প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে পরিচিত ছাতিম গাছ। শহরে এ ফুলের গাছ চোখে পড়ে কম। গ্রামে আগে দেখা গেলেও এখন কমে গেছে। অঞ্চলভেদে একে ছাতিয়ান, ছাইত্যানসহ বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। এ গাছকে ঘিরে অনেক মিথও রয়েছে। এ গাছে নাকি ভূত থাকে। পশ্চিমা বিশ্বেও ছাতিমের বদনাম আছে। তাই ইংরেজিতে ডাকা হয় ‘ডেভিলস ট্রি’। বিস্তারিত জানাচ্ছেন মঞ্জুর মোর্শেদ রুমন-
Advertisement
পরিচয়: ছাতিমের বৈজ্ঞানিক নাম Millingtonia hortensis। এটি Apocynaceae গোত্রের অন্তর্গত Alstonia প্রকারের গাছ। আর্দ্র, কর্দমাক্ত, জলসিক্ত স্থানে ছাতিম ভালো জন্মে।
জন্মস্থান: ভারত উপমহাদেশ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, অস্ট্রেলিয়ায় প্রচুর জন্মে। ভারত উপমহাদেশের বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, পাকিস্তানে এ গাছ দেখা যায়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কম্বোডিয়া, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, চীনের গুয়াংজি, ইউনান প্রদেশ এবং অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডে প্রচুর জন্মে।
বৈশিষ্ট্য: এ গাছ ৪০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। গাছটি বহু শাখা বিশিষ্ট। এর ছাল গন্ধহীন, অসমতল ও ধুসর। কাঠের রং সাদা। এর কাঠ বেশ নরম। এর শাখা পত্রমূলাবর্ত বিশিষ্ট। একই মূলাবর্তে ৪-৭টা পর্যন্ত পাতা থাকে। পাতাগুলো ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। চওড়া হয় ২-৪ সেন্টিমিটার। ছাতিম পাতা চামড়ার মতো পুরু। এর বোঁটা ০.২৫-০.৬০ সেন্টিমিটার হয়। ছাতিমের বীজ লম্বাটে ডিম্বাকার, কিনারায় আঁশ থাকে আর শেষ প্রান্তে এক গোছা চুল থাকে। ছাতিম গাছের অভ্যন্তরে দুধের মতন সাদা এবং অত্যন্ত তেতো কষ প্রচুর থাকে।
Advertisement
ওষুধি গুণ: ছাতিমের কষ অনেকে ওষুধরূপে ঘা বা ক্ষতে লাগিয়ে থাকেন। ছাতিম গাছের বাকল বা ছাল শুকিয়ে নিয়ে ওষুধের কাজে ব্যবহার করা হয়। দীর্ঘস্থায়ী অতিসার এবং আমাশয়ে এটি অত্যন্ত উপকরী। জ্বর ধীরে ধীরে নামায় বলে ম্যালেরিয়াতেও উপকারী।
আসবাব তৈরি: ছাতিমের কাঠ দিয়ে খুব সাধারণ মানের আসবাবপত্র, প্যাকিং কেস, চায়ের পেটি, পেনসিল এবং দেশলাইয়ের কাঠি তৈরি হয়। একসময় ছাতিমের কাঠ দিয়ে শিশুদের লেখার জন্য তক্তা বানানো হত। ছাতিমের হালকা কাঠ দিয়ে শ্রীলংকায় কফিন বানানো হয়।
মিথ: রাত একটু গভীর হলে মনে হয় যেন কোন এক দানব জবুথবু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাই এ গাছকে ঘিরে অনেক মিথও রয়েছে। এ গাছে নাকি ভূত থাকে। পশ্চিমা বিশ্বেও ছাতিমের বদনাম আছে। তাই ইংরেজিতে ডাকা হয় ‘ডেভিলস ট্রি’।
এসইউ/পিআর
Advertisement