জাতীয়

বর্ষবরণের আয়োজনে সাজছে দেশ

নুসরাতের কান্নায় কাঁদছে দেশ। সভ্যতার এমন দিনে পাষাণ্ডতার সব সীমা অতিক্রম হয়েছে মাদরাসার শিক্ষার্থী নুসরাতকে হত্যার বেলায়। রাষ্ট্র, সমাজের পচনে আবারও দাগ কেটেছে এ নির্মমতায়। তবে প্রতিবাদী নুসরাত মরে গিয়ে শিখিয়ে গিয়েছে, আর স্তব্ধতা নয়, এবার আওয়াজ তোলো অন্যায়ের বিরুদ্ধে। এমন আওয়াজ তোলার মধ্য দিয়েই এবারের বর্ষবরণের আয়োজন।

Advertisement

আজ চৈত্রসংক্রান্তি। আগামীকাল বর্ষবরণ। বৈশাখ আসছে বলে আকাশের ঈশান কোণ কৃষ্ণরূপ নিচ্ছে আরও কদিন আগেই। ঝড় হচ্ছে, বৃষ্টি হচ্ছে। শিলা বৃষ্টিও হলো। চৈত্রের দাবদাহ-ই গ্রীষ্মকে হাতছানি দিচ্ছে। বসন্তের উদাস হাওয়া ঝড়োরূপ নিয়ে বৈশাখী হাওয়ায় মিলছে। বৈশাখী হাওয়া গায়ে লেগেছে বর্ষবরণ আয়োজকদের মাঝেও।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ, রমনার বটমূলে ধুম পড়েছে বর্ষবরণের। বিশ্রামের ফুসরত নেই এ পাড়ায়। ব্যস্ত সময় অন্য পাড়াতেও। প্রস্তুতিতেই জানান দিচ্ছে, এই বুঝি এলোরে বৈশাখ।

রাজধানী ঢাকার আকাশ আজ সকাল থেকেই মেঘলা। চৈত্রের যে দাবদাহ তা ঠিক বলা যাবে না। তবে উদাস বাতাসে দুলছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের গাছের পাতারা। দোলা দিচ্ছে শিল্পিমনেও। এ যে বৈশাখী দোলা।

Advertisement

বর্ষবরণের অন্যতম আকর্ষণ মঙ্গল শোভাযাত্রা। এদিন সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে এ শোভাযাত্রা বের হওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। এবার ৩০ বছর পূর্ণ হচ্ছে মঙ্গল শোভাযাত্রার। শোভাযাত্রা বের হয় এখন দেশের অন্যত্রও।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদের ২৬তম ব্যাচর শিক্ষার্থী তানভির। বর্ষবরণের ভাস্কর্য বানানোর কাজে মহাব্যস্ত। বলেন, সময় তো নেই। বৃষ্টি খানিক বাগড়া বাঁধিয়েছে। এ কারণে সবার মধ্যে ব্যস্ততা। আজকের মধ্যেই তো শেষ করতে হবে। তবে মূল কাজ শেষের দিকে। এখন শেষ বেলার রূপায়ন চলছে।

একই ব্যাচের তিশা নামের অপর শিক্ষার্থী বলেন, আনন্দের শেষ নেই। বাঙালি সংস্কৃতি উদযাপনের আয়োজনে কাজ করছি। একেবারে আবেগ থেকে এটা করা। বর্ষবরণের মধ্য দিয়ে সকল অসভ্যতা দূর হোক। সকল নিষ্ঠুরতা নিপাত যাক। আর শিক্ষার্থী নুসরাত প্রতিবাদ করে সে কথাই বুঝিয়ে গেছেন। আমাদের এবারের আয়োজন নুসরাতকে বুকে ধারণ করেই।

রমনার বটমূলেও বর্ষবরণের আয়োজন প্রায় শেষের দিকে। মঞ্চ হয়ে গেছে। আজ সকালে গিয়ে দেখা গেল, একজন নির্দেশনা দিচ্ছেন, আরেকজন মানছেন। হাতুড়ি, করাতের শব্দ আসে চারদিক থেকে।রমনার বটমূলে এখন বিশাল কর্মযজ্ঞ। দম ফেলার সময় নেই আয়োজকদের। মঞ্চ সাজানোর কাজ, দিন থাকলেও ওদের এখন ঘণ্টা গুণে সময় পার হচ্ছে। কাজের শতাংশ গণনা হচ্ছে এখন।

Advertisement

রাজধানীর রমনা পার্কের বটতলায় প্রতি বছরের ন্যয় এবারও ছায়ানটের পক্ষ থেকে বর্ষবরণের আয়োজন চলছে। গ্রামের আবহ এখন শহরেও। বর্ষবরণের মেজাজে এখন রাজধানী। প্রস্তুতি চলছে সবার মাঝেই। পান্তা-ইলিশের সঙ্গে বাঙালিয়ানার নানা আয়োজনে মাতবে মানুষ। মেলা, বাউল আয়োজন আর পোশাকেও ফুটবে বৈশাখী রূপ। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী হালখাতার আয়োজন তো আছেই।

এএসএস/এমএআর/এমকেএইচ