জাতীয়

‘এমন শাস্তি চাই, যা সারাদেশের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে’

ফেনীর সোনাগাজীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যার বিচারের দাবিতে রাজধানীর গণভবন থেকে বঙ্গভবন পর্যন্ত মানববন্ধন হয়েছে।

Advertisement

শনিবার (১৩ এপ্রিল) বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালিত হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, নারী অধিকার সংগঠন এবং বিভিন্ন এনজিওর উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালিত হয়।

রাজধানীর আসাদগেট, কলাবাগান, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, এলিফ্যান্ট রোড, বাটা সিগন্যাল, কাঁটাবন, শাহবাগ, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, হাইকোর্ট, প্রেস ক্লাব, পল্টন মোড়, দৈনিক বাংলা মোড়, রাজউক ভবন এলাকায় মানববন্ধনটি হয়।

বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, ঘাসফড়িং খেলাঘর আসর, ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড আর্কিটেক্টস ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, আনন্দদ্যুতি খেলাঘর আসরসহ বিভিন্ন সংগঠন মানববন্ধনে অংশ নেয়।

Advertisement

আরও পড়ুন >> নুসরাতের হত্যাকারীদের পক্ষে আইনজীবীদের না দাঁড়ানোর আহ্বান

মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীদের প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল- ‘প্রতিটি রাস্তার প্রতিটি মোড়ে ধর্ষকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলো’, ‘জাস্টিস ফর নুসরাত’, ‘এমন শাস্তি চাই, যা সারাদেশের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে’, ‘ধর্ষক সিরাজ উদ দৌলার ফাঁসি নিশ্চিত করতে হবে’, ‘আমরা কি ধর্ষকরাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছি’।

বঙ্গভবন এলাকায় মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। কোনো অপরাধের বিচার না হওয়াই এ হত্যাকাণ্ডের কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘১৬ কোটি মানুষ প্রতিবাদ জারি রেখেছে। অপরাধীরা জানে সরকারি দলে থাকলে কোনো অপরাধের বিচার হয় না। শাসক দলের সঙ্গে জড়িত অপরাধীরা যখন যে দল ক্ষমতায় আসে তাদের ছত্রচ্ছায়ায় অপরাধী কর্মকাণ্ড চালায়। তারা জানে সরকারি দলে থাকলে পার পাওয়া যায়। বর্তমান সরকার নির্বাচনের আগের দিন ভোট দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। যারা এ কাজে সহায়তা করেছে তাদের পুরস্কার হলো অবাধে লুটপাট, হত্যা এবং ধর্ষণ।’

আসাদগেট এলাকায় মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আমরা নুসরাত হত্যার ন্যায়বিচার চাই। এ ঘটনার সঙ্গে যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত, সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। এ ঘটনার কঠোর শাস্তি দেয়া সরকারের জন্য একটি অগ্নিপরীক্ষা। নুসরাত হত্যার কঠোর শাস্তি দিয়ে সরকারকে প্রমাণ করতে হবে যে দেশে আইনের শাসন আছে।’

Advertisement

ধানমন্ডি-২৭ নম্বর সড়কের মানববন্ধনে কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘এ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত করতে হবে। নুসরাত হত্যার দ্রুত বিচারসহ পূর্বে এ ধরনের সবগুলো ঘটনার বিচার করতে হবে।’

আরও পড়ুন >> নুসরাত হত্যার বিচারের দাবিতে উত্তাল শোবিজ

মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেন, ‘আমাদের সংস্কৃতি হলো ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে রাস্তায় নামি, তারপর একসময় সব ঘটনাই ধামাচাপা পড়ে যায়, এ থেকে আমরা পরিত্রাণ চাই। নুসরাতের মতো যাতে আর কোনো ঘটনা না ঘটে, এজন্য আমরা এই ঘটনাসহ সবগুলো নারী সহিংসতায় জড়িতদের কঠোর শাস্তি চাই।’

মহিলা আইনজীবী সমিতির সদস্য ব্যারিস্টার নিশাত মাহমুদ বলেন, ‘সমাজকে সংঘবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ করতে হবে। আমাদের আরও সংঘবদ্ধ হতে হবে। এর বিকল্প নেই।’

সমাজকর্মী মাসুদা আলম বলেন, ‘আজ থেকে ৩০ বছর আগে আমাদের শিক্ষাজীবনে, আমাদের মেয়ে বন্ধুদের পাশাপাশি ছেলে বন্ধুরা আস্থাভাজন ছিল। কিন্তু আজকে দেখলাম, মেয়েরা মেয়েসহপাঠীর শত্রু। নুসরাতকে তার বান্ধবী ডেকে নিয়েছিল।’

উল্লেখ্য, নুসরাত জাহান রাফিকে নিজ কক্ষে নিয়ে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে গত ২৭ মার্চ আটক করে পুলিশ। ওই ঘটনার পর থেকে তিনি কারাগারে। এ ঘটনায় রাফির মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন।

গত ৬ এপ্রিল (শনিবার) সকালে রাফি আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায় যান। এ সময় মাদরাসার এক ছাত্রী তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদের ওপর কেউ মারধর করছে- এমন সংবাদ দিলে তিনি ওই বিল্ডিংয়ের চারতলায় যান। সেখানে মুখোশ পরা ৪-৫ জন তাকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। রাফি অস্বীকৃতি জানালে তারা তার গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়।

পরে দগ্ধ নুসরাত জাহান রাফিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। পাঁচদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ১০ এপ্রিল মারা যান নুসরাত।

আরএমএম/বিএ/এমএস