একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয় লাভের মধ্য দিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় এসেছে আওয়ামী লীগ সরকার। এর আগের দুই মেয়াদে সরকার দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে বেশি জোর দিয়েছিল। বিশেষ করে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, সড়ক, বিদ্যুতায়ন প্রকল্পগুলো বেশি গুরুত্ব পেয়েছিল। তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসার পর এসব প্রকল্পের পাশাপাশি গুরুত্ব পেয়েছে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের গ্রামীণ অর্থনীতি উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলো। একই সঙ্গে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে রেলের উন্নয়নেও।
Advertisement
আরও পড়ুন >> নিরীহ মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হয় : প্রধানমন্ত্রী
১৬ এপ্রিল বর্তমান সরকারের ১০০ দিন পূর্ণ হয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা বসেছে ছয়বার। প্রথম সভায় হয় ২২ জানুয়ারি, সর্বশেষ সভা হয় ৯ এপ্রিল। এসব সভায় মোট ৫১টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়।
প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে সরকারের ব্যয় হবে প্রায় ৫৭ হাজার ৯০৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ করবে ৩৭ হাজার ৫৮১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে ঋণ হিসেবে নেবে ১৯ হাজার ৮৮০ কোটি ৯০ টাকা এবং দেশীয় সংস্থার নিজস্ব ৪৩৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা অর্থায়নে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে।
Advertisement
আরও পড়ুন >> একনেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ৭ প্রকল্পের অনুমোদন
এসব প্রকল্প ঘেঁটে দেখা যায়, একনেক অনুমোদিত ৫১টি নতুন ও সংশোধিত প্রকল্পের মধ্যে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ১২টি, বিদ্যুৎ বিভাগের পাঁচটি আর বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের গ্রামীণ অর্থনীতি সংক্রান্ত প্রকল্প ১০টি।
গ্রামীণ অর্থনীতি সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের ‘শেখ হাসিনা নকশীপল্লী, জামালপুর (প্রথম পর্যায়)’ প্রকল্প, কৃষি মন্ত্রণালয়ের ‘লেবু জাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ, ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন বৃদ্ধি’ প্রকল্প, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের ‘দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে পুষ্টি সমৃদ্ধ খাদ্যের অপ্রধান শস্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ কর্মসূচি’ প্রকল্প, কৃষি মন্ত্রণালয়ের ‘আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে উন্নতমানের ধান, গম ও পাট বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ’ প্রকল্প, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘পিপিআর রোগ নির্মূল ও ক্ষুরারোগ নিয়ন্ত্রণ’ প্রকল্প, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের ‘তাঁতিদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে চলতি মূলধন সরবরাহ এবং তাঁতের আধুনিকায়ন’ প্রকল্প, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী ও উলিপুর উপজেলায় ব্রহ্মপুত্র নদের ডানতীর ভাঙনরোধ’ প্রকল্প, কৃষি মন্ত্রণালয়ের ‘কন্দাল ফসল উন্নয়ন’; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ‘উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রাম সড়কে অনুর্ধ্ব ১০০ মিটার সেতু নির্মাণ’ এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলার ঘুঘুমারী থেকে ফুলুয়ার চরঘাট ও রাজিবপুর উপজেলা সদর (মেম্বার পাড়া) থেকে মোহনগঞ্জ বাজার পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন থেকে বাম তীর সংরক্ষণ’ প্রকল্প।
আরও পড়ুন >> একনেকে ২৬৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ছয় প্রকল্প অনুমোদন
Advertisement
ওই ১০ প্রকল্পের মধ্যে নয়টি বাস্তবায়নে সরকার ব্যয় করবে দুই হাজার ৭৬৫ কোটি নয় লাখ ২০ হাজার টাকা। চলতি বছর থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে।
একনেক সভায় এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ রেলওয়ের উন্নয়নে দুটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে একটি সংশোধিত, অন্যটি নতুন প্রকল্প। ওই দুই প্রকল্পে সরকার ব্যয় করবে ১৮ হাজার ১৪৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে দুই হাজার ৬৫৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয় সংশোধিত ৭০টি মিটার গেজ (এমজি) ডিজেল ইলেকট্রিক (ডিই) লোকোমোটিভ সংগ্রহ (প্রথম সংশোধিত, প্রস্তাবিত) এবং ১৬ হাজার ১০৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের আখাউড়া-সিলেট সেকশনের মিটারগেজ রেললাইনকে ডুয়েলগেজ রেললাইনে রূপান্তর’ প্রকল্প।
আরও পড়ুন >> অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি বৈষম্যও বাড়ছে
একনেক সভাপরবর্তী সংবাদকর্মীদের সামনে রেলের এসব প্রকল্পের তথ্য উপস্থাপনের সময় পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানান, দেশে বিদ্যুতের উন্নয়নে বর্তমান সরকার সন্তুষ্ট। সড়কেও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলছে। সড়ক উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণে ব্যয়ও প্রচুর। তাই আগামীতে যাতায়াতের টেকসই মাধ্যম রেলের উন্নয়নের জোর দেয়া হবে।
তিনি আরও জানান, কন্দাল জাতীয় ফসল, অর্থাৎ এ ধরনে কৃষিভিত্তিক প্রকল্পে প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহ রয়েছে। এ ধরনের প্রকল্প বেশি বেশি নেয়ার জন্য তিনি আহ্বান জানিয়েছেন।
পিডি/এমবিআর/এমএআর/এমএস