বড় বোন নুসরাত জাহান রাফির নির্মম মৃত্যু কিছুতেই যেন মেনে নিতে পারছে না ছোট ভাই রাশেদুল হাসান রায়হান। শুক্রবার রাতে বোনের মৃত্যুশোকে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ফেনী ডায়াবেটিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে রায়হান এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
Advertisement
স্বজন ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত ২৭ মার্চ নুসরাতকে যৌন নিপীড়নের পর থেকে অস্থির হয়ে পড়ে ছোট ভাই রাশেদুল হাসান রায়হান। ৬ এপ্রিল মাদরাসায় নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়ার ঘটনা থেকে হাসপাতালে একাধিকবার অজ্ঞান হয়ে পড়ে রায়হান। পরে ১০ এপ্রিল (বুধবার) নুসরাতের মৃত্যুর পর তার আহাজারিতে হাজারো মানুষের চোখে জল নেমে আসে। এদিনও ‘বোন-বোন’, ‘আমি কাকে বোন ডাকবো’ বলে চিৎকার করে তাকে বেহুঁশ হতে দেখা যায়। নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে শরীর দুর্বল হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে স্বজনরা তাকে হাসপাতালে ভর্তি করায়।
নিহত নুসরাতের চাচাতো ভাই মোহাম্মদ উল্যাহ ফরহাদ জানান, একমাত্র বোনকে হারিয়ে সব চেয়ে বেশি শোকাহত হয়েছে ছোট ভাই রায়হান। মাত্র দুই বছরের বড় নুসরাতের সঙ্গে মাদরাসায় একসঙ্গে যাওয়া আসা করতো। অনেকটা সমবয়সী বলে ভাই-বোনের মধ্যে খুনসুটি লেগেই থাকতো। চোখের সামনে বোনের মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছে সে। রায়হান সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার দশম শ্রেণির ছাত্র।
ফেনী ডায়াবেটিক হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, মানসিক দুশ্চিন্তার কারণে রায়হান অসুস্থ হয়ে পড়ে। রাতে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তাকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়। এখন তার অবস্থা কিছুটা স্বাভাবিক।
Advertisement
এদিকে নুসরাত হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত পুলিশ ও পিবিআই ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে। এদের মধ্যে ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।
নুসরাত জাহান রাফি সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী ছিলেন। ওই মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে ওই ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় মামলা করেন।
এরপর অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে নুসরাতের পরিবারকে হুমকি দেয়া হচ্ছিল। এর মধ্যে ৬ এপ্রিল (শনিবার) সকাল ৯টার দিকে আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথমপত্র পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রে যান নুসরাত। এ সময় তাকে কৌশলে একটি বহুতল ভবনে ডেকে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। সেখানে তার গায়ে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়।
ঘটনার চারদিন পর বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নুসরাত। বৃহস্পতিবার গ্রামের বাড়িতে তার দাফন সম্পন্ন হয়।
Advertisement
রাশেদুল হাসান/আরএআর/জেআইএম