স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, বর্তমান সরকার দেশের প্রত্যেকটি মানুষের সুপেয় পানি সরবরাহের বিষয়ে কাজ করে আসছে। বর্তমানে পানি সবরাহের কাভারেজ ৮৮ শতাংশ অর্জন করা সম্ভব হয়েছে।বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ জনসংখ্যা অধ্যুষিত ডেল্টা অঞ্চল, যার ভেতর দিয়ে ৫৭টি আন্তঃসীমান্ত নদীসহ শতাধিক নদী শাখা-প্রশাখাসহ প্রবাহিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে নদী দূষণ রোধেও কাজ করছে সরকার।
Advertisement
বুধবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, আমাদের সবাইকে একটি স্থিতিশীল পৃথিবীর জন্য কাজ করতে হবে, যেখানে প্রত্যেকের জন্য পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা থাকবে। সমন্বিত পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আমাদের পানির উৎসসমূহকে নিরাপদ ও গ্রহণযোগ্য করে তুলতে হবে। প্রকৃতির এই অমূল্য সম্পদ রক্ষায় আমাদের অনেক বেশি কাজ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, টেকসই উদ্ভাবনী সমাধানের জন্য আমাদেরকে এখন থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা শুরু করতে হবে। অন্যথায় লক্ষ্য অর্জনে অনেক বেশি দেরি হয়ে যাবে। অনাগত দিনের ঝুঁকি ও সুযোগ বিবেচনা করে একসঙ্গে কাজ করলে সমন্বিত সফলতা অবশ্যম্ভাবী। আমাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা একটি দূষণমুক্ত এবং স্বাস্থ্যসম্মত ভবিষ্যৎ অর্জনের পথে এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করবে বলে বলে আশা প্রকাশ করেন মন্ত্রী।
Advertisement
সেমিনারে বক্তারা বলেন, দেশের গ্রামাঞ্চলে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর বৃষ্টির পানিসহ সকল ভূ-পৃষ্ঠস্থ পানি বিশেষ করে, পুকুর পুনঃখননের মাধ্যমে অধিক হারে ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহারে কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। খাবার পানিতে ০.০৫ মিলিগ্রাম বা তার কম আর্সেনিকের মাত্রাকে নিরাপদ খাবার পানি হিসেবে ধরা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে মোট ৮৮ ভাগ মানুষ আর্সেনিকমুক্ত নিরাপদ পানি প্রাপ্তির আওতায় রয়েছে। অর্থাৎ প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৮৮ জন মানুষ তাদের বাসা থেকে ৫০০ ফুটের মধ্যে ন্যূনতম একটি নিরাপদ পানির উৎসের আওতায় রয়েছে।
তারা আরও বলেন, দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ২০টি জেলা উপকূলবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত। তার মধ্যে প্রায় ১১টি জেলায় খাবার পানি সরবরাহে লবণাক্ততার সম্মুখীন হতে হয়। উপকূলবর্তী অঞ্চলসমূহে নদ-নদীর পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় ভূ-পৃষ্ঠস্থ পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। ফলে অগভীর স্তরে স্থাপিত নলকূপসমূহে লবণাক্ততার পরিমাণও বাড়ছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল উপকূলীয় অঞ্চলে গভীর নলকূপ স্থাপনের মাধ্যমে এ সঙ্কট মোকাবেলায় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি যে সকল স্থানে গভীর নলকূপ স্থাপন সম্ভব নয় কিংবা গভীর স্তরে লবণাক্ততা প্রবেশ করেছে, সে সকল স্থানে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও ব্যবহারের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। সংরক্ষণের মাধ্যমে সুপেয় পানি সরবরাহ করা হচ্ছে বলে বক্তারা জানান।
সেমিনারে জানানো হয়, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের মাধ্যমে এ পর্যন্ত প্রায় ৭ হাজার ৫৫৪টি বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ পদ্ধতি স্থাপন করা হয়েছে। এ সকল উৎসের মাধ্যমে বৃষ্টি পরবর্তী ছয় মাস পর্যন্ত নিরাপদ পানি সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে। আরও ১ লাখ বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ পদ্ধতি স্থাপনের নিমিত্তে প্রস্তাবিত প্রকল্প স্থানীয় সরকার বিভাগে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ভূগর্ভে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও ব্যবহার পদ্ধতি ম্যানেজড একুইফার রিচার্জ সিস্টেম নামে পরিচিত।
Advertisement
পরিবেশবান্ধব এ পদ্ধতি ব্যবহার করে বৃষ্টির পানি ও পুকুরের পানি পরিশোধন পূর্বক ভূগর্ভে প্রেরণ ও সংরক্ষণের মাধ্যমে পরবর্তীতে ব্যবহারের জন্য উত্তোলন করা হয়। সাধারণত লবণাক্ততা প্রবণ এলাকায় পানি সরবরাহের জন্য এ পদ্ধতি বেশ উপযোগী। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর এ পর্যন্ত প্রায় শতাধিক এমএআর সিস্টেম স্থাপন করেছে যেগুলো খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলায় অবস্থিত।
স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব এস এম গোলাম ফারুকীর সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য, ডিপিএইচই এর প্রধান প্রকৌশলী সাইফুর রহমান, বুয়েটের অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, ডব্লিউএইচও বাংলাদেশ প্রতিনিধি ব্রাডেন জাং রানা প্রমুখ।
এএস/এমএসএইচ/জেআইএম