কারওয়ান বাজার-সংলগ্ন বিজিএমইএ ভবনের সামনে উৎসুক মানুষের জটলা। আছে রাজউকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রট, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্যরা। এই ভিড় ঠেলেই বিজিএমইএ ভবনের ভেতর থেকে মূল ফটক দিয়ে ট্রাক, পিকআপ, ভ্যানগাড়িতে করে বিভিন্ন অফিসের মালামাল দ্রুত অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।
Advertisement
রাজধানীর হাতিরঝিল লেকে অবৈধভাবে নির্মিত বহুতল বিজিএমইএ ভবন ভাঙার কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হচ্ছে আজই। ভবনের গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, টেলিফোন লাইনসহ সব ইউটিলিটি সার্ভিস সংযোগ বিচ্ছিন্নের মাধ্যমে এ কাজ শুরু করবে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।
তবে বিজিএমইএ ভবনে যেসব অফিস বা প্রতিষ্ঠান ভাড়া নিয়ে অথবা ক্রয় করে অফিস পরিচালনা করছিল তাদেরকে আগে থেকে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কিছুই জানায়নি বলে অভিযোগ করেছেন কেউ কেউ। বিজিএমইএ ভবনে ব্যাংকসহ এমন অনেক অফিস রয়েছে। ক্লিপটন গ্রুপ, স্কাইলান মোটরসের অফিসও ছিল এই ভবনে। এই প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তা রিকভারি অফিসার বারাকাত হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভবন ভাঙা হবে এমন কোনো নোটিশ বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ আমাদের আগে দেয়নি। আমরা এই ভবনে ফ্লোর কিনে অফিস পরিচালনা করে আসছি। হঠাৎ ভবন ভাঙতে এসেছে রাজউক। আমরা আগে থেকে প্রস্তুত ছিলাম না। তবে বাধ্য হয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আমরা মালামাল সরিয়ে নিচ্ছি। ট্রাকসহ শ্রমিকরা এসেছে। আমাদের মতো অন্য অফিসগুলোও তাদের মালামাল সরিয়ে নিতে কাজ করছে।’
আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজউক পরিচালক (প্রশাসন) খন্দকার অলিউর রহমান উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাজধানীর হাতিরঝিল লেকে অবৈধভাবে নির্মিত বহুতল বিজিএমইএ ভবন ভাঙার কাজে সার্বিকভাবে প্রস্তুত আছি। ভবন ভাঙার জন্য আমাদের বুলডোজারসহ অন্যান্য গাড়ি সামনে প্রস্তুত রয়েছে। এই ভবনে ব্যাংকসহ অন্যান্য অফিস আছে। ব্যাংকের ভল্টে টাকাসহ অফিসের অন্য মালামাল তারা (বিভিন্ন অফিস সংশ্লিষ্টরা) সরিয়ে নেয়ার কাজ করছে। আমাদের কাছ থেকে তারা সময় চেয়ে নিয়েছে। আমরা তাদের মালামাল সরিয়ে নেয়ার জন্য সময় এবং সুযোগ দিয়েছি।’
Advertisement
তিনি বলেন, ‘এটি ১৫ তলা বিল্ডিং, অনেক অফিস আছে এখানে। তারা তাদের মালামাল সরিয়ে নেবে এরপর আমরা ভাঙার কাজ শুরু করতে পারব। বর্তমানে আমরা এসব প্রাথমিক কাজগুলো করছি।’
এর আগে সকাল ৯টা থেকে বিজিএমইএ ভবনের সামনে রাজউক কর্মকর্তারাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্যরা অবস্থান নেন। পাশাপাশি ভবন ভাঙার গাড়ি প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
আমরা বসে নেই জানিয়ে খন্দকার অলিউর রহমান বলেন, ‘ভবন ভাঙার প্রাথমিক কাজ আমরা করছি। সব অপসারণের পর আমাদের কার্যক্রম শুরু হবে-এটা ১০ ঘণ্টা লাগতে পারে আবার একদিনও লাগতে পারে।’
এটা তো পূর্ব নির্ধারিত ছিল তাহলে আজ কেন অপসারণ করা হচ্ছে-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মহামান্য হাইকোর্ট ১২ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দিয়েছিলেন। মাঝখানে কয়েকদিন বন্ধ ছিল। এরপর কর্মদিবস শুরু হয়েছে আমরাও আমাদের কাজ শুরু করেছি।’
Advertisement
অবশেষে রাজধানীর হাতিরঝিল লেকে অবৈধভাবে নির্মিত বহুতল বিজিএমইএ ভবন ভাঙার কাজ আজই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হচ্ছে। ভবনের গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, টেলিফোন লাইনসহ সব ইউটিলিটি সার্ভিস সংযোগ বিচ্ছিন্নের মাধ্যমে এ কাজ শুরু করবে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।
সর্বশেষ ১২ এপ্রিলের মধ্যে ভবনটি সরিয়ে নিতে সময় দিয়েছিলেন আদালত। নির্দিষ্ট সময় পার হওয়ার পর আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে নামছে রাজউক।
‘বিজিএমইএ ভবন’ অপসারণে আপিল বিভাগের দেয়া এক বছর সময় শেষ হয়েছে গত ১২ এপ্রিল। গত বছরের ২ এপ্রিল সর্বোচ্চ আদালত ভবনটি অপসারণে তৈরি পোশাক ও রফতানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএকে ১ বছর ১০ দিন সময় দেন।
এএস/এসআর/পিআর