বিশেষ প্রতিবেদন

নির্বাচনে আস্থা হারাচ্ছেন ভোটাররা

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দিন দিন নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি আস্থা হারিয়েছেন ভোটাররা। টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানা গেছে।

Advertisement

পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এ পর্যন্ত চারটি ধাপের নির্বাচন শেষ হয়েছে। আরেকটি ধাপের নির্বাচন হবে জুনে। এই চার ধাপের নির্বাচনেই প্রথম থেকে ধীরে ধীরে ভোটারদের উপস্থিতি কমেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিএনপির মতো একটি রাজনৈতিক দল সব ধরনের নির্বাচন বর্জন করায় এবং সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা না থাকায় তারা ভোট দিতে যাচ্ছেন না।

আরও পড়ুন> ৩ ঘণ্টায় একটি ভোটও পড়েনিইসি সূত্র জানায়, পঞ্চম উপজেলা পরিষদের ভোটে প্রথম ধাপে ৪৩.৩২ শতাংশ; দ্বিতীয় ধাপে ৪১.২৫ শতাংশ; তৃতীয় ধাপে ৪১.৪১ শতাংশ ও চতুর্থ ধাপে ৩৬.৫০ শতাংশ ভোট পড়ে। সব মিলিয়ে গড়ে ভোট পড়েছে ৪০.৫০ শতাংশ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশন (সিইসি) এ টি এম সামছুল হুদা জাগো নিউজকে বলেন, ভোটারদের নিয়ে মূলত নির্বাচন কমিশনের কাজ করার কথা থাকলেও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এখানে সরকার একটি বড় অংশীজন। গণতন্ত্র শক্তিশালী না থাকায় সরকারের প্রভাবও প্রকট। তাই যত দিন যাচ্ছে ততই ভোটারদের আস্থা কমে যাচ্ছে। এর আরও কারণ হলো- দেশের অন্যতম বড় দল বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। আর একটি বিষয় হলো- নির্বাচন নিয়ে নানা ধরনের প্রশ্ন। এইসব বিষয়ে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে কাজ করতে হবে।

Advertisement

আরও পড়ুন> ভোটার শূন্য কেন্দ্রে গেম খেলছেন আনসার সদস্যএ বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হুসাইন বলেন, সংবাদ মাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী দিন দিন ভোটারদের আস্থা কমছে। তাই তারা ভোট দিতে যাচ্ছেন না। তবে কেন কমছে তা নিয়ে গবেষণা করা দরকার।

এবার চার ধাপে (১০ মার্চ, ১৮ মার্চ, ২৪ মার্চ ও ৩১ মার্চ) প্রায় সাড়ে চারশ উপজেলায় ভোট হয়। এর মধ্যে শতাধিক উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা।

ইসি সূত্র আরও জানায়, চার পর্বে ৬ কোটি ৩ লাখ ৫৫ হাজার ৪২১ ভোটারের মধ্যে ২ কোটি ৪৩ লাখ ৬৫ হাজার ৯২৭ জন ভোট দিয়েছেন। যা এসব উপজেলার মোট ভোটারের ৪০.৩৭ শতাংশ।

আরও পড়ুন> সাংবাদিক দেখে ভোটার জোগাড়!

Advertisement

উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে ১ কোটি ১০ লাখ ৫২ হাজার ৬৩ ভোটারের মধ্যে ৪৭ লাখ ৮৭ হাজার ৫১২ জন ভোট দিয়েছেন। বৈধ ভোট পড়েছে ৪৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৫৮।

দ্বিতীয় ধাপের উপজেলাগুলোয় ভোটার ছিল ১ কোটি ৪৫ লাখ ১১ হাজার ৯০৭ জন। বৈধ ভোট পড়েছে ৫৭ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫৬। প্রদত্ত ভোট ৫৯ লাখ ৮৬ হাজার ৮৭৪।

তৃতীয় ধাপে ভোটার ছিল ১ কোটি ৮২ লাখ ১ হাজার ৭৭০ জন। প্রদত্ত ভোট ৭৫ লাখ ৩৬ হাজার ৯২৬ জন। চতুর্থ ধাপে ১ কোটি ৬৫ লাখ ৮৯ হাজার ৬৮১ জন ভোটারের মধ্যে ৬০ লাখ ৫৪ হাজার ৬১৫ জন ভোট দেন।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবে নির্বাচন যখন খুব বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয় এবং সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে তখন ভোটারদের উপস্থিতি বাড়া স্বাভাবিক। যখন অনেক বেশি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী থাকেন, অনেক বেশি রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে তখন স্বাভাবিকভাবেই ভোটারদের উপস্থিতি বাড়তে থাকবে।’

এইচএস/এমবিআর/বিএ