কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করা ফেনীর সোনাগাজীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির খুনিদের বাঁচাতে নানাভাবে তৎপরতা চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, খবরগুলো ইতোমধ্যে প্রকাশিত হচ্ছে। বিভিন্ন দিক থেকে হত্যা মামলার আসামি ও তাদের দোসরদের পক্ষে একটি গ্রুপ মাঠে নেমেছে।
Advertisement
শনিবার (১৩ এপ্রিল) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, সোনাগাজীর মাদরাসা শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি শাহাদাত হোসেন শামীম, যুবলীগ নেতা নূর উদ্দিন, জাবেদ হোসেন, জোবায়ের আহমেদ, আব্দুল কাদের, ওই মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা, সোনাগাজী পৌর কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মকসুদুল হক ও প্রভাষক আবছার উদ্দিনের পক্ষে সাফাই গাইতে শুরু করেছে ওই গ্রুপটি। তারা রাজনৈতিক নেতাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধরনাও দিচ্ছে বলে গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। ঘটনায় জড়িত সবাই ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী।
বিএনপির এ মুখপাত্র বলেন, ফেনী হলো ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীদের নিরাপদ জনপদ। দীর্ঘদিন ধরে সেখানে আওয়ামী লীগের গডফাদারদের ছত্রচ্ছায়ায় বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম চলে আসছে। তারা তাদের নিজেদের দলের নেতাকেই আগুনে পুড়িয়ে ঝলসিয়ে দিয়েছে। ড্রিল মেশিন দিয়ে মানুষকে ছিদ্র করে মেরে ফেলার রেকর্ডও রয়েছে। তাই নুসরাত হত্যায় কতিপয় খুনিকে ধরা হলেও আসল খুনিদের ধরা হবে কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে জনমনে। নুসরাত হত্যা মামলার তদন্ত তনু ও সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনীর হত্যার মতোই হয় কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। শুধু আমরা না, এ আশঙ্কা করেছেন স্বয়ং মহামান্য হাইকোর্টও।
Advertisement
রিজভী বলেন, গণমাধ্যমের মাধ্যমে নিশ্চয়ই জেনেছেন, মাদরাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ করতে গিয়ে ফেনীর সোনাগাজী থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের হয়রানির শিকার হয়েছিলেন নুসরাত। ওসি তার নিজের কক্ষে ঘটনা জানার নাম করে আরেক দফা হয়রানি করেছিলেন মেয়েটিকে। এ সময় অঝোরে কাঁদতে থাকা মেয়েটির ভিডিও চিত্র ধারণ করা হচ্ছিল।
তিনি আরও বলেন, কর্তব্য পালনে অবহেলার অভিযোগে গত ৯ এপ্রিল মোয়াজ্জেম হোসেনকে প্রত্যাহার করা হয়। যৌন হয়রানির অভিযোগ করার সময় ওসির ভিডিও ধারণ করার ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তারপর সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়াও আইনসিদ্ধ নয়। কিন্তু সরকার ওসিকে প্রত্যাহার করেই দায় সেরেছে। এখনও তার বিরুদ্ধে আইনগত বা ফৌজধারী আইনে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বিএসএমএমইউ-তে চিকিৎসা দিলেও সরকার নিয়ন্ত্রিত ওই হাসাপাতালে তার প্রয়োজন মতো চিকিৎসা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন রিজভী। তিনি বলেন, তার (খালেদা জিয়া) প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে না। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নেই, অস্টিও আর্থারাইটিস এর ব্যথা এখন প্রচন্ড আকার ধারণ করেছে।
তিনি বলেন, মূল কারণ একটাই, বিএনপি চেয়ারপারসনকে কৌশলে দুনিয়া থেকে সরিয়ে আবারও পুরোপুরি বাকশালের নামে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। আমি আবারও সরকারের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।
Advertisement
সংবাদ সম্মেলনে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, সহ দফতর সম্পাদক মো. মনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
কেএইচ/আরএস/এমএস