দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, রাফি হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত আছে তাদেরকে ছাড় দেয়া হবে না। তাদের বিচার হবেই।
Advertisement
আজ শুক্রবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সভার শুরুতে সূচনা বক্তব্যে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। বৈঠকে উপদেষ্টা পরিষদের অধিকাংশ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নুসরাত জাহান রাফির গায়ে আগুন দিয়ে হত্যা করে তারা (জড়িতরা) জঘন্য কাজ করেছে। এ ধরনের জঘন্য হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানানোর ভাষা আমার নেই।’
তিনি বলেন, ‘অপরাধীদের কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শাস্তি তাদের পেতে হবে। এ ঘটনার সঙ্গে আরও যারা জড়িত আছে তাদের খুঁজে বের করা হবে। তারা কেউ রেহাই পাবে না।’
Advertisement
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মেয়েটিকে বাঁচাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠাতে চেয়েছিলাম। তবে তার শারীরিক অবস্থা সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়ার মতো ছিল না। সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে, তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে এখানে চিকিৎসা চলেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য মেয়েটিকে বাঁচানো গেল না।’
সারাদেশে জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতির শুরু প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘এই ঘটনার শুরুটা কারা করেছিল? ২০১৩ সালে নির্বাচন পণ্ড করার নামে যে জ্বালাও পোড়াও অগ্নিসন্ত্রাস হয়েছে তার মাধ্যমে কিন্তু নির্বাচন ঠেকানো যায়নি। আবার ২০১৫ সালে সরকারকে উৎখাত করার নামে সারাদেশে অগ্নিসন্ত্রাস সৃষ্টি করে। এই দেশে এমন বীভৎস ঘটনা সেই পাকিস্তান আমলে আমরা দেখেছি। ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনী যখন দেশের মানুষের ওপর হামলা শুরু করে তখন তারা বস্তিতে আগুন দিত। আগুন দেয়ার পর যখনই তারা ঘর থেকে বেরিয়ে আসত তখনই তারা তাদের গুলি করে হত্যা করত। এইভাবে তারা বহু মানুষ হত্যা করেছে।’
বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপির আমলেও এই রকম ঘটনা ঘটেছে। একটি রাজনৈতিক দল বিএনপি ২০-দলীয় জোট করেছে। সেই ২০ দলে আছে স্বাধীনতাবিরোধী দল জামায়াত। এই বিএনপি-জামায়াত জীবন্ত মানুষের গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে মানুষ মেরেছে। এ ছাড়াও বাসে, ট্রেনে, ট্রলারে আগুন দিয়েও মানুষ পুড়িয়েছে। এই যে যেখানে সেখানে মানুষ পুড়িয়ে মারা হচ্ছে- এই পথটা তো বিএনপিই দেখিয়ে গেছে। আমি মনে করি, এগুলো প্রতিহত করতে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি হওয়া দরকার।’
ভবনে অগ্নিকাণ্ড লেগে গেলে করণীয় বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় যে আগুন লাগছে-এটার প্রতিকার করতে গেলে যাদের ভবন আছে তাদের একটা দায়িত্ব আছে। যারা ভবন ব্যবহার করে তাদের জানা থাকা দরকার অগ্নিকাণ্ড ঘটলে কীভাবে ওই ভবন থেকে বের হবে। বা অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রও তাদের থাকা উচিৎ।’
Advertisement
অগ্নিদুর্ঘটনারোধে সকলকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে একটা প্রচলন আছে যে, কোনো কিছু হলেই তা সরকার সমাধান করে দেবে। সরকার তো সরকারের কাজ করবেই কিন্তু সবার নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করা উচিৎ। যারা প্ল্যান করেন, যারা আর্কিটেক্ট, যারা অনুমোদন দেন তাদেরও দায়িত্ব আছে। তারা যেন তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন। আমাদের সবকিছু প্ল্যান করে ডিজাইন করা উচিৎ। এক ইঞ্চি জায়গাও ছাড়ব না-এমন মানসিকতা থাকা উচিৎ না।’
ভবনগুলোতে ফায়ার এক্সিট বা আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার জরুরি নির্গমন পথ না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এন্টিরিয়র ডিজাইনের কারণে ফায়ার এক্সিট নাই-এটা কেমন কেথা। যারা ভবন ব্যবহার করেন তারা তো শিক্ষিত মানুষ। তাদের মধ্যে তো সচেতনতাবোধ থাকা উচিৎ।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বনানীর যে ভবনে আগুন লাগল সেই ভবনটিতে দেখা গেছে, ফায়ার সার্ভিসের বাহিনী যে কাজ করবে, তারা যে একটা জায়গায় দাঁড়াবে-সেই বারান্দা পর্যন্ত নেই। এই রকম অপরিকল্পিত ভবনে আগুন নেভানোর কাজে গিয়ে আমাদের একজন ফায়ার সার্ভিসের কর্মী সোহেল নিহত হলো। আমি চেষ্টা করেছিলাম…ওকে চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে সিঙ্গাপুর পাঠিয়েছিলাম কিন্তু তারপরও তাকে বাঁচানো গেল না।’
নববর্ষের আগাম শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলা নববর্ষ, আমরা সব ধর্মের মানুষ মিলে উদযাপন করি। এটি বাঙালির বড় উৎসব। এটিকে আনন্দঘন করতে আমি বিশেষ ভাতারও ব্যবস্থা করে দিয়েছি। নববর্ষ মানে পুরনো বছরের সবকিছুকে মুছে দিয়ে নতুন বছরের যাত্রা শুরু। আমাদের নতুন বছরের যাত্রা শুভ হবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এ অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে।’
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশংসা করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে মন্দা ছিল বর্তমানে আমাদের দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী। দুর্বার গতিতে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে দেশ এগিয়ে যাবে; এই এগিয়ে যাওয়া কেউ প্রতিহত করতে পারবে না। জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল কিন্তু বর্তমান সরকার তা মোকাবিলা করে দেশকে জঙ্গিবাদমুক্ত করেছে।’
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনীনির্ভর কোনো ধরনের নাটক নির্মাণ, লেখালেখি বা ক্রীড়ানুষ্ঠান-টুর্নামেন্ট আয়োজনের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের অনুমোদনের প্রয়োজন নেই বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের সঞ্চলনায় বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, এইচ টি ইমাম, ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, মশিউর রহমান, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, অধ্যাপক আব্দুল খালেদ, অধ্যাপক হামিদা বানু, মুকুল বোস, অ্যাম্বাসেডর জমির, মহীউদ্দিন খান আলমগীর প্রমুখ।
এফএইচএস/এইউএ/এসআর/পিআর