ইকুয়েডরের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েন চলছিল অনেকদিন ধরেই। বৃহস্পতিবার তার ওপর থেকে রাজনৈতিক আশ্রয়ও তুলে নেয় ইকুয়েডর। আর তারপরই উইকিলিকসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে গ্রেফতার করে ব্রিটিশ পুলিশ। গত সাত বছর ধরে ইকুয়েডরে রাজনৈতিক পুনর্বাসনে ছিলেন অ্যাসাঞ্জ।
Advertisement
মার্কিন গোপন নথিপত্র ফাঁস করে বিশ্বজুড়ে আলোচিত হয়েছিল ওয়েবসাইট উইকিলিকস। তখন থেকেই ইকুয়েডরের প্রাক্তন সরকারের প্রেসিডেন্ট রাফাল করিয়ার চোখে ‘হিরো’ হয়ে ওঠেছিলেন অ্যাসাঞ্জ। সে সময় থেকে রাজনৈতিক পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছিল অ্যাসাঞ্জকে।
বৃহস্পতিবার ব্রিটেনে অবস্থিত ইকুয়েডরের দূতাবাস থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। সাত কর্মকর্তা তাকে টেনে-হেঁচড়ে দূতাবাস থেকে বের করে আনেন। বহুদিন ধরেই লোকচক্ষুর অন্তরালে ছিলেন অ্যাসাঞ্জ। গ্রেফতারের সময় সাদা চুল-দাঁড়ির অ্যাসাঞ্জকে অনেকটা বিধ্বস্ত লাগছিল। এ সময় তার হাতে একটি বই ছিল এবং তিনি চিৎকার করছিলেন।
সাত বছর ধরে তিনি ব্রিটেনের ইকুয়েডর দূতাবাসে রাজৈনিতক আশ্রয়ে ছিলেন। যৌন সহিংসতার অভিযোগে করা একটি মামলায় সুইডেনে প্রত্যর্পণ এড়াতে সাত বছর আগে লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসে আশ্রয় নিয়েছিলেন অ্যাসাঞ্জ। ২০১০ সালে সুইডেনে দুই নারীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। কিন্তু পরে তা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। তবে বরাবরই আসাঞ্জ তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।
Advertisement
২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট লেনিন মোরেনো যখন ইকুয়েডরের ক্ষমতায় আসেন সে সময় থেকেই বর্তমান সরকারের সঙ্গে ‘নানা কারণে’ দূরত্ব বাড়তে শুরু করে। অনলাইনে রাজনৈতিক মন্তব্য না করতে হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয় অ্যাসাঞ্জকে।
তার বিরুদ্ধে বেনামে ওয়েবসাইট চালানোর অভিযোগ তুলেছে মোরেনো সরকার। শুধু তাই নয়, ওই ওয়েবসাইটে মোরেনোর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিষয় নিয়েও নানা বিষয় প্রকাশ করা হয়। ওয়েবসাইটে আরও দাবি করা হয়, মোরেনো যখন জাতিসংঘের প্রতিনিধি ছিলেন সে সময় তার ভাই বেশ কয়েকটি সংস্থা খোলেন। তার পরিবার ইউরোপে বিলাসবহুল জীবনযাপন করেছে।
‘আইএনএ পেপার্স’ নামে প্রকাশিত ওই নথিতে মোরেনো ও তার পরিবারের ব্যক্তিগত ছবিও ফাঁস করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সেই তথ্য সামনে আসার পর মোরেনো প্রশ্ন তুলেছিলেন, তার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট ও ছবি হ্যাক করার অধিকার কে দিয়েছে অ্যাসাঞ্জকে? যদিও উইকিলিকসের তরফ থেকে এক টুইটে দাবি করা হয়েছে যে, এসব তথ্য ফাঁসে কোনভাবেই জড়িত নন অ্যাসাঞ্জ। তার বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলেও দাবি করেছে উইকিলিকস।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব ঘটনায় অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে সন্দেহ দৃঢ় হতে শুরু করেছিল মোরেনোর। ফলে তাদের মধ্যে একটা দূরত্ব তৈরি হচ্ছিল। শুধু তথ্য ফাঁসই নয়, দূতাবাসে থাকাকালীন দুর্ব্যবহারেও অভিযোগ উঠেছে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে। ইকুয়েডরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসে ভ্যালেন্সিয়া বলেছেন, দূতাবাসে থাকাকালীন অ্যাসাঞ্জ যে ফোন ব্যবহার করতেন তা রেজিস্ট্রেশন করা ছিল না।
Advertisement
দূতাবাসের পরিবেশ খারাপ করছিলেন বলেও অভিযোগ ওঠে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে। নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অ্যাসাঞ্জকে ধরিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ঋণ মওকুফের আবেদন জানিয়েছেন ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট লেনিন মোরেনো।
টিটিএন/এমকেএইচ