বিনোদন

সংকটে আইয়ুব বাচ্চুর এলআরবি, যা বললেন সদস্যরা

উপমহাদেশের বিখ্যাত গিটারিস্ট আইয়ুব বাচ্চুর হাত ধরে সৃষ্টি হওয়া লাভ রানস ব্লাইন্ড বা এলআরবি এক এক করে পার করেছে ২৮টি বছর। কিন্তু গত বছরের ১৮ অক্টোবর না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন এর ভোকাল ও প্রতিষ্ঠাতা আইয়ুব বাচ্চু। তার মৃত্যুতে ব্যান্ডটিতে নানা রকম সংকট দেখা দেয়। থমকে যায় এলআরবি’র পথচলা। অনিশ্চিত হয়ে পড়ে এর ভবিষ্যৎ।

Advertisement

কিন্তু ৫ এপ্রিল চমক হিসেবে কণ্ঠশিল্পী বালামের নাম ঘোষণা করা হয় দলটির ভোকাল হিসেবে। তা নিয়ে অনেক আলোচনা ও সমালোচনা হয়েছে। এবার বালাম যোগদানের ১০ দিনের মাথায় বদলে গেল আইয়ুব বাচ্চুর সেই বিখ্যাত ‘এলআরবি’র নাম! বর্তমানের সদস্যরা এখন থেকে ‘বালাম অ্যান্ড দ্য লিগেসি’ ব্যান্ডের সদস্য হিসেবে পরিচিত হবেন।

কেন বদলে গেল এলআরবির নাম? কোন যোগ্যতায় বালাম এই ব্যান্ডের হাল ধরলেন? এমন নানা প্রশ্ন ঘুরে বেড়াচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়াতে। এসব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এলআরবির সদস্যরা। সবার পক্ষ থেকেই জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেন ব্যান্ডটির ম্যানেজার শামীম। লাভ রানস ব্লাইন্ড তথা এলআরবি থেকে ‘বালাম অ্যান্ড দ্য লিগেসি’ এই নাম বদলের পেছনে আইয়ুব বাচ্চুর পরিবারের ইচ্ছাই প্রাধান্য পেয়েছে। আইয়ুব বাচ্চুর পরিবার চাই না এই নামে অন্যরার ব্যান্ডটির ধারাবাহিকতা বজায় রাখুক।

এই বিষয়ে শামীম বলেন,‘ আইয়ুব বাচ্চু ভাইয়ের পরিবার চাচ্ছে না যে আমরা এলআরবি কন্টিনিউ করি। কেন চাচ্ছে না ? এটা ওদের ব্যপার। নামটা ছাড়া আমরা আর কিছুই পরিত্যাগ করছি না। বাচ্চু ভাইয়ের প্রতি আমাদের যে ভালোবাসা সেটা তো কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। আমরা যেই নামেই ব্যান্ড করি না কেন আমাদের লক্ষ্য একই থাকবে।

Advertisement

তারা যদি বলে, আপনারা আইয়ুব বাচ্চুর গান ব্যবহার করতে পারবেন না সেক্ষেত্রে তখন দেখা যাবে। সেটা উনারা এখনো বলেননি। লিগ্যাল ফর্মালিটির জন্য নামটা আমরা ব্যবহার করতে পারছি না। এইটুকু ছাড়া আর কোনো কিছুই পরির্তন হয়নি।’

এলআরবির রেজিষ্ট্রেশন কী ব্যান্ডের সব সদস্যের নামেই ছিল, নাকি শুধুই আইয়ুব বাচ্চুর নামে? এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে শামীম বলেন, ‘ব্যান্ডদল হিসেবে আসলে রেজিস্ট্রেশন হয় না। যখন কোনো কিছু রেজিস্ট্রেশন করা হয় তখন ওনার, পার্টনারশিপ, লিমিটেড এমন হয়। যাই হোক ব্যান্ডের শুরুর সময় এগুলো বিষয় নিয়ে তো কেউ চিন্তা করেনি। আমরাও চিন্তা করিনি।

বাচ্চু ভাই নিজেও ওই ভাবে ভাবেননি হয় তো। রেজিষ্ট্রেশন করার দরকার রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে। উত্তরাধিকার হিসেবে এটা তার ছেলে মেয়েরাই পাবেন। এটা আইনি প্রক্রিয়া। তবে আমরা চাই না এই বিষয়টি নিয়ে কাদা ছুড়া-ছুড়ি হোক। এই বিষয়টা নিয়ে আইনি প্রক্রিয়ায় গেলে ভালো লাগার মতো হবে না বিষয়টা। আমরা চাই না বস (আইয়ুব বাচ্চু) কষ্ট পাক। বাচ্চু ভাইয়ের পরিবার থেকে আমাদের এল আরবি না ব্যাবহার করতে নিষেধ করা হয়েছে তাই আমরা করছি। নামে যেটাই হোক বাচ্চু ভাইয়ের প্রতি আমাদের ভালোবাসা সেই আগের মতোই থাকবে।’

শামীম আরও বলেন, ‘আমরা বায়োলজিক্যালি আইয়ুব বাচ্চু ভাইয়ের উত্তরাধিকার না। কিন্তু আমরা তার চেয়ে কম কিছুই না। কেউ ৩৪ বছর, কেউ ২৬ বছর কেউ ১৬ বছর আমরা তার সঙ্গে কাটিয়েছি। আমাদের ব্যান্ডের নামটা কেড়ে নিচ্ছে, আমাদের দুঃখের শেষ নেই। আমরা থমকে যাচ্ছি কিন্তু থেকে যাচ্ছি না। নাম পরিবর্তন করেই আমরা দর্শকের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার চেষ্টা করছি। দর্শক যদি আমাদের গ্রহন না করে তখন আমরা অন্য কিছু চিন্তা করবো।

Advertisement

বাচ্চু ভাইয়ের পরিবার যদি বলেন, আমরা গানও গাইতে পারবে না। সেক্ষেত্রে আমরা কেন, কেউই তো গাইতে পারবে না। তখন তো আর কিছু করার থাকবে না। সেটা তাদের একান্ত ব্যাক্তিগত ইচ্ছা। আমরা চাই বাচ্চু ভাই বেঁচে থাকুক তার সৃষ্টি কর্মে। তার জন্য যা করা লাগে আমরা করবো।’

এলআরবি ব্যান্ডের ভোকাল হিসেবে বালামের নাম ঘোষণা হওয়ার পরেও অনেক সমালোচনা হয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন বালাম কেন ভোকাল হলেন ? এই বিষয়টি নিয়ে শামীম বলেন, ‘পৃথিবীতে কেউ কখনো কারো পরিপূরক হতে পারে না। অন্য কাউকে নিয়ে ব্যান্ড করতে হবে এটা আমরা কোনদিনও ভাবিনি। তার মতো কেউ হবে না, আর আমরা চাই না যে কেউ আইয়ুব বাচ্চুকে কপি করার চেষ্টা করুক।

কারণ কপি ভয়েস দিয়ে বেশি দূর যাওয়া সম্ভব না। আমরাদেরও অনেকে বলেছে, বাচ্চু ভাইয়ের মতো ভয়েস এমন কাউকে নেন। আমি বলেছি, কপি দিয়ে তো আগানো সম্ভব না। আমরা চাই সঠিক লোকের কণ্ঠে গানগুলো উঠুক। আমাদের এলএরবি ব্যান্ডের যে বেড়ে ওঠা তার সঙ্গে প্রত্যেকের ম্যানারিজমও ম্যাটার করে। বাচ্চু ভাই খুব সুন্দর ভাবে, ডিসিপ্লিনের মধ্যে রেখেছিলেন ব্যান্ডটিকে। আমরা সেটাই চাই। সব মিলিয়ে আমাদের বালাম ভাইকে সেরকম মনে হয়েছে। সে একজন আপাদ-মস্তক মিউজিসিয়ান। একজন ভালো গায়কও বটে। একজন কম্পোজার। আর একজন পরিস্কার সাদা মনের মানুষ তিনি। সেই জন্যই তাকে নেওয়া।’

দুঃখ প্রকাশ করে শামীম বলেন, ‘আর আমরা মনে প্রাণে চাই এলআরবি এই নামেই থাকুক, কিন্তু সিচুয়েশনে পড়ে নামটা পরিবর্তন করতে হলো। বাচ্চু ভাই চলে যাওয়া ছয় মাস হয়ে গেছে। কেউ কি খোঁজ নিয়েছে আমাদের। কেউ কি ভেবেছে এলআরবির অন্য সদস্যদের দিন কীভাবে যাচ্ছে? আমরা তো মিউজিক ছাড়া আর কিছু করি না। আমাদের ছেলে মেয়ে পরিবার আছে। কিভাবে আমাদের পরিবার চলছে কেউ কী ভেবেছে!

শুধু তিন জন মানুষ খোঁজ নিয়েছেন। পার্থ দা ( পার্থ বড়ুয়া) পাশে ছিলেন সব সময়। বালাম ভাই সব সময় পাশে ছিলেন আমাদের সযোগীতা করেছেন। মাকসুদ ভাইও খোঁজ নিয়েছেন। আর কেউ বোঝেই নাই যাকে নিয়ে আমাদের সব ছিল তিনি আমাদের মাঝে নেই। আমরা কীভাবে চলবো? আমরা এলআরবির সব সদস্যরা এক সঙ্গে আছি। দর্শকরা আমাদের পাশে থাকলেই আমরা বাচ্চু ভাইয়ের ভালোবাসা বিলিয়ে যাবো।’

‘বালাম অ্যান্ড দ্য লিগেসি’র বর্তমান লাইন আপ-শামীম-ব্যান্ড ম্যানেজার, ভোকাল-বালাম, মাসুদ-গিটার, স্বপন-বেস আর রোমেল-ড্রামস।

এমএবি/পিআর