বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তি নিয়ে গোপনে ‘সমঝোতা’ হচ্ছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই তার পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে এ বিষয়ে আবেদন করা হবে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ২৫ বা ২৬ এপ্রিল রাতের একটি ফ্লাইটে করে লন্ডন যাবেন তিনি। দলীয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
Advertisement
সূত্র জানায়, প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে খালেদা জিয়া প্রথমে রাজি না থাকলেও এখন তিনি আগ্রহী। সে মোতাবেক গত ১৪ এপ্রিল দলীয় চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এবং নজরুল ইসলাম খান। চেয়ারপারসনের সঙ্গে এ বিষয়ে তারা চূড়ান্ত আলোচনা করেছেন।
সূত্র আরও জানায়, ‘সমঝোতা’র উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো হলো- মির্জা ফখরুলসহ দলের ৬ জন নির্বাচিত এমপিকে বিএনপি যদি সংসদে পাঠাতে রাজি হয় তাহলে বিনিময়ে সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্তি দেবে। মুক্তি পেয়ে তিনি সরাসরি লন্ডন চলে যাবেন। দেশের বাইরে গিয়ে তিনি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে কোনো কথা বলতে পারবেন না।
অন্য একটির সূত্রের দাবি, খালেদা জিয়া প্যারোলের বিষয়টি নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, তার বিরুদ্ধে যেসব মামলা হয়েছে তার প্রত্যেকটিই মিথ্যা। আদালতে সুবিচার পেলে তিনি এতদিন সব মামলা থেকে রেহাই পেতেন। যেটা সরকার করতে দিচ্ছে না। এখন তাকে প্যারোলে মুক্তির নামে আরেক দফা নির্যাতন করতে চাইছে। প্যারোল প্রক্রিয়ায় জড়িতদের দল থেকে আজীবন বহিষ্কারের কথাও বলেছেন খালেদা জিয়া।
Advertisement
তবে দলের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার প্যারোলের বিষয়ে সরকারের সঙ্গে মধ্যস্থতা করছেন বিএনপির শীর্ষ দুই নেতা এবং প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা। জড়িত রয়েছে প্রভাবশালী দুটি দেশও। কয়েকজন মন্ত্রীও এ ব্যাপারে অবগত। গোপনে দৌড়ঝাঁপ চলছে।
এদিকে খালেদা জিয়ার প্যারোল নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলতে থাকায় বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হচ্ছে জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশনেত্রী প্যারোলের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেননি। প্যারোলে মুক্তির বিষয়টি একান্তই খালেদা জিয়া এবং তার পরিবারের সিদ্ধান্ত। এটা দলের কোনো বিষয় নয়।
এছাড়া প্যারোলে মুক্তি নিয়ে দেশের বাইরে যাওয়ার যে খবর প্রকাশ হচ্ছে সেগুলোকেও ভিত্তিহীন দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, শর্তসাপেক্ষ কোনো বিষয়ে জানা নেই। তাছাড়া প্যারোল কেন, সরকারের সদিচ্ছা থাকলে এমনিতেই জামিন হবে।
Advertisement
অন্যদিকে, খালেদা জিয়ার প্যারোলের মূল শর্ত বিএনপির ৬ নির্বাচিত এমপির শপথগ্রহণ নিয়েও দলের ভেতর শুরু হয়েছে তোড়জোড়। এ নিয়ে রয়েছে মতবিরোধও। নির্বাচিতদের সংসদে যোগদানের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ প্রভাবশালী রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে দিয়েও বিএনপিকে চাপ দেয়া হচ্ছে। আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে শপথ না নিলে বিএনপির ৬ জনের সংসদে যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যাবে। তারা যদি সংসদে না যায় তাহলে খালেদা জিয়াকেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরাসরি কেরানীগঞ্জ জেলখানায় যেতে হবে।
এই পরিস্থিতি নিয়ে গত ১৫ এপ্রিল দলের নির্বাচিতদের নিয়ে চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়ে বৈঠক করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৈঠকে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানও উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে অংশ নেয়া বগুড়া থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য আলহাজ মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন বলেন, শপথের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে ম্যাডামের মুক্তি হলে বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
শপথের বিষয়ে তাদের ওপর কোনো চাপ নেই বলেও জানান তিনি।
কেএইচ/বিএ