ভৈরব বিএডিসি সার গুদামের ২২ কোটি ২৩ লাখ টাকা মূল্যের ৯৬ হাজার ২০০ বস্তা সার চুরির ঘটনায় দীর্ঘ সাড়ে ৪ বছরেও মামলার বিচার কাজ শেষ হয়নি। ময়মনসিংহ দুদকের সহকারী পরিচালক ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পাল কমল চন্দ্র অসুস্থতা দেখিয়ে গত দেড় বছর যাবৎ আদালতে অনুপস্থিত।
Advertisement
মামলার বাদী সূত্রে জানা গেছে, গত দেড় বছরে ৯ বার আদালতে তারিখ হলেও তদন্তকারী কর্মকর্তা একবারও আদালতে উপস্থিত হয়নি। এই সার চুরির মামলায় বাদীসহ ৩৫ জনকে সাক্ষী দিয়ে গত ২০১৫ সালের ৯ জুলাই কিশোরগঞ্জ আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়। পরে মামলাটি ময়মনসিংহের (দুদক আদালত) স্পেশাল জজ আদালতে স্থানান্তর করা হয়। মামলায় আসামি করা হয় ৭ জনকে।
এরা হলেন, সার গুদামের সহকারী পরিচালক (সার) রেজাউল করিম, গুদাম রক্ষক খোরশেদ আলম, গুদামের লেবার সর্দার মো. রতন, কিশোরগঞ্জ বিএডিসির সাবেক যুগ্ম পরিচালক (সার) মো. আহাদ আলী, সার ডিলার প্রতিনিধি লিটন সাহা, হারিছুল হক ও সবুজ মিয়া। তখন অভিযোগ উঠে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রহস্যজনক কারণে গুদাম রক্ষকের জবানবন্দি অনুযায়ী অপরাধী আরও ৬ জনকে মামলায় আসামি করেনি।
২০১৪ সালের ১৪ নভেম্বর ভৈরব বিএডিসি সার গুদামের সার চুরির ঘটনা উদঘাটিত হয়। এরপর ১৬ নভেম্বর কর্তৃপক্ষ গুদামটি সিলগালা করে দেয়। পরদিন ১৭ নভেম্বর দুজনকে আসামি করে বিএডিসির কিশোরগঞ্জের যুগ্ম-পরিচালক মো. শহীদুল্লাহ বাদী হয়ে ভৈরব থানায় একটি মামলা করেন। তারপর কর্তৃপক্ষ গুদামের মজুত সার গণনা করে দেখতে পান গুদামে ৯৬ হাজার ২০০ বস্তা সার নেই। পরে ওই দুজন কর্মকর্তাকে কর্তৃপক্ষ বরখাস্ত করে। এরপর ৮ ডিসেম্বর রেজাউল করিম ও ১৬ ডিসেম্বর খোরশেদ আলমকে টাঙ্গাইল ও সাভার থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে। পরে মামলাটি তদন্তের জন্য ময়মনসিংহের দুদককে দায়িত্ব দেয়া হয়।
Advertisement
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পাল কমল চন্দ্র দীর্ঘ তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিট দেয়ার পর ময়মনসিংহ আদালতে ২০১৫ সালের ১৯ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়। চার্জ গঠনের পর সাক্ষীদের সাক্ষী গ্রহণ করতে প্রায় ৪ বছর অতিবাহিত হয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে শুধুমাত্র তদন্তকারী কর্মকর্তার সাক্ষী দেয়া শেষ হলেই আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক হবে। তারপর বিচারের রায় ঘোষণা করবে আদালত। একাধিকবার আদালত থেকে নোটিশ দিলেও অসুস্থতা দেখিয়ে বার বার আদালতে হাজির হচ্ছে না তদন্ত কর্মকর্তা।
এ দিকে মামলার আসামিরা আদালত থেকে জামিন নিয়ে বাইরে আছে বলে জানা গেছে। অভিযোগ রয়েছে মামলার তিন আসামি লিটন সাহা, হারিছুল হক ও সবুজ মিয়া সার ডিলারের সামান্য বেতনের কর্মচারী হয়েও এখন কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে ব্যবসা করছেন। দেশে সরকারি গুদাম থেকে সার চুরির মতো এতবড় পুকুর চুরির ঘটনা আর ঘটেনি বলে জানা গেছে। গুদাম রক্ষক একজন রক্ষক হয়ে ভক্ষকের কাজ করে অপরাধীদের সঙ্গে যোগসাজস করে সরকারের ২৩ কোটি টাকার সার গোপনে বিক্রি করে দেয়।
মামলার বাদী মো. শহীদুল্লাহ জানান, মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী তদন্তকারী কর্মকর্তা পাল চন্দ্র কমল দীর্ঘ দেড় বছর যাবৎ অসুস্থতা দেখিয়ে আদালতে সাক্ষী দিতে উপস্থিত হচ্ছেন না বলেই মামলার বিচার কাজ শেষ হচ্ছে না। এ মামলায় ৩৫ জন সাক্ষীর মধ্যে বর্তমানে ২৯ জনের সাক্ষী সম্পন্ন হয়েছে এবং ৫ জনের সাক্ষী নেয়া হবে না বলে আদালতের পিপি আমাকে জানিয়েছেন বলে তিনি জানান।
Advertisement
আসাদুজ্জামান ফারুক/এমএএস/পিআর