দেশজুড়ে

সরকারি সেতুতে লোহার গেট

শরীয়তপুর সদর উপজেলার চিতলীয়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের কাশীপুর হিন্দুপাড়া গ্রামে বসবাস করতেন মৃত জগদীশ বিশ্বাস। তার বাড়ির পশ্চিম পাশে রয়েছে খাল। খালের ওপার শরীয়তপুর-মাদারীপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক। ওই গ্রামবাসীর কথা চিন্তা করে সরকারি অর্থ খরচ করে খালের ওপর একটি সেতু তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু সেই সেতুটি মৃত জগদীশ বিশ্বাসের চার ছেলে ব্যবহার করছেন। তারা সেতুটিতে গত ফেব্রুয়ারিতে লোহার গেট করেছেন। যা বেশিরভাগ সময় তালাবদ্ধ থাকে।

Advertisement

এলাকাবাসী ও সেতুটির নেম প্লেট থেকে জানা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের সেতু/কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্প কর্মসূচির আওতায় ৩৮ লাখ ৮৯ হাজার ৭৭৫ টাকা ব্যয়ে সদর উপজেলার চিতলীয়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের কাশীপুর হিন্দুপাড়া গ্রামের জগদীশ বিশ্বাসের বাড়ির সামনে একটি সেতু তৈরি করা হয়। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৫০ ফুট। প্রকল্পটির নাম রাখা হয় ‘কাশীপুর ডাক্তার জগদীশ বিশ্বাসের বাড়ির নিকট খালের ওপর সেতু নির্মাণ’।

শনিবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, কাশীপুর হিন্দুপাড়া গ্রামে বেশিরভাগই হিন্দু ধর্মের পরিবার বসবাস করে। গ্রামটিতে সরকারি অর্থে অন্তত পাঁচটি সেতু তৈরি করা হয়েছে। গ্রামটিতে পল্লী চিকিৎসক মৃত জগদীশ বিশ্বাসের বাড়ি। গ্রামের মানুষের যাতায়াতের জন্য জগদীশের বাড়ির প্রবেশ দ্বারে নির্মাণ করা হয়েছে একটি সেতু। এটির পাশে কোনো রাস্তা নেই। সেতুটির শেষ ভাগে অর্থাৎ জগদীশের বাড়িতে ঢোকার প্রান্তে একটি লোহার গেট রয়েছে। গেটটি সেতুর রেলিংয়ের সঙ্গে জোড়া লাগানো। যাতে করে জগদীশের ওই বাড়িতে বহিরাগত এবং গবাদি পশু ঢুকতে না পারে। জগদীশের চার ছেলের পরিবার ব্যতীত অন্য কেউ যেন সেতুটি ব্যবহার করতে না পারে। তার জন্য সেতুটির ওপর নির্মাণ করা হয়েছে লোহার গেট। তাছাড়া লোহার গেট ঘেঁষে সেতুর ওপর রয়েছে সরকারি অর্থে দেয়া সৌর বিদ্যুতের স্ট্রিট লাইট। যার আনুমানিক মূল্য ৬০ হাজার টাকা।

কোনো বহিরাগত এবং গবাদি পশু যাতে বাড়িতে ঢুকতে না পারে, তাই গেটটি নির্মাণ করা হয়েছে। জগদীশ বিশ্বাসের বাড়ির সেতু দিয়ে অন্য কোনো বাড়িতে যাওয়ার সুযোগ নেই। একক ব্যবহারের জন্যই মনে হয় নির্মাণ করা হয়েছে সেতুটি। অবশ্য সেতুটির ৬০০ গজের মধ্যে আরও দুটি সেতু রয়েছে। যা দিয়ে এলাকার জনসাধারণ যাতায়াত করে।

Advertisement

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জগদীশ বিশ্বাসের ছেলে দুলাল বিশ্বাস শরীয়তপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হকের এপিএসর দায়িত্ব পালন করছেন।

জগদীশ বিশ্বাসের নাতি জয় বিশ্বাস জানান, আমার দাদা জগদীশ বিশ্বাস সাবেক সংসদ সদস্য বিএম মোজাম্মেল হকের পারিবারিক ডাক্তার ছিলেন এবং এমপির বাড়িতে পড়াতেন। এমপি আমার দাদাকে অনেক ভালোবাসতেন। তাই এমপির বিশেষ বরাদ্দ থেকে এই ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে চিতলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম হাওলাদার বলেন, গ্রামবাসীর জন্য জগদীশ বিশ্বাসের বাড়ির সামনে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। চুরি ডাকাতি ঠেকাতে এবং গরু-ছাগল যাতে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য লোহার গেটটি দিয়েছে জগদীশের ছেলেরা।

এ ব্যাপারে শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাহাবুর রহমান শেখ বলেন, সরকারি সেতুর উপর লোহার গেটের কথা শুনে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। জগদীশ বিশ্বাসের ছেলেদের গেটটি সরিয়ে দিতে বলেছি। তিনদিনের মধ্যে গেটটি সরিয়ে না নিলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Advertisement

ছগির হোসেন/আরএআর/এমকেএইচ