‘নারীর সত্যিকার ক্ষমতায়ন ঘটছে না। বিচ্ছিন্নভাবে দু-একজন নারীর ক্ষমতায়নে সমাজের কিছুই যায় আসে না। বরং তারা (নারী) ক্ষমতায় গিয়ে পুরুষের রূপই ধরছে। ক্ষমতা আর চেতনাবোধের প্রশ্নে নারীর উন্নয়ন না ঘটলে মানুষ মুক্তি পাবে না। এ কারণেই নারীর নিরাপত্তায় সমগ্র রাষ্ট্রব্যবস্থা ব্যর্থ বলে মনে করি।’
Advertisement
কথাগুলো বলছিলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক। নারী নিপীড়নের প্রসঙ্গ নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
শিক্ষার্থী নুসরাত হত্যার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, মানুষ যেন তার চেতনাবোধ হারিয়ে ফেলছে। নারীর ওপর নির্যাতনে বীভৎস্যতা সব মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। মাদরাসা শিক্ষার্থী নুসরাতের বেলায় যা ঘটল, তা কোনোভাবেই কল্পনায় আনতে পারছি না। এই নির্মমতা কী করে সম্ভব! একজন মাদরাসার অধ্যক্ষ কী করে এমন ঘৃণ্য ঘটনার জন্ম দিতে পারেন।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় নারী নির্যাতনের প্রসঙ্গে তুলে তিনি আরও বলেন, নারীর জন্য মাদরাসা যেমন নিরাপদ নয়, তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও। সভ্যতার এমন দিনে এই জঘন্য নিপীড়নের সঙ্গে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরাও জড়িয়ে যাচ্ছেন এবং সে খবর প্রায়ই মিলছে। রীতিমতো অবাক হয়ে যাচ্ছি। শিক্ষার আড়ালে অশিক্ষাটাই বারবার সামনে আসছে। তার মানে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে কোথাও না কোথাও গলদ আছে।
Advertisement
নারীর ওপর নির্যাতনের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, নারীকে আসলে সমাজ মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুত হয়নি। নারী নির্যাতনের ঘটনা সব জায়গাতেই ঘটছে। ইউরোপ-আমেরিকায়ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। এরপরও সেখানে নারীরা কিছুটা সম্মান পায়। আমরা নারীকে সম্মানও দিতে পারলাম না।
নারীর ক্ষমতায়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে নারীরা সরকার প্রধান। জার্মানি, আমেরিকায়ও আমরা নারীকে শীর্ষ স্থানে দেখতে পেলাম। তাতে কী লাভ হলো! বিচ্ছিন্নভাবে দু-একজন নারী ক্ষমতায় গিয়ে সমাজের সার্বিক পরিস্থিতি বদলাতে পারবে না। আমরা নারীর প্রতি হিংস্রতা আরও বাড়তে দেখলাম এই সময়ে। কর্তৃত্ব আর নিয়ন্ত্রণ প্রশ্নে তারাও পুরুষতান্ত্রিকতার উত্তরাধিকারী হিসেবে ভূমিকা রাখছে। গুটিকয়েক নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন ঘটলেই নারীর ভাগ্য পরিবর্তন হবে, তা মনে করার কারণ নেই।
হাসান আজিজুল হক বলেন, নারীর সমাজ পরিচালনার মানসিকতা নিয়ে উন্নয়ন ঘটলেই নিপীড়ন কমে আসবে। এজন্য সত্যিকার শিক্ষা দরকার। আর অপরাধীকে দণ্ড দেয়ার মতো ক্ষমতা-শক্তি নারীকে অর্জন করতে হবে। তবেই বিচার পাবে নির্যাতিত নারীরা। কারণ পুরুষ এখনও নারীকে মানুষ হিসেবে বিবেচনা করতে শেখেনি। আমরা নারীকে সম্মান-মর্যাদা দিতে বাধ্য হবো, যখন গোটা নারী সমাজের মধ্যে ক্ষমতায়ন প্রশ্নে পরিবর্তন আসবে।
এএসএস/এসএইচএস/এমএস
Advertisement