> দায়িত্ব নেয়ার শুরুতেই পোশাক শ্রমিকদের মজুরি নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন বাণিজ্যমন্ত্রী> সব ধরনের ব্যবসায় প্রতিযোগিতা আরও বাড়াতে হবে> আগামীতে বাণিজ্য বাড়ানোর ক্ষেত্রে কোনো বাধা রাখতে চান না
Advertisement
নতুন মন্ত্রিসভার ১০০ দিন পূর্ণ হয়েছে মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল)। নতুন সরকারের এ মন্ত্রিসভায় অনেক সদস্য নতুন কিছু করার প্রত্যয়ে নব উদ্যমে পথ চলা শুরু করেন। তাদেরই একজন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের স্থলাভিষিক্ত হয়ে ব্যবসায়ী টিপু মুনশি বেশ ভালোভাবেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পরিচালনা করছেন। একই সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানোর ক্ষেত্রে দূর করতে চান সকল ধরনের বাধা।
গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা পেয়ে ৭ জানুয়ারি চতুর্থবারের মতো শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী করে নতুন সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। এ সরকারে প্রধানমন্ত্রী ছাড়া ২৪ জন মন্ত্রী, ১৯ প্রতিমন্ত্রী এবং তিনজন উপমন্ত্রী রয়েছেন। নতুন মন্ত্রিসভায় আগের বেশির ভাগ মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর ঠাঁই হয়নি।
শপথ নিয়ে অন্য মন্ত্রীরা যখন আনন্দ উৎসব আর শুভেচ্ছা বিনিময়ে ব্যস্ত, ঠিক তখনই তৈরি পোশাক শ্রমিকদের জন্য ঘোষিত মজুরি নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি বর্তমান বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। মজুরিকে কেন্দ্র করে কাজ ছেড়ে রাস্তায় নামেন শ্রমিকরা। পরে পোশাক শিল্প মালিক, শ্রমিক প্রতিনিধি ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে ওই চ্যালেঞ্জ বেশ দক্ষতার সঙ্গে মোকাবেলা করেন বাণিজ্যমন্ত্রী। কয়েকটি গ্রেডে বেতন বৃদ্ধি করে মাত্র কয়েক দিনেই শ্রমিকদের শান্ত করে কাজে ফেরাতে সক্ষম হন তিনি।
Advertisement
এরপর হঠাৎ করে চালের বাজারে অস্থিতিশীলতা দেখা দেয়। সেখানেও অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই খাদ্যমন্ত্রী ও চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে চালের বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনেন। এছাড়া কী কারণে চালের বাজার হঠাৎ অস্থির হয়েছিল সেটিও নির্ধারণ করতে সক্ষম হন বাণিজ্যমন্ত্রী।
এ প্রসঙ্গে গত ৯ মার্চ রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তানে এক অনুষ্ঠানে টিপু মুনশি বলেন, আমরা যখন নতুন সরকার গঠন করলাম তার কয়েক দিনের মধ্যেই হঠাৎ চালের দাম বেড়ে গেল। তখন আমি খাদ্যমন্ত্রীসহ চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করলাম। তারপর আমরা জানতে পারলাম দেশে মাত্র চার-পাঁচজন বড় ব্যবসায়ী চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন। ফলে তাদের মধ্য একটা যোগসাজশ তৈরি হয়। ব্যবসায়ীদের মধ্যে এ ধরনের যোগসাজশ থাকলেই সাধারণ জনগণ ক্ষতির মুখে পড়ে। চালসহ সব ধরনের ব্যবসায় প্রতিযোগিতা আরও বাড়াতে হবে।
কোনো খাতের ব্যবসায়ীরা যেন যোগসাজশ করতে না পারে সে জন্য প্রতিযোগিতা কমিশনকে গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান জানান তিনি। এছাড়া দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের আলাপকালে আরও জানান, ‘বিদেশিরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চায়। কিন্তু বিনিয়োগ করতে পথে পথে অনেক বাঁধা। এ দফতর, সেই দফতর। ইজ অব ডুয়িং বিজনেসে পিছিয়ে পড়া সমস্যা। ইতোমধ্যে ইজ অব ডুয়িং বিজনেস সহজীকরণ নিয়ে মিটিং হয়েছে। আরও মিটিং করে এ বিয়টিতে আমারা যেকোনো মূল্য এগুতে চাই।’
টিপু মুনশি বলেন, ‘আমি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়েছি। সোজা কথা লাল ফিতার কাজের মধ্যে আমি নেই। আমিতো গায়ে খাটা মানুষ। লাল ফিতা দেখলেই আমার মাথা গরম হয়ে যায়। কাজ আটকে থাকবে কেন? যে কাজ আজকে করা সম্ভব, কালকের জন্য সেটা অপেক্ষা করব কেন?’
Advertisement
এদিকে বিভিন্ন বাণিজ্য বাড়ানোর লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এগুলো হচ্ছে- আগামী ২২ এপ্রিল চেকোস্লোভিয়ার সাথে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এছাড়া খুব শিগগিরই ইউরেশিয়ান ইকোনমিক ইউনিয়নের (ইইইউ) সঙ্গে একটি সমঝোতা স্বারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করা হবে। এর মাধ্যমে রাশিয়াসহ ইউনিয়নের ৫টি দেশে (রাশিয়া, বেলারুশ, ইউক্রেন, আজারবাইজান ও আরমানিয়া) রয়েছে। এতে করে রফতানি যোগ্য পণ্যের জন্য নতুন বাজার তৈরি হবে বলে আশা করছে সরকার।
এ বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, চেকোস্লোভিয়ার সাথে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে। আগামী ২২ এপ্রিল এ চুক্তি অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া ইউরেশিয়ান ইকোনমিক ইউনিয়নের সাথে সব আলাপ-আলোচনা শেষ হয়েছে। খুব শিগগিরই তাদের সঙ্গে এমওইউ স্বাক্ষর হবে।
তিনি বলেন, আগামীতে আমরা ব্রাজিলের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি করার উদ্যোগ গ্রহণ করব। কারণ, ব্রাজিল ২৫ কোটি মানুষের দেশ। ওখানে তৈরি পোশাকের বাজারে বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা এ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে চাই। এছাড়া বাংলাদেশ প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ব বাণিজ্যে সফলতা লাভের জন্য এবং এলডিসি (নিম্ন আয়ের দেশ) হতে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য বাংলাদেশের ট্রেড পলিসি সময় উপযোগী করা হয়েছে। বাংলাদেশে বিনিয়োগে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে সরকার বিনিয়োগ বান্ধন নীতি গ্রহণ করেছে।
টিপু মুনশি বলেন, বর্তমানে আমরা নিম্ন মূল্যের পণ্য রাফতানি করে থাকি। আগামীতে উচ্চমূল্যের পণ্য রফাতনির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ২০১২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিবেশ, ট্রেড পলিসি এবং সেক্টরাল পলিসিতে যে উন্নয়ন ও সংস্কার করা হয়েছে সে বিষয়ে ডব্লিউটিও সেক্রেটারিয়েট এবং বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক পৃথক পৃথক দুটি রিপোর্ট প্রস্তুত করে ডব্লিউটিও সদর দফতর থেকে ইতোমধ্যে সদস্যভুক্ত ১৬৪টি দেশে পাঠানো হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি অনেক উজ্জ্বল হবে বলে আশা করছি।
এছাড়া দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়ানো ও প্রবাসীদের সুরক্ষায় মালয়েশিয়ার সঙ্গে দ্রুত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করতে চায় বাংলাদেশ। পাশাপাশি শ্রীলঙ্কা, তুরস্ক, নেপাল-ভুটানসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এফটিএ করার উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, সবেমাত্র তো দায়িত্ব নিলাম। দেখা যাক জাতির জন্য কী করতে পারি। তবে আগামীতে বাণিজ্য বাড়ানোর ক্ষেত্রে আমি কোনো বাধা রাখতে চাই না।
এমইউএইচ/আরএস/জেআইএম