বিশেষ প্রতিবেদন

আ.লীগের পরিকল্পনায় ‘ঐক্যবদ্ধ সংগঠন’

গত ৭ জানুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে টানা তৃতীয় দফা সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। একটানা সরকারে থাকার কারণে আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-কোন্দল আরও বেড়েছে। এবার তার বড় প্রমাণ মিলেছে উপজেলা নির্বাচনে। শুধুমাত্র নিজেদের মধ্যে কোন্দলের কারণে ১৩৫ উপজেলায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের পরাজয় হয়েছে।

Advertisement

তবে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘মুজিব বর্ষ’কে কেন্দ্র করে তৃণমূল পর্যন্ত সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী করার ঘোষণা দিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি সারা দেশব্যাপী জাঁকজমকপূর্ণভাবে মুজিব বর্ষ পালনেরও নির্দেশ দিয়েছেন।

গত ৩০ জানুয়ারি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর আওয়ামী লীগ তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে। বিএনপি এ নির্বাচনে অংশ নিলেও জয়ের ব্যাপারে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ ছিল না তাদের। ফলে নিরঙ্কুশ জয় পায় আওয়ামী লীগ।

আরও পড়ুন>> ১৭ মার্চ ২০২০ থেকে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ মুজিব বর্ষ

Advertisement

তৃণমূলের বিভিন্ন সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে দল ক্ষমতায় থাকায় এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, ক্ষমতার দাপট, এমপিদের সঙ্গে উপজেলা নেতাদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়ে মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়েছে। ফলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র তিন মাসের মধ্যে দেশের ১৩৫টি উপজেলায় নৌকার প্রার্থীরা পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ গ্রহণ করেছেন। অথচ ভোটের মাঠে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী দলগুলো ছিল না। অনেকটা একতরফা এ নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে ওই উপজেলাগুলোতে পরাজিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা।

গত ১০ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত চার ধাপে দেশের ৪৪৫টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট হয়। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দেয়া তথ্য অনুযায়ী, অল্প কয়েকজন বাদে ১৩৫টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে জয়ীদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী।

দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার গঠনের পর থেকে বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, দলীয় কার্যনির্বাহী কমিটি, প্রেসিডিয়াম ও উপদেষ্টা পরিষদের সভাতে ‘মুজিব বর্ষ’ অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালন করা হবে বলে ঘোষণা দিচ্ছেন। ২০২০ সালে পূর্ণ হবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সাল হবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী।

আরও পড়ুন>> তৃণমূলে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানমালা ছড়িয়ে দিতে চাই

Advertisement

২০২০ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আগামী ২০২০-২১ সালকে ‘মুজিব বর্ষ’ হিসেবে পালন করা হবে। ২০২০ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্ম তারিখ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত মুজিব বর্ষ পালিত হবে। এখানে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীও থাকবে। এ সময়ের মধ্যে যেসব জাতীয় ও দলীয় (আওয়ামী লীগ) দিবস পড়বে সেগুলোকেও বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে পালন করা হবে। দেশের ওয়ার্ড, ইউনিয়ন পর্যন্ত এ বর্ষ পালন করা হবে। সরকারিভাবেও পালিত হবে মুজিব বর্ষ।

জানা গেছে, বছরব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে উদযাপিত হবে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী। বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে। বিভাগ জেলা ও ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করা হবে।

সম্প্রতি আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে মুজিব বর্ষকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে পালনের জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। দলীয় নেতাকর্মীদের তিনি বলেছেন, মুজিব বর্ষ পালনকালে আওয়ামী লীগের কোনো কমিটির মধ্যে যেন কোন্দল বা দ্বন্দ্ব না থাকে। একদম তৃণমূল পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ থেকে আমরা মুজিব বর্ষ পালন করতে চাই।

আরও পড়ুন>> আড়াই মাসে নৌকার ভোট কমেছে ৮০ ভাগ!

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ জাগো নিউজকে বলেন, আওয়ামী লীগ অনেক বড় দল। নেতাকর্মীদের মধ্যে মতভেদ থাকতেই পারে। কিন্তু দলের বৃহত্তর স্বার্থে নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ থাকে। দেশব্যাপী শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগই আগামীতে মুজিব বর্ষ পালন করবে।

দলের মধ্যে কোন্দল প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন জাগো নিউজকে বলেন, কেন্দ্র থেকে আমাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যারা নৌকা প্রতীকের বিরোধিতা করেছিল তাদের তালিকা তৈরির। এ নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। কাজ শেষ হলে জমা দেব।

তিনি আরও বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে দলকে আরও শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ করার নির্দেশনা রয়েছে। এ বিষয়েও আমরা কাজ শুরু করেছি।

এফএইচএস/এমবিআর/এমএআর/বিএ