আন্তর্জাতিক

ভোটার টানতে যে দ্রাবিড়কে ব্যবহার, তিনিই ভোট দিতে পারবেন না

ভারতের জাতীয় ক্রিকেট দলের (টেস্ট ও একদিনের আন্তর্জাতিক) সাবেক অধিনায়ক রাহুল দ্রাবিড় দেশটির লোকসভা নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন না।

Advertisement

দ্রাবিড়ের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেয়ার জন্য ৭ নম্বর ফর্ম জমা দিয়েছিলেন তার ভাই বিজয় দ্রাবিড়। কিন্তু নতুন করে আর নাম তোলার জন্য ৬ নম্বর ফর্ম জমা দেননি সাবেক এই অধিনায়ক।

কর্নাটকের অলিতে গলিতে এখন রাহুল দ্রাবিড়ের পোস্টার। ক্রিকেটের কৃতিত্বে নয়, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) উদ্যোগে। ভোটারদের আরও বেশি করে বুথমুখী করতে ইসির প্রচারের মুখ সাবেক এই ক্রিকেট অধিনায়ক। তিনিই কমিশনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর। তার ছবি, ভিডিও ব্যবহার করেই বুথে গিয়ে ভোট দেয়ার জন্য আর্জি জানাচ্ছে কমিশন। অথচ, সেই দ্রাবিড়ই নিজে ভোট দিতে পারবেন না!

আজব মনে হলেও এটাই সত্য। কারণ, ভোটার তালিকা থেকে কাটা পড়েছে রাহুল দ্রাবিড়ের নাম। পরে আর তালিকায় নামও ওঠেনি। কমিশন দায় ঠেলেছে দ্রাবিড়ের ঘাড়েই। তাদের বক্তব্য, নতুন করে নাম লেখানোর জন্য অনূর্ধ্ব ১৯ ক্রিকেট দলের কোচ দ্রাবিড়ের বাড়িতেও একাধিকবার গিয়েছেন দফতরের কর্মীরা। কিন্তু তারপরও বিফল হয়েছেন তার নাম তুলতে।

Advertisement

কমিশন সূত্র জানায়, রাহুল দ্রাবিড় আগে থাকতেন বেঙ্গালুরুর ইন্দিরানগরে, পৈত্রিক বাড়িতে। সেটা ব্যাঙ্গালোর সেন্ট্রাল লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে। কিন্তু সেখান থেকে বর্তমানে তিনি মালেশ্বরম এলাকায় নতুন বাড়িতে চলে গেছেন। এই স্থানান্তরের কিছুদিন পর তার নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেয়ার জন্য সাত নম্বর ফর্ম জমা দিয়েছিলেন তার ভাই বিজয় দ্রাবিড়। কমিশনও খতিয়ে দেখে রাহুল দ্রাবিড়ের নাম কেটে দেয় ভোটার তালিকা থেকে।

কিন্তু বিপত্তি বাধে দ্রাবিড়কে কমিশন ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর করার পর। সব সিদ্ধান্ত হয়ে যাওয়ার পর দেখা যায়, দ্রাবিড়ের নামই নেই ভোটার তালিকায়। তার পরই ঘুম উড়ে যায় কমিশনের কর্মী-অফিসারদের। দ্রাবিড়ের নতুন ঠিকানা ব্যাঙ্গালোর নর্থ কেন্দ্রের অন্তর্ভুক্ত। মাথিকেড়ে মহকুমার মধ্যে পড়ে।

সেখানকার মহকুমা শাসক তথা সহকারী রিটার্নিং অফিসারের দফতরের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারা দ্রাবিড়ের নাম তোলার জন্য তার নতুন ঠিকানায় অন্তত দু’বার গিয়েছেন। কিন্তু কমিশনের কর্মীদের বাড়িতে ঢুকতেই দেয়া হয়নি। তাদের বলা হয়, দ্রাবিড় বিদেশে রয়েছেন এবং ভোটার তালিকায় নাম তোলা সম্পর্কিত কোনও তথ্য তাদের কাছে নেই। বাধ্য হয়ে ফিরে আসেন কমিশনের কর্মীরা।

নির্বাচন আইন অনুযায়ী, কেউ ৭ নম্বর ফর্ম জমা দিয়ে ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দিলে, নতুন করে নাম তোলার জন্য ৬ নম্বর ফর্ম জমা দিতে হয়। সেটাও জমা দিতে হয় সংশ্লিষ্ট ভোটারকেই। সেই অনুযায়ী নথিপত্র যাচাই করে ফের ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করেন কমিশন কর্মীরা। কিন্তু দ্রাবিড়ের ক্ষেত্রে সেই ৬ নম্বর ফর্ম জমা পড়েনি। তাই কমিশনও নিরুপায়।

Advertisement

উপায় কী তা হলে আর কিছুই নেই? লোকসভা ভোটের আগে কী আর কোনোভাবেই কর্নাটকে ভোটের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডরের নাম তোলা যাবে না? কমিশনের মতে, সম্ভব নয়। কারণ, ভোটার তালিকা সংশোধনের শেষ তারিখ ছিল ১৬ মার্চ। তারপর লোকসভা ভোটের আগে আর কোনও সংশোধনী হবে না।

অন্যদিকে দ্রাবিড়ের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, বিষয়টি তিনিও জানতে পেরেছেন ১৬ মার্চের পরে। ফলে তখন আর ৬ নম্বর ফর্ম জমা দেয়ারও সুযোগ ছিল না।

কর্নাটকের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক সংবাদ মাধ্যমে জানিয়েছেন, ‘দ্রাবিড় নিজে থেকে তার নাম কেটে দিয়েছেন। কিন্তু পরবর্তীতে নতুন ঠিকানায় আবার নাম তুলতে ভুলে গিয়েছেন। বৈধভাবে আর তার নাম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব নয়। শিগগিরই এ নিয়ে নির্বাচন কমিশন সরকারি বিবৃতি দেবে।’

কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, ভারতীয় এ দলের কোচ হিসেবে তিনি দেশের বাইরে থাকতেই পারেন। পারিবারিক সূত্রে না হোক, সরকারি সূত্রে বা ক্রিকেট বোর্ডের সূত্রেও তার মোবাইল নম্বর জোগাড় করা বা তার সঙ্গে যোগাযোগ করা আজকের দিনে খুব একটা অসম্ভব ছিল না। তার বাড়ি গিয়ে যখন ফিরে আসতে হয়েছে, তখন তার সঙ্গে যোগাযোগ করে নাম তোলার চেষ্টা কি কমিশন কর্তারা করেছিলেন? তাছাড়া ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর করার সময় কি কমিশনের অফিসাররা জানতেনই না যে দ্রাবিড়ের নাম ভোটার তালিকায় নেই? এসব প্রশ্নের উত্তর অবশ্য কমিশন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।

সূত্র : আনন্দবাজার

জেডএ/এমকেএইচ