অ্যাডভোকেট শেখ মো. আবদুল্লাহ। আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক এবং গোপালগঞ্জ আওয়ামী লীগের সভাপতি। টানা তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগ সরকারের গঠিত মন্ত্রিপরিষদে তার ঠাঁই হয়েছে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে। মাত্র তিন মাস ১০ দিন অর্থাৎ ১০০ দিনের মধ্যে কথা ও কাজে দক্ষতার প্রমাণ দিয়ে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছেন তিনি।
Advertisement
আরও পড়ুন >> হজ প্যাকেজে খরচ বাড়েনি বরং কমেছে : ধর্ম প্রতিমন্ত্রী
প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণের পরপরই ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নিজ দফতরে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি দৃঢ়চিত্তে ঘোষণা দেন, আল্লাহর ঘরের মেহমান হজযাত্রীদের ভোগান্তিহীন পবিত্র হজ পালনের সুবিধার্থে তিনি প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। হজ প্রশাসনিক দলের সদস্য হিসেবে তিনি হজে গিয়ে সাধারণ হাজিরা কী ধরনের সমস্যায় পড়েন তা সরেজমিন দেখার অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে পরিকল্পনামাফিক কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে জানান।
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, কোনো হজ এজেন্সির কারণে কোনো হজযাত্রীর চোখে জল এলে সংশ্লিষ্ট হজ এজেন্সির সঙ্গে জড়িতদের চোখ থেকে পানি নয়, রক্ত ঝরাবেন! হজযাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে তথা ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। সঠিকভাবে দায়িত্বপালন না করতে পারলে স্বেচ্ছায় মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেবেন বলেও ঘোষণা দেন।
Advertisement
১০০ দিনের উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমের মধ্যে প্রতিমন্ত্রী চলতি বছরে সরকারি হজ প্যাকেজে বিমানভাড়া ১০ হাজার টাকা হ্রাস, আসন্ন হজে হজযাত্রীদের ইমিগ্রেশন জেদ্দা বিমানবন্দরের পরিবর্তে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সম্পন্নের ব্যবস্থা, মক্কা ও মদিনাতে উন্নতমানের বাড়িভাড়া, ২০১৮ সালের হজে অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন হজ এজেন্সির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে কঠোর হওয়াসহ বিভিন্ন ইতিবাচক কাজ করে ইতোমধ্যে সুনাম অর্জন করেছেন।
এছাড়া তাবলিগ জামাতের দুই গ্রুপের রেষারেষিতে টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হলেও তিনি সুকৌশলে বিরোধ মিটিয়ে সুষ্ঠুভাবে ইজতেমা পালনের ব্যবস্থা করে প্রশংসিত হন।
আরও পড়ুন >> ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর হজ বিষয়ক ৫ প্রস্তাবে সৌদি হজমন্ত্রীর সম্মতি
শেখ মো. আবদুল্লাহর সফলতা
Advertisement
সুষ্ঠুভাবে বিশ্ব ইজতেমা সম্পন্ন : প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণের মাসখানেকের মধ্যে বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন নিয়ে তাবলিগ জামাত দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়ে। পরস্পরবিরোধী অবস্থানের কারণে সুষ্ঠুভাবে বিশ্ব ইজতেমা সম্পন্নে কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হন শেখ মো. আবদুল্লাহ। টানা কয়েকদিন দুপক্ষের সঙ্গে বৈঠকের পর কঠিন ওই পরীক্ষা সহজভাবে উত্তীর্ণ হন তিনি। গত বছর পর্যন্ত তিনদিন বিশ্ব ইজতেমা হলেও দুপক্ষের ‘আবদার’ মেটাতে তিনদিনের বদলে চারদিনে ইজতেমা পালনের ব্যবস্থা করা হয়। বিশ্ব ইজতেমার প্রথম দুদিন অর্থাৎ ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি তাবলিগের মুরুব্বি মাওলানা মো. যুবায়েরের তত্ত্বাবধানে এবং ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি মাওলানা সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত হয়। শেখ মো. আবদুল্লাহর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও মেধার কারণে জটিল অবস্থা থেকে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে এবারের বিশ্ব ইজতেমা সম্পন্ন হয়।
হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া কমনোর উদ্যোগ : গত বছর পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া এক লাখ ৩৮ হাজার ১৯১ টাকা নির্ধারিত ছিল। এ বছর সেটি ১০ হাজার টাকা কমিয়ে এক লাখ ২৮ হাজার ১৯১ টাকা ধার্য করা হয়।
এ প্রসঙ্গে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, হাজিরা আল্লাহর ঘরের মেহমান। তাদের যেন কোনোপ্রকার কষ্ট না হয়, সে ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবসময় খেয়াল ও পরামর্শ দিয়ে থাকেন। হাজিদের কথা ভেবেই বিমান ভাড়া কমানো হয়।
সৌদিতে বাড়লেও হজ প্যাকেজে বাড়েনি খরচ : বাংলাদেশ থেকে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে এবার মোট এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের বেশি হজযাত্রী সৌদি যাবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় সাত হাজার ১৯৮ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এক লাখ ১৭ হাজার জনের পবিত্র হজ পালনের কথা।
সৌদি সরকার এ বছর বিভিন্ন খাতে যেমন- সার্ভিস চার্জ বৃদ্ধি, অতিরিক্ত করারোপ এবং পরিবহন ব্যয় গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি বৃদ্ধি করেছে। সব মিলিয়ে ২৫ হাজার টাকার খরচ বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু সে তুলনায় এ বছর ঘোষিত হজ প্যাকেজে ব্যয় সেভাবে বাড়েনি।
এবারের হজ পালনে সরকারি প্যাকেজ-১ এ চার লাখ ১৮ হাজার ৫০০ টাকা এবং প্যাকেজ-২ এ তিন লাখ ৪৪ হাজার টাকা ঘোষণা করা হয়।
গত হজের তুলনায় প্যাকেজ-১ এ খরচ বেড়েছে ২০ হাজার ৫৭১ টাকা ও প্যাকেজ-২ এ বেড়েছে ১২ হাজার ৬৪১ টাকা। গত হজ প্যাকেজ-১ এর মাধ্যমে হজ পালনে খরচ হয় তিন লাখ ৯৭ হাজার ৯২৯ টাকা। অন্যদিকে প্যাকেজ-২ এর মাধ্যমে খরচ হয় তিন লাখ ৩১ হাজার ৩৫৯ টাকা।
সাদা চোখে খরচ বেড়েছে মনে হলেও সৌদি সরকারের বিভিন্ন খাতে ২৫ হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ বৃদ্ধির বিবেচনায় খরচ তেমন বাড়েনি বরং কমেছে বলে মন্তব্য করেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী।
জেদ্দার বদলে শাহজালালে ইমিগ্রেশন : আসন্ন হজে বাংলাদেশি হজযাত্রীদের সৌদি আরবের জেদ্দা বিমানবন্দরের পরিবর্তে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেই ইমিগ্রেশন-সংক্রান্ত সার্বিক কার্যক্রম সম্পন্ন হবে। বর্তমান সরকারের আমলে সর্বমহলে প্রশংসিত কাজের একটি এটি। প্রতিমন্ত্রী হিসেবে এ কৃতিত্ব শেখ মো. আবদুল্লাহর।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত সৌদি আরব সফরকালে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ সৌদি হজ ও ওমরা বিষয়ক মন্ত্রীকে বাংলাদেশের হজযাত্রীদের ইমিগ্রেশন কার্যক্রম বাংলাদেশে সম্পন্ন করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশেষ অনুরোধ জানান। তার অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে দুই দফায় সৌদি আরবের টেকনিক্যাল ও উচ্চ পর্যায়ের দুটি প্রতিনিধি দল সরেজমিন বাংলাদেশ সফর করে।
সৌদি আরবের ডিরেক্টর জেনারেল (পাসপোর্ট) মেজর জেনারেল সোলাইমান আব্দুল আজিজ ইয়াহর নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের প্রতিনিধি দল গত ১১ এপ্রিল সন্ধ্যায় রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে তাদের সম্মতির কথা জানান।
আরও পড়ুন >> তাবলিগ জামাত বিশ্বে একটা বড় ডিসিপ্লিনের উদাহরণ
যে প্রক্রিয়ায় শাহজালালে ইমিগ্রেশন : চলতি বছর পবিত্র হজ পালনে বাংলাদেশ থেকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় সাত হাজার ১৯৮ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এক লাখ ২০ হাজারসহ মোট এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজে যাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। মোট হজযাত্রীর শতকরা ৫০ ভাগ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও অবশিষ্ট ৫০ ভাগ সৌদি এয়ারলাইন্স পরিবহন করবে।
প্রচলিত রীতি অনুসারে, বাংলাদেশ বিমানের যাত্রীরা আশকোনা হজক্যাম্পে ও সৌদি এয়ারলাইন্সের যাত্রীরা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশ অংশের ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করেন। আসন্ন হজেও একই নিয়মে তারা আশকোনা হজক্যাম্প ও শাহজালালে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করবেন।
এরপর উভয় বিমানের হজযাত্রীদের শাহজালাল বিমানবন্দরের একটি এক্সক্লুসিভ জোনে নেয়া হবে। সেখানে তাদের সৌদি আরবের জেদ্দায় যে ইমিগ্রেশনের কাজ হতো সেই কাজটি (ফিঙ্গার প্রিন্ট সংগ্রহ ও মিলিয়ে দেখা) ওই এক্সক্লুসিভ জোনে সম্পন্ন হবে অর্থাৎ সৌদি আরব অংশের ইমিগ্রেশনের কাজ ওইখানে সম্পন্ন করে হজযাত্রীরা স্ব স্ব বিমানে আরোহণ করে যাত্রা করবেন। এক্সক্লুসিভ জোনের সব কার্যক্রম থাকবে সৌদি আরবের টেকনিক্যাল দলের হাতে। ফলে বাংলাদেশি হজযাত্রীদের জেদ্দা বিমানবন্দরে ৬-৭ ঘণ্টা অপেক্ষা করার বিড়ম্বনা লাঘব হবে।
জানা গেছে, শাহজালাল বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নে হজ-ভিসার জন্য দূতাবাসে পাসপোর্ট জমা দেয়ার আগেই দেশের আট বিভাগের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রত্যেক হজযাত্রীর ১০ আঙুলের হাতের ছাপ সংগ্রহ করা হবে। ফলে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সৌদি কর্তৃপক্ষের ইমিগ্রেশন কাজ সহজ হবে।
এজেন্সিপ্রতি ন্যূনতম ১০০ হজযাত্রী পাঠানোর অনুমতি : ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আবদুল্লাহ সৌদি সফরকালে বেসরকারি হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) দাবি রক্ষায় চলতি বছর এজেন্সিপ্রতি ন্যূনতম ১৫০ হজযাত্রী পাঠানোর বাধ্যবাধকতার বিষয়টি শিথিল করে ১০০ হজযাত্রী পাঠানোর অনুমতি প্রদানের জন্য অনুরোধ জানায়। সৌদি সরকার এটি মেনে নেয়।
এমইউ/এমএআর/এমএস