জাতীয়

ঢাকার বাসায় পানি ফোটাতে বছরে পোড়ে ৩৩২ কোটি টাকার গ্যাস

রাজধানীর বাসাবাড়িতে পানি ফোটাতে বছরে ৩৬ কোটি ৫৭ লাখ ৩৭ হাজার ঘনমিটার গ্যাস পুড়ছে। এতে জ্বালানি বাবদ ব্যয় হচ্ছে ৩৩২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।

Advertisement

এ তথ্য উঠে এসেছে দুর্নীতিবিরোধী বেসরকারি সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণায়। বুধবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে টিআইবি।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ‘ঢাকা ওয়াসা : সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনটি সম্পর্কে জানানো হয়েছে।

ঢাকা ওয়াসার আওতাভুক্ত ১১টি মড্স জোনের মধ্যে ১০টি মড্স জোনের (নারায়ণগঞ্জ ব্যতীত) আওতাধীন আবাসিক, বাণিজ্যিক, শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও ‘লো ইনকাম কমিউনিটি’ (এলআইসি) বা বস্তি এলাকার পানি ও পয়োসংযোগ এ গবেষণা কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

Advertisement

গবেষণায় ঢাকা ওয়াসার পয়োনিষ্কাশন ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা, শহরের অভ্যন্তরীণ জলাবদ্ধতা নিরসনের প্রক্রিয়া এবং এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রধান অংশীজন হিসেবে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের (উত্তর ও দক্ষিণ) ভূমিকা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এ গবেষণাটি ২০১৮ সালের এপ্রিল হতে চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত পরিচালিত হয়।

সেবাগ্রহীতাদের ওপর জরিপ কার্যক্রমটি গত বছরের ১ থেকে ১৪ আগস্ট সময়ের মধ্যে পরিচালনা করা হয়। গবেষণায় ব্যবহৃত বিভিন্ন তথ্যের বিবেচ্য সময়সীমা ছিল ২০১০ থেকে ২০১৮।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা ওয়াসার ৯১ শতাংশ গ্রাহকই পানি ফুটিয়ে পান করেন।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা ওয়াসার গ্রাহকদের ৫১ দশমিক ৫ শতাংশ বলেছেন পানি অপরিষ্কার, ৪১ দশমিক ৪ শতাংশ গ্রাহক পানিতে দুর্গন্ধ থাকার কথা বলেছেন। সারা বছরই পানি অপরিষ্কার ও দুর্গন্ধযুক্ত থাকে বলে জানিয়েছেন ৩৪ দশমিক ৫ শতাংশ গ্রাহক।

Advertisement

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানীতে প্রতিদিন ১৪ লাখ ঘনমিটার পয়োবর্জ্য তৈরি হলেও ওয়াসার রয়েছে দেড় লাখ ঘনমিটার সক্ষমতার একটি ট্রিটমেন্ট প্লান্ট। কিন্তু এ প্লান্টে প্রতিদিন পরিশোধন হয় ৫০ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য। বাকি ৯৬ শতাংশ পয়োবর্জ্য অপরিশোধিত অবস্থায় বিভিন্ন খাল হয়ে আশপাশের নদীতে গিয়ে পড়ছে।

ওয়াসার দুর্নীতি, ঘুষ

গবেষণা প্রতিবেদনে ওয়াসায় নিয়োগ দুর্নীতির কথাও তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের ‘অযাচিত হস্তক্ষেপ’ ঘটে। গ্রাহকদের মধ্যে প্রায় ৬২ শতাংশ অনিয়ম, হয়রানি ও দুর্নীতির শিকার এ প্রতিষ্ঠানে।

পানির সংযোগের জন্য ২০০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়। এ ছাড়া পয়োলাইনের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে ৩০০ থেকে ৪ হাজার ৫০০, গাড়িতে জরুরি পানি সরবরাহের জন্য ২০০ থেকে ১৫০০, মিটার ক্রয়/পরিবর্তনের জন্য এক হাজার থেকে ১৫ হাজার, মিটার রিডিং ও বিল সংক্রান্ত কাজের জন্য ৫০ থেকে তিন হাজার এবং গভীর নলকূপ স্থাপনে এক থেকে দুই লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়।

এ ছাড়া ওয়াসার বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির তথ্যও উঠে এসেছে টিআইবির গবেষণায়।

 

পর্বেক্ষণ ও সুপারিশ

গবেষণার পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, নিরবচ্ছিন্ন ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার পানির চাহিদা পূরণে টেকসই ও পরিবেশবান্ধব পানির উৎপাদন ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ঢাকা ওয়াসার সক্ষমতা ও উদ্যোগের ঘাটতি রয়েছে। নিয়োগ, গ্রাহকসেবা ও প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির ঘাটতি আছে। এ থেকে উত্তরণে পানি ও পয়োনিষ্কাশন সেবার মূল্য নির্ধারণে রেগুলেটরি কমিশন গঠনের সুপারিশ করেছে টিআইবি ।

এ ছাড়া ব্যবহার অনুযায়ী সেবার মূল্য নির্ধারণ, নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে বোর্ড গঠন, ড্রেনেজ ব্যবস্থা একক কর্তৃপক্ষের অধীনে রাখার সুপারিশও করা হয়েছে।

জেডএ/এমএস