশ আগেই এ বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আপত্তির কারণে এ চুক্তি করা সম্ভব হয়নি। তবে এখন এফটিএ করার জন্য সবুজ সংকেত দিয়েছে এনবিআর। এ কারণে খুব শিগগিরই পণ্য আমদানি-রফতানিসহ সেবা খাতকে সংযুক্ত করে এফটিএ করার জন্য মালয়েশিয়া সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

Advertisement

আরও পড়ুন > জিএসপি নয়, বাংলাদেশের স্বার্থে এফটিএ সম্পাদনে গুরুত্বারোপ

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এফটিএ) মো. শফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘মালয়েশিয়ার সঙ্গে এফটিএ করার উদ্যোগ অনেক আগেই নেয়া হয়েছিল। এজন্য দুই দেশই ফিজিবিলিটি স্ট্যাডিও (সম্ভাব্যতা যাচাই) সম্পন্ন করেছিল। কিন্তু রাজস্ব কমে যাবে বলে এ বিষয়ে বাধা দেয় এনবিআর। ফলে এফটিএ বিষয়টি আটকে যায়।’

Advertisement

তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে ধীরে ধীরে আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে শুল্ক উঠে যাবে। এটি বিবেচনায় এনবিআর এখন এফটিএ করতে বাধা দিচ্ছে না। এনবিআর থেকে সবুজ সংকেত পাওয়ার পর আবারও মালয়েশিয়া সরকারের কাছে এফটিএ প্রস্তাব পাঠানোর জন্য রিপোর্ট প্রস্তুত করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। শিগগিরই পণ্য আমদানি-রফতানিসহ সেবা খাতকে সংযুক্ত করে প্রস্তাব পাঠানো হবে। এ বিষয়ে মালয়েশিয়ার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে।’

সেবা খাতকে সংযুক্ত করে মালয়েশিয়া কি এফটিএ করতে রাজি হবে- এমন প্রশ্নের উত্তরে শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথমে যখন মালয়েশিয়ার সঙ্গে এফটিএ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল তখনও আমরা সেবা খাতকে সংযুক্ত করে এফটিএ করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। ওই প্রস্তাব মালয়েশিয়া সরাসরি গ্রহণ না করলেও প্রত্যাখ্যান করেনি। তারা বিবেচনাধীন রেখেছিল। তাই আশা করছি, সেবা খাতকে সংযুক্ত রেখে মালয়েশিয়া বাংলাদেশের সঙ্গে এফটিএ করবে।’

সেবা খাতকে সংযুক্ত করে এফটিএ করলে বাংলাদেশ কোন ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের দেশ থেকে অনেক শ্রমিক মালয়েশিয়ায় যায়। কিন্তু কিছুদিন পরপর তাদের ফেরত পাঠানো হয়। আবার অনেক সময় তারা শ্রমিক নিতে চায় না। তাই এফটিএ-তে সেবা খাত সংযুক্ত করলে হুটহাট করে তারা শ্রমিক ফেরত পাঠাতে পারবে না। আবার ইচ্ছা হলেই শ্রমিক নেব না, এটাও বলতে পারবে না। এক কথায়, একটি স্থিতিশীল শ্রমবাজার পাওয়া যাবে।’

আরও পড়ুন > দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির পাঁচ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ

Advertisement

সূত্র জানায়, বর্তমানে প্রায় সাত লাখ বাংলাদেশি মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন কাজে যুক্ত। তারা গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে ১১০ কোটি ৭২ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। ব্যাংকিং চ্যানেল ছাড়াও অনেক রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন এসব প্রবাসী। সেবা খাতকে সংযুক্ত করে এফটিএ করা হলে প্রবাসীদের যেমন দেশে ফেরত আসার আশঙ্কা থাকবে না, তেমনি অনেক মানুষ নতুন করে মালয়েশিয়ায় যেতে পারবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশ ২৩ কোটি ২৪ লাখ ডলারের পণ্য মালয়েশিয়ায় রফতানি করেছে। একই সময়ে মালয়েশিয়া থেকে ১৩৬ কোটি ৩১ লাখ ডলারের পণ্য বাংলাদেশ আমদানি করেছে। এসব পণ্য আমদানি-রফতানিতে শুল্ক হিসেবে এনবিআর আয় করেছে প্রায় ১০ লাখ মার্কিন ডলার। এফটিএ হলে এ রাজস্ব হারাবে এনবিআর। এ কারণে এতদিন তারা এফটিএ করার বিপক্ষে ছিল।

তবে বর্তমানে বিশ্ব ধীরে ধীরে মুক্ত বাণিজ্য অর্থনীতির দিকে অগ্রসর হচ্ছে। মুক্ত বাণিজ্য অর্থনীতিতে এক দেশের পণ্য অন্য দেশে প্রবেশের সময় বর্ডারে কোনো শুল্ক দিতে হবে না। তাই বিশ্ব বাণিজ্যে টিকে থাকতে বাংলাদেশও এ পথে হাঁটতে চায়। ফলে মালয়েশিয়ার সঙ্গে এফটিএ করার বিষয়ে অনাপত্তি তুলে নিয়েছে এনবিআর।

এছাড়া এফটিএ না থাকায় মালয়েশিয়ার বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক তেমন প্রবেশ করতে পারে না। নিজস্ব উৎপাদিত পোশাক ছাড়াও মালয়েশিয়ার বাজার দখল করে আছে চীনের তৈরি পোশাক। এফটিএ হয়ে গেলে দেশটিতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের নতুন বাজার তৈরি হবে।

আরও পড়ুন > ইতিবাচক রফতানি : নয় মাসে প্রবৃদ্ধি ১২.৫৭ শতাংশ

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এলডিসি (নিম্ন আয়ের দেশ) হিসেবে বাংলাদেশ এফটিএ ছাড়াই বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার জিরো ট্যারিফের আওতায় বর্তমানে বিভিন্ন দেশে প্রায় চার হাজার পণ্যে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা পাচ্ছে। তবে সুখবর হচ্ছে, আগামী ২০২৪ সালে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উন্নীত হয়ে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবে। তাই ২০২৭ সালের পর এ শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা আর পাওয়া যাবে না। তাই এখন থেকে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এফটিএ ও দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করে ২০২৭ সালের পরের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে চায় বাংলাদেশ।

সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য কূটনীতির মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও বহুপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনসহ মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল গঠন, শুল্ক সুবিধা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে বাংলাদেশের পণ্য ও সেবার জন্য আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারণ, অশুল্ক বাধা দূরীকরণ এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ট্রেড ফোরামে নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক স্বার্থ সংরক্ষণে কাজ করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

আরও পড়ুন > বাণিজ্য ঘাটতি ৯০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে

এরই অংশ হিসেবে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এশিয়া প্যাসিফিক ট্রেড এগ্রিমেন্ট, ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট অন দ্য প্রেমোশন অ্যান্ড লিবারেলাইজেশন অব ট্রেড ইন সার্ভিসেস, ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট অন দ্য প্রেমোশন, প্রটেকশন অ্যান্ড লিবারেলাইজেশন অব ইনভেস্টমেন্ট, ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট অন ট্রেড ফেসিলিটেশন ইন দ্য আপটা পারটিসিপেটিং স্ট্রেটস, সেকেন্ড অ্যামেন্ডমেন্ট টু দ্য এশিয়া প্যাসিফিক ট্রেড এগ্রিমেন্ট, ডিউটি কনসেশন এসআরও অব বাংলাদেশ আনডার এশিয়া প্যাসিফিক ট্রেড এগ্রিমেন্ট- এসব চুক্তি করেছে বাংলাদেশ।

কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) হয়নি। তবে শিগগিরই মালয়েশিয়া ছাড়াও শ্রীলঙ্কা, তুরস্ক, নেপাল ও ভুটানসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এফটিএ করার উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার।

এমইউএইচ/এমবিআর/এমএআর/জেআইএম