ক্ষমতায় থাকার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্মাদ হয়ে গেছেন এরকম মন্তব্য করে বিএনপি চেয়াপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, নিজের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার জন্য প্রশাসনকে ব্যবহার করে সব অপকর্ম করিয়েছেন হাসিনা।তিনি বলেন, হাসিনা সব কিছুতেই মদদ দেন। নির্দেশ দিয়ে তিনি সাধু সাজেন। র্যাব ও অন্যান্য এজেন্সি যা করেছে তা হাসিনার নির্দেশেই করেছে। এজন্য ভবিষ্যতে সব অপকর্মের জন্য দায় দায়িত্ব হাসিনাকেই নিতে হবে। আর সাথে তার পরগাছাদেরকেও এই দায়দায়িত্ব নিতে হবে।মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে বিএনপির ৩৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলােচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি এই আলোচনা সভাটির আয়োজন করে।আওয়ামী লীগের শরিক বামদলগুলোকে ইঙ্গিত করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, এই পরগাছাদের জন্য আ.লীগে লোকেরা এখন ভাত পায় না। দীর্ঘদিন ধরে অা.লীগ রাজনীতি করা লোকদের জায়গা হয় না। এই পরগাছারা এত তোষামোদি করে যে বললে শেখ হাসিনার জুতা পর্যন্ত পালিশ করে দেবে।তিনি বলেন, জীবনে কোনদিন এই পরগাছারা এমপি হবে ভাবতে পারেনি। ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেম্বার হওয়ার যোগ্যতা তারা রাখে না। এর আগে তারা নির্বাচনে অংশ নিয়ে বহুবার জামানত হারিয়েছে।বিএনপির উপর এখনো জুলুম নির্যাতন চলছে এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, এখানে আমিসহ যারা উপস্থিত রয়েছেন তাদের প্রত্যেকের নামেই মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা রয়েছে। তারপরও আমরা দল গুছানোর চেষ্টা করছি।দল পুনর্গঠন বিষয়ে খালেদা জিয়া বলেন, যারা দলের জন্য তাগী, অানুগত্য তাদেরকে কমিটিতে ভাল পদ দিতে হবে। দলের প্রতিটি কর্মসূচিতে যারা সাহসের সঙ্গে অংশ নেবে তাদেরকেই নেতৃত্বে আনতে হবে। আর যারা নিষ্ক্রিয় বাদ দেয়া হবে না। তবে পেছনে রাখতে হবে।এসময় তিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা কেউ পকেট কমিটি করার চেষ্টা করবেন না। এতে দলের ক্ষতি হয়। আমি সবাইকে চিনি। যাদেরকে আপনারা অনেকে চিনেন না। বললেই বিশ্বাস করবো তা আর হবে না।খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগের ভাষা এতটাই নোংরা যে তারা যে ভাষায় কথা বলেন তাদের তার জবাব দিতেও লজ্জা করে। সরকারের মিথ্যাচার জনগণ এখন আর বিশ্বাস করে না। যারা বলপূর্বক ক্ষমতায় বসে আছে তারাই বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দিয়েছে।তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, দেশে কি কোনো গণতন্ত্র আছে? আইনের শাসন আছে, মানবাধিকার আছে? গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আছে? নেই। ক্ষমতাসীনরা আন্তর্জাতিক গুম দিবেসের অনুষ্ঠান পালনেও বাধা দেয়। গুম দিবসে প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠানের জন্য সিডিউল নেয়ার পরও ভোক্তভুগী পরিবারদের অনুষ্ঠানটি করতে দেয়নি। এসব কর্মসূচি পালন করতে দিতে এত ভয় কেন? কারণ তারা খুন গুম করেছে। তারা এর জবাব কি দেবে, আন্তর্জাতিক বিশ্বের কাছেই বা কি জবাব দেবে, তাই ভয় পাচ্ছে।দেশ এখন পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে এমন দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, পুলিশের যে অত্যাচার জুলুম, তা অনেক গুন বেড়ে গিয়েছে। পুলিশ তার চরিত্র নষ্ট করে ফেলেছে। এমনকি পুলিশরা বলে আমরাই এই সরকারকে টিকিয়ে রেখেছি।তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্যই আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি। কিন্তু আ.লীগ মুক্তিযোদ্ধের চেতনা থেকে সরে গিয়েছে। তারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়নি। এর চেতনাও বিশ্বাস করে না। বিএনপি রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের দল। মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের দল বিএনপি। বাংলাদেশের জনগণ জিয়াউর রহমানকে বিশ্বাস করায় আহ্বান করার সঙ্গে সঙ্গে তার ডাকে সাড়া দিয়েছে। জিয়া সৎ যোগ্য ও দেশপ্রেমিক হওয়ায় জনগণ তাকে বিশ্বাস করতো।তিনি বলেন, জিয়ার দেশ প্রেম ও সততার জন্য দেশের জনগণ তাকে পছন্দ করতো। তিনি দেশের উন্নয়ণের জন্য বাংলার পথে প্রান্তরে ঘুরে বেরিয়েছেন। মানুষের দু:খ দুর্দশার কথা শোনেছেন। সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছেন। এরকম নজির কম পাওয়া যাবে।বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, দেশের প্রতিটি মানুষ জীবনের নিরাপত্তা চায়। কিন্তু বর্তমানে মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুর কোনো গ্যারান্টি নেই। কেন এই অবস্থা? এ অবস্থার অবসান চাই। এজন্য প্রয়োজন গণতন্ত্র। জবাবদিহিতা না থাকলে এই বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। আমরা আগেও বলেছি আমরা দেশের শান্তি চাই। মানুষের জীবন মানের উন্নয়ন চাই। কিন্তু গণতান্ত্রিক পরিবেশ না থাকলে এগুলো সম্ভব নয়।তিনি বলেন, অন্যায় অপকর্মের কারণে সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদেরকে কোন শাস্তি দেয়া হচ্ছে না। সরকার কি মানুষ পেটানোর জন্য তাদেরকে লাইসেন্স দিয়ে দিয়েছে। ছাত্রলীগ যুবলীগ এখন মানুষ পেটাতে ব্যস্ত। আর বিএনপির লোকদেরকে ধরে ধরে মামলা দিচ্ছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ নিজেদের নামে সব মামলা খালাস করেছেন। এই অবস্থা চলতে থাকলে বাংলাদেশ দিনে দিনে গরীব হয়ে যাবে। অবস্থা আরো খারাপ হবে। দেশ অকার্যকর রাষ্ট্র হিসেবে পৃথিবীতে বেঁচে থাকবে।ভবিষ্যতে প্রতিহিংসার রাজনীতি করবেন না এরকম আশ্বাস দিয়ে বিএনপি প্রধান বলেন, প্রতিহিংসার রাজনীতি নয়, জাতীয় ঐক্যের রাজনীতি শুরু করতে হবে। বিএনপি প্রতিশোধের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। আমরা করবো ঐক্য উন্নয়নের রাজনীতি।দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করে খালেদা জিয়া বলেন, এখন কোনো আইন নিয়ম কানুন নেই। আগে জজরা পেশাকে সন্মান করতেন। কিন্তু বর্তমানে সরকারের সঙ্গে আসা যাওয়া চলছে। অমুক দাওয়াত তমুক দাওয়াতেও অংশ নিচ্ছেন। বিচারপতি পাবলিকলি পলিটিকাল বক্তব্য দিয়েছেন। এটা কত বড় অপরাধ, এগুলো আমরা হতে দিবো না। বিএনপি সত্যিকারের স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠা করবে।শিক্ষার উপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, প্রতিটি ছেলে মেয়েকে শিক্ষিত করতে হবে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিরিক্ত ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। এটা বাদ দেয়ার দাবি জানিয়েছি। ভ্যাট বাস্তবায়ন করতে দেয়া হবে না। শিক্ষার্থীদের পক্ষ নিয়ে আমরা এর প্রতিবাদ করে যাবো।তিনি বলেন, আমরা কৃষিপণ্য আমদানির বিরোধীতা করি না। কিন্তু দেশের কৃষকরা যাতে উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। তাদের বাঁচাতে তাদের কাছে থেকে পণ্য ক্রয় করতে হবে। বিদেশ থেকে আমদানি কমাতে হবে।বিদ্যুৎ গ্যাসের দাম বৃদ্ধির বিরোধীতা করে খালেদা জিয়া বলেন, মূল্য বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর প্রভাব সবকিছুতেই পড়বে। তারা কি তা জানে না? এই দাম বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বাজারে ৫০ টাকার নিচে কোন সবজি পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু হাসিনা কথা দিয়েছিল ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াবে কিন্তু এক দিনের জন্যও তা দেখিনি। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন। কিন্তু এখন ঘরে ঘরে লোডশেডিং থাকে।বাংলাদেশে কোন জঙ্গি নেই দাবি করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন জঙ্গি নাই। জঙ্গিদের অবস্থান বাংলাদেশে হতে দেবো না। সরকার মুখে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে অথচ মুসলমান হলে জঙ্গি বানায়, হিন্দুদের বাড়ি দখল করে, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানদের মন্দিরে হামলা করে। মসজিদে নামাজ পড়তে গেলেও মুসলমানদেরকে নানাভাবে হয়রানি করে। তাহলে ধর্মনিরপেক্ষতা কোথায়? আ. লীগ ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ধর্মের অবমাননা করছে।নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবির কথা পুর্নব্যক্ত করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, দেশে প্রয়োজন গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা। তার জন্য প্রয়োজন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন। নাম যাই হউক নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই নির্বাচন দিতে হবে। দলীয় সরকারের অধীনে কি নির্বাচন হয় তা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আমরা দেখেছি।একই সঙ্গে বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে বাতিল করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করার দাবি জানান তিনি।আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, জমির উদ্দিন সরকার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিএনপির মুখপাত্র ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন।এমএম/এসআইএস/আরআইপি
Advertisement