দেশজুড়ে

কক্সবাজার জুড়ে হঠাৎ প্লাবন

প্লাবন পিছু ছাড়ছে না কক্সবাজারবাসীর। সোমবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া টানা বর্ষণে আবারো তলিয়ে নিয়েছে শহর-গ্রামের রাস্তাঘাট,বাড়ি-ঘর, ব্যবসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আর এ নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ভুক্তভোগীরা। জেলার তিন মিঠাপানির নদীতে আবারো তীব্র বেগে ঢল নেমেছে। বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি। এতে সাম্প্রতিক প্লাবনে ধসে যাওয়া ঈদগাঁও ফুলেশ্বরী নদীর বাঁশঘাটা ব্রিজটি অবশেষে পানিতে ভেসে গেছে। ফলে বাজারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে লাখো মানুষ। সাগরে পূর্ণিমা তিথির বাড়ন্ত জোয়ারের কারণে ভারী বর্ষণের পানি অপসারিত হতে না পেরে এ প্লাবন সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন বোদ্ধামহল। কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস সূত্র জানিয়েছে, সোমবার বিকেল ৩টা থেকে মঙ্গলবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে ২৫৩ মিলিমিটার। সদর উপজেলার ইসলামাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক মেম্বার বলেন, সোমবার দুপুর থেকে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হলেও রাত ৮টার পর থেকে তা মুষলধারে রূপ নেয়। পাহাড়ি এলাকাতেও একই ধরণের বর্ষণ হওয়ায় রাত ১১টা থেকে নদীতে ঢল নামতে শুরু করে। সকাল হতে তা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে বিপদসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়া শুরু করে। সকাল ৯টার দিকে বাঁশঘাটা এলাকার ফুটওভার ব্রিজটি পানির ধাক্কায় নদীতে তলিয়ে যায়। বাজারের ব্যবসায়ী সাগর দেব পীযূষ ও শাহিদ মোস্তফা শাহেদ জানান, অন্যবারের মতো এবারো অল্পতে ঢলের পানি পুরো বাজার এলাকা গ্রাস করেছে। পুরো বাজারের অলিগলি রান সমান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সব ধরণের দোকান ও গোডাউনে পানি ঢুকে লাখ লাখ টাকার মালামাল নষ্ট হয়েছে। একই অবস্থা কক্সবাজার শহরের বাজারঘাটা, বড়বাজার, হোটেল-মোটেল জোনসহ নিচু সব এলাকা। এবারের পানি অন্য সময় যেসব এলাকা প্লাবন থেকে মুক্ত ছিল সেসব এলাকার বাসাবাড়ি, দোকানপাট ও শিক্ষা প্রতিষ্টানে ঢুকে চরম দুর্ভোগের জন্ম দিয়েছে। কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রুমালিয়ারছরার বাসিন্দা নূরুল আজিম কনক জানান, ভোর রাত ৪টার দিকে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলে দেখেন তার শয়ন কক্ষও হাটু পানিতে ডুবে আছে। খাটে পানি উঠেনি বলে বাড়িতে পানি ঢুকার বিষয়টি টের পাওয়া যায়নি। এতে ফ্রিজ, কম্পিউটারসহ ইলেকট্রনিক্স নানা ব্যবহার্য পণ্য পানিতে তলিয়ে গিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। সকালে এলাকায় খবর নিয়ে দেখেন অসংখ্য বাসাবাড়ির একই দশা হয়েছে। তিনি আরো জানান, পার্শ্ববর্তী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের অধিকাংশ ভবনের নিচতলায় পানি ঢুকেছে। ভেঙে গেছে অফিসের সীমানা দেয়াল। এছাড়া হাশেমিয়া আলিয়া মাদ্রাসার পার্শ্ববর্তী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাড. একে আহমদ হোসেনের বাসাতে এবার প্রথমবারের মতো পানি ঢুকেছে। উপকূলীয় গোমাতলীর ঘের মালিক ইয়াছিন উল­াহ ও শহরের এস এম পাড়ার বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম টিপু ও পেশকারপাড়ার আবু আহমদ জানান, পূর্ণিমার জোয়ারের কারণে সাগরে পানি স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট বেড়েছিল। আর এ কারণে নদীতেও পানি ভর্তি থাকায় বর্ষণের পানি দ্রুত নিষ্কাশন হতে পারেনি। এতে করে নতুন নতুন এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়েছে। একই অবস্থা বিরাজ করছে জেলার চকরিয়া, পেকুয়া, রামু, টেকনাফ, মহেশখালী, কুতুবদিয়া ও সদরের নিম্নাঞ্চলেও। অনেক জায়গায় পূর্বে ভাঙনের কবলে পড়া তীর মেরামত করা সম্ভব না হওয়ায় সেসব ভাঙন দিয়ে দ্রুত পানি এলাকায় প্রবেশ করে আগের মতো ঘরবাড়ি প্লাবিত হচ্ছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে রাস্তাঘাট ও শিক্ষা এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আলম এমএ জানান, ভাঙন মেরামতের জন্য বরাদ্ধ কিছু এসেছে এবং আরো আসার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। কিন্তু বর্ষণ এসব ভাঙন মেরামতের সুযোগ দিচ্ছে না। পূর্বে ঘটে যাওয়া বন্যায় চকরিয়া-পেকুয়ার গৃহ হারা মানুষগুলো এখনো নতুন আবাস তৈরি করতে পারেনি। এখন আবার প্লাবন তাদের জন্য মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে।এদিকে ভারী বর্ষণে কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা লিংরোড় মুহুরীপাড়া এলাকায় পাহাড় ধসে এক স্কুল শিক্ষার্থী মারা গেছে। ভোরে বাড়ির উপর পার্শ্ববর্তী কাটা পাহাড়ের একটি অংশ ঘরের উপর ধসে পড়লে চাপায় মারা যায় ফারজানা ইয়াছমিন (১৪)। সে দক্ষিণ মহুরি পাড়ার আবু তাহেরের মেয়ে ও ইলিয়াছ মিয়া চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী।এদিকে, ঝড়ো বাতাসের কবলে পড়ে সেন্টমার্টিন বঙ্গোপসাগরে বোট ডুবির ঘটনায় দুই মাঝি মাল­া এখনো নিখোঁজ রয়েছে।সেন্টমার্টিন কোস্টগার্ড ইনচার্জ লে. ডিকসন চৌধুরী তথ্যের সত্যতা জানিয়ে বলেন, নোঙ্গরকরা বোটটি হঠাৎ ডুবে গেলে সবাই ভেসে যায়। আর ৯ জনকে কোস্টগার্ড উদ্ধার করতে পারলেও দুইজন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।    কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানান, হঠাৎ প্রবল বর্ষণ শুরু হয়েছে। নদী ও সবখানে পানি বেড়ে যাওয়ায় নিচু এলাকার বাসাবাড়ি প্লাবিত হচ্ছে বলে খবর পেয়েছি। ইউএনওদের নির্দেশনা দেয়া আছে যেকোন দুর্যোগ মুহূর্তে যেন এড়ানোর ব্যবস্থা নেয়া হয়। কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান বলেন, ভারী বর্ষণে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জেলায় ফের বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টি থেমে গেলে নদী ও সাগরের কিনারের বেড়িবাঁধ মেরামতে হাত দেয়া হবে বলে জানান তিনি।সায়ীদ আলমগীর/এআরএ

Advertisement