ফেনীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়ন ও আগুনে পুড়িয়ে হত্যায় অভিযুক্ত অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা মাদরাসাছাত্রদের বলাৎকার করেছিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে এমন তথ্য দিয়েছেন ফেনীর দৌলতপুরের আবুল বাশার নামের এক ব্যক্তি।
Advertisement
ফেসবুক লাইভে এসে আবুল বাশার বলেছেন, ‘আমার দাদার প্রতিষ্ঠা করা এক মাদরাসার সুপার হিসেবে কর্মরত ছিলেন সিরাজ উদ দৌলা। তখন আমাদের মাদরাসার ছাত্রদের বলাৎকার করেছিলেন সিরাজ। সোনাগাজীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়ন ও আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনা আজ আমাকে ফেসবুক লাইভে আসতে বাধ্য করেছে। আমি ধর্ষক সিরাজ উদ দৌলা সম্পর্কে কিছু তথ্য দিতে চাই।’
আবুল বাশার বলেন, ‘১৯৯৫ সালে আমি বাড়িতে যাই। তখন সিরাজ উদ দৌলা আমার দাদার প্রতিষ্ঠিত দৌলতপুর সালামাতিয়া মাদরাসার সুপার। ছাত্রদের পড়ানোর নাম করে তাদের হোস্টেলে রেখে রাতে বলাৎকার করতেন। একদিন বিকেলে নবম শ্রেণির এক ছাত্র আমাকে জানায় মাদরাসার সুপার সিরাজ উদ দৌলা তাকে বলাৎকার করেছে। আমি এ ঘটনার বিচার দাবি করলে সিরাজ উদ দৌলা আমার পেছনে লাঠিয়াল বাহিনী লাগিয়ে দেয়। আমি লাঠিয়াল বাহিনীকে প্রতিহত করতে পারলেও সুষ্ঠু বিচার করাতে পারিনি। নির্যাতিত ছেলেটি বিচার পায়নি ‘
আবুল বাশার বলেন, ‘বিচার করতে না পারার কারণ সিরাজ উদ দৌলার দোসর, প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও বিএনপি নেতা মাহবুবল হক, বর্তমানে সোনাগাজীর সোনাপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ও বর্তমান দৌলতপুর সালামাতিয়া মাদরাসার সুপার বজলুল করিম ও জেলা শিক্ষা অফিসারের প্রতারণার কারণে সুষ্ঠু বিচার হয়নি। সিরাজ উদ দৌলাকে রক্ষা করেছে এরা।
Advertisement
নিহত নুসরাতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আবুল বাশার আরও বলেন, ‘আমি নুসরাত জাহান রাফির প্রতি কৃতজ্ঞ যে ১৯৯৫ সালে আমি যে বিচার করাতে পারিনি ২০১৯ সালে তুমি সেই বিচারের দাবি ভাইরাল করতে পেরেছ। তুমি দুনিয়া ছেড়ে চলে গেলেও তোমার বিচারের দাবিতে সারাদেশ সোচ্চার। ধর্ষক সিরাজ উদ দৌলার বিচার চাই আমরা ‘
৬ এপ্রিল শনিবার সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায় যান নুসরাত জাহান রাফি। মাদরাসার এক ছাত্রী সহপাঠী নিশাতকে ছাদের উপর কেউ মারধর করেছে এমন সংবাদ দিলে সে ওই বিল্ডিংয়ের তিনতলায় যায়। সেখানে মুখোশপরা চার-পাঁচ ছাত্রী তাকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। সে অস্বীকৃতি জানালে তারা গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। গত বৃহস্পতিবার আগুনে দগ্ধ নুসরাত মারা যান।
এ ঘটনায় সোমবার রাতে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা ও পৌর কাউন্সিলর মাকছুস আলমসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামালা করেন নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান।
এর আগে ২৭ এপ্রিল ওই ছাত্রীকে নিজ কক্ষে নিয়ে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই ঘটনার পর থেকে তিনি কারাগারে। এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন।
Advertisement
এএম/এমএস