বিশেষ প্রতিবেদন

গণপূর্তমন্ত্রীর চ্যালেঞ্জ ‘ঝুঁকিপূর্ণ ভবন’

নতুন মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর রাজধানীর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো অপসারণের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম। চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি নতুন সরকার গঠনের ১০০ দিন পার না হতেই ‘প্রায় অসাধ্য’ এ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাকে।

Advertisement

গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টার অগ্নিকাণ্ড এবং গত ২৮ মার্চ বনানীর এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের পর আলোচনায় আসে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো অপসারণের বিষয়টি। এর আগে এ নিয়ে পরস্পর বিরোধী বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।

আরও পড়ুন >> নতুন-পুরান কোনো ঢাকাই নিরাপদ নয়

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এফ আর টাওয়ারের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শুধু মালিক ও ডেভেলপার নয়, অন্য কারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত, তাদেরও খুঁজে বের করার জন্য উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন ও কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ঢাকা মহানগরীর অপরিকল্পিত ইমারতের ঝুঁকি থেকে নগরবাসীকে রক্ষার জন্য পর্যায়ক্রমে সব ইমারত পরিদর্শন করে রিপোর্ট অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সব বহুতল ভবনের অনিয়ম চিহ্নিত করতে ২৪টি টিম গঠন করা হয়েছে। বেশকিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির বেআইনিভাবে নির্মিত স্থাপনা ভেঙে দিয়ে আইনের বাস্তব প্রয়োগ করা হবে বলে সূত্রটি জানায়।

Advertisement

মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালে রাজউক প্রাথমিকভাবে ৩২১টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করে। কিন্তু ঢাকা সিটি কর্পোরেশন অর্ডিন্যান্সের তৃতীয় তফসিলের ৫২-৫৩ ক্রমিক অনুসারে, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করা ও ভেঙে ফেলার দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের। ২০১৬ সালে রাজউক ওই ৩২১টি ভবন ফের জরিপ করে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর মধ্যে মালিকরা এরই মধ্যে ২৫টি ভবন ভেঙে ফেলেছেন। ২৮টি ভবন মালিকরা ভেঙে নতুনভাবে নির্মাণ করেছেন। বর্তমানে ২৫৫টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন বিদ্যমান, যার মধ্যে ৩৫টি অতি ঝুঁকিপূর্ণ এবং ২২০টি বাহ্যিক ঝুঁকিপূর্ণ।

আরও পড়ুন >> এফআর টাওয়ার নির্মাণে রাজউকের দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তারা জড়িত

মন্ত্রণালয়ের দাবি অনুযায়ী, অবহেলাজনিত কারণে কোনো নাগরিকের মৃত্যু হলে সংশ্লিষ্ট অবহেলাকারীকেও ফৌজদারি আইনের আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অনুমোদনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে নির্মিত সব ইমারতের পরিদর্শন রিপোর্ট এবং তদন্ত কমিটির রিপোর্ট জনসম্মুখে প্রকাশেরও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে আরও জানা গেছে, নির্মাণ কাজের একটি নকশা অনুমোদনের ক্ষেত্রে ১৬টি সংস্থার শরণাপন্ন হতে হতো। ১২টি অপ্রয়োজনীয় স্তরকে বাদ দিয়ে মাত্র চারটি স্তর/শর্ত রাখার মধ্য দিয়ে এবং দীর্ঘদিন ধরে চলমান রাখার নীতি পরিবর্তন করে স্বল্প ও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রাজউকের নকশা অনুমোদন, বিক্রয় অনুমতি, নামপত্তনসহ অন্যান্য কার্যক্রম পুনর্বিন্যাসের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

Advertisement

আরও পড়ুন >> পুরান ঢাকার ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙে নতুন করে দেবে সরকার

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় চলতি বছরের ১ মে থেকে রাজউকসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সব কার্যক্রম অটোমেশন পদ্ধতির অধীনে আনার উদ্যোগ নিয়েছে। ডিজিটালাইজড নাগরিক সেবাও পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করা হয়েছে। রাজউককে ‘ঢেলে সাজানোর’ উদ্যোগের অংশ হিসেবে সদস্য পর্যায়ে দায়িত্ব বণ্টন, সব নথি/রেকর্ড খুঁজে বের করা, কোনো নথি না পাওয়া গেলে একই নথির বিকল্প নথি তৈরি করা এবং স্ক্যানিং পদ্ধতির মাধ্যমে ডাটাবেজ তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

১০০ দিনের অভিজ্ঞতার বিষয়ে শ ম রেজাউল করিম জাগো নিউজকে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে আস্থা নিয়ে এত বড় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন, তা সততা, নিষ্ঠা, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে পালনের চেষ্টা করছি। কোনো অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতিকে প্রশ্রয় দিচ্ছি না এবং দেব না।’

আরও পড়ুন>> ঢাকা উত্তরের ১৫৩ ভবন ঝুঁকিপূর্ণসাফল্য-ব্যর্থতার প্রশ্নে তিনি বলেন, নতুন দায়িত্ব গ্রহণ করেছি, ব্যর্থ হতে চাই না। সবার সহযোগিতা চাই। আমি আমার কাজে আত্মবিশ্বাসী।

বর্তমান মন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে সহমত পোষণ করেন সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বর্তমান মন্ত্রিসভা অনেক ভালো কাজ করছে। গণপূর্তমন্ত্রীর চ্যালেঞ্জের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রায় অসাধ্য একটি কাজ তিনি হাতে নিয়েছেন। আশা করি সফল হবেন।

এইউএ/এমবিআর/এমএআর/বিএ