অর্থনীতি

দরপতন থামছে না শেয়ারবাজারে

দেশের শেয়ারবাজারে দরপতন থামছে না। আগের সপ্তাহে টানা চার কার্যদিবস বড় দরপতনের পর, চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস সোমবারও প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সবকটি মূল্যসূচকের পতন হয়েছে। এর মাধ্যমে পতন দিয়ে নতুন বাংলা বছর শুরু করলো শেয়ারবাজার।

Advertisement

মূল্য সূচকের পতনের পাশাপাশি দেখা দিয়েছে লেনদেন খরা। ডিএসইর লেনদেনের পরিমাণ আটকে গেছে দু’শ কোটি টাকার ঘরে। সোমবারও বাজারটিতে লেনদেনের পরিমাণ দু’শ কোটি টাকার ঘরে থাকার মাধ্যমে, টানা তিন কার্যদিবস লেনদেনের পরিমাণ তিনশ কোটি টাকার ঘর স্পর্শ করতে পারলো না। আর এক মাসের বা ১৯ কার্যদিবসের মধ্যে ডিএসইর লেনদেন পাঁচশ কোটি টাকার ঘর স্পর্শ করতে পারেনি।

শেয়ারবাজারের এমন দুরবস্থার কারণে একটু একটু করে পুঁজি হারাচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ও চরম আস্থাহীনতা দেখা দিয়েছে। পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) দফায় দফায় বাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করলেও দরপতন ঠেকানো যাচ্ছে না।

টানা দরপতনের কারণে গত সপ্তাহজুড়েই ব্রোকারেজ হাউজ ছেড়ে ডিএসইর সামনে বিক্ষোভ করেছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভের মুখে গত মঙ্গলবার দফায় দফায় বৈঠকে বসে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা। বৈঠকের মাধ্যমে দরপতন ও তারল্য সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসতে ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকের পক্ষ থেকে বিএসইসির কাছে বেশ কিছু দাবি জানানো হয়।

Advertisement

বিএসইসির পক্ষ থেকে ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংক প্রতিনিধিদের কিছু দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়। তারপরও দরপতনের মধ্যেই আবদ্ধ থাকে শেয়ারবাজার। এমন পরিস্থিতিতে বুধবার (১০ এপ্রিল) সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিএসইসির চেয়ারম্যান দেখা করেন।

এ সময় শেয়ারবাজারের বর্তমান মন্দাবস্থা দূর করতে করণীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য, বিএসইসি চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। একইসঙ্গে বাজারের স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনতে অর্থ মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও বাংলাদেশ ব্যাংককে পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেন।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিএসইর চেয়ারম্যানের সাক্ষাতের সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) বাজার কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী হয়। তবে লেনদেন দু’শ কোটির ঘরেই আবদ্ধ থাকে। এরপর পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে সরকারি ছুটি থাকায় রোববার শেয়ারবাজারে লেনদেন হয়নি। সে হিসাবে আজই চলতি সপ্তাহের এবং বাংলা নতুন বছরের প্রথম কার্যদিবস।

গত বছরের শেষ কার্যদিবসে ঊর্ধ্বমুখী হলেও নতুন বছরের শুরুতে তা অব্যাহত থাকেনি। সোমবার দুই বাজারেই লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দরপতন হয়েছে। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ১০৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখায়। বিপরীতে দাম কমেছে ১৯৩টির। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৪১টির দাম।

Advertisement

বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমায় ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স আগের কার্যদিবসের তুলনায় ১৬ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৩০৯ পয়েন্টে নেমে গেছে। অপর দুটি সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ আগের দিনের তুলনায় ১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯০১ পয়েন্টে এবং ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৪ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ২২৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

মূল্য সূচকের এ পতনের দিনে ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। তবে লেনদেনের পরিমাণ তিনশ কোটি টাকার ঘরে পৌঁছাতে পারেনি। দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ২৯৬ কোটি ২ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ২৮৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা। সে হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে ১১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।

টাকার অঙ্কে এ দিন ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ফরচুন সুজের শেয়ার। কোম্পানিটির ৩৩ কোটি ৯১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর পরেই রয়েছে মুন্নু সিরামিক। কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২২ কোটি ২৯ লাখ টাকার। ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের পরেই রয়েছে বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবলস।

লেনদেনে এরপর রয়েছে- ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল, এস্কয়ার নিট, লিবরা ইনফিউশন, গ্রামীণফোন, মুন্নু জুট স্টাফলার্স এবং ইস্টার্ণ কেবলস।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্য সূচক সিএসসিএক্স ১৪ পয়েন্ট কমে ৯ হাজার ৮৫৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৯ কোটি ৯ লাখ টাকা। লেনদেন হওয়া ২১৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭৯টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১০৮টির। আর দাম অপরিবর্তিত রয়েছে ৩২টির।

এমএএস/এমএসএইচ/পিআর