বৃহস্পতিবার রাতে আইপিএলের ইতিহাসের প্রথম অধিনায়ক হিসেবে ম্যাচ জয়ের সেঞ্চুরি করেছেন চেন্নাই সুপার কিংসের মহেন্দ্র সিং ধোনি। রাজস্থান রয়্যালসকে ৪ উইকেটে হারিয়ে এ কীর্তি গড়েন ধোনি। এখন পর্যন্ত দলকে ১৬৫ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে ঠিক ১০০টি ম্যাচ জিতেছেন তিনি।
Advertisement
তবে ধোনির এই রেকর্ডের দিনেও গুনতে হয়েছে জরিমানা। এর কারণ বা দায় অবশ্য সম্পূর্ণ তার নিজের। ম্যাচের একদম শেষ ওভারে আম্পায়ারদের সিদ্ধান্ত অমান্য করে মাঠে প্রবেশ করায় ম্যাচ ফি'র ৫০ শতাংশ কেটে রাখা হয়েছে ধোনির।
ম্যাচ শেষে আনুষ্ঠানিক এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আইপিএল কর্তৃপক্ষ জানায়, 'আইপিএলের কোড অব কন্ডাক্ট ভঙ্গ করায় চেন্নাই সুপার কিংসের অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনিকে ম্যাচ ফি'র পঞ্চাশ শতাংশ জরিমানা করা হয়েছে। ধোনি লেভেল ২ এর ২.২০ ধারার আইন ভঙ্গ করেছেন এবং নিজের অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছেন।'
ঘটনা ম্যাচের শেষ ওভারের। জয়পুরের মানসিং স্টেডিয়ামে স্বাগতিক রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে চেন্নাই সুপার কিংসের ম্যাচটিতে তখন টানটান উত্তেজনা। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন চেন্নাইকে জয়ের জন্য করতে হবে ৬ বলে ১৮ রান, আশা ভরসার প্রতীক হয়ে উইকেটে রয়েছেন অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি নিজেই।
Advertisement
বেন স্টোকসের করা শেষ ওভারের প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকিয়ে অধিনায়ককে সাহস জোগান বাঁহাতি স্পিনিং অলরাউন্ডার রবিন্দ্র জাদেজা। পরের বলে ওভারস্টেপিং করে বসেন স্টোকস। এক রান নিয়ে সমীকরণটা ৫ বলে ১০ রানে নামিয়ে নেন জাদেজা। তবে ফ্রি হিট বলটি কাজে লাগাতে পারেননি ধোনি।
সন্তুষ্ট থাকতে হয় ২ রান নিয়েই। তবু সমীকরণ ৪ বলে ৮ রান থাকায় জয়ের পাল্লা তখন চেন্নাইয়ের দিকেই ভারী। কিন্তু পরের বলেই দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ান স্টোকস। অসাধারণ এক ইয়র্কার সরাসরি বোল্ড করে সাজঘরে পাঠিয়ে দেন ধোনিকে। তিন বলে বাকি থাকে ৮ রান।
তখনই ঘটে ম্যাচের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনাটি। শেষ তিন বলের জন্য উইকেটে আসেন মিচেল স্যান্টনার। এবার কোমরের ওপরে ফুলটস করে বসেন স্টোকস। তবে বলের গতি কম থাকায় স্যান্টনারের পাশাপাশি বিভ্রান্ত হয়ে যান মূল আম্পায়ার উল্লাস গান্ধে।
তিনি হাত বাড়িয়ে জানিয়ে দেন এটি উচ্চতার কারণে নো বল। কিন্তু লেগ আম্পায়ার ব্রুস অক্সেনফোর্ড আবার তাকে থামিয়ে বলেন এটি নো বল নয়। সে বল থেকে ২ রান নেন স্যান্টনার, সমীকরণ দাঁড়ায় ২ বলে ৬ রানে।
Advertisement
কিন্তু দুই আম্পায়ারের দুই রকম সিগন্যাল মানতে পারেননি চেন্নাই অধিনায়ক ধোনি। রাগে ফুঁসতে থাকেন ডাগআউটে দাঁড়িয়ে। প্রথমে মাঠে থাকা ভারতীয় অলরাউন্ডার রবিন্দ্র জাদেজা আম্পায়ারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এ ব্যাপারে। কিন্তু তা মনঃপুত হয়নি ধোনির।
আর সইছিলো না দেখে খেলার মাঝেই ঢুকে পড়েন মাঠের মধ্যে। প্রথমেই এগিয়ে যান লেগ আম্পায়ার অক্সেনফোর্ডের দিকে। সেখানে আসেন মূল আম্পায়ার গান্ধেও। তাকে দেখিয়ে ধোনি বলতে থাকেন, মূল আম্পায়ার নো বল ডেকেছে, মূল আম্পায়ার নো বল ডেকেছে। কিন্তু এতে সাড়া দেননি অক্সেনফোর্ড। তিনি অটল থাকেন নিজের সিদ্ধান্তে।
বেশ কয়েকবারের চেষ্টায় ধোনিকে বোঝাতে থাকেন এটি নো বল হয়নি। তখন বোলার বেন স্টোকসও সামনে চলে এলে ছোটখাটো এক বাকবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। আম্পায়াররা বারবার ধোনিকে বোঝালেও অসন্তুষ্টই দেখা যায় ধোনিকে। সিদ্ধান্তেও কোনো বদল আসেনি। ফলে রাগে গজরাতে গজরাতে মাঠ ছেড়ে যান ধোনি।
সে ওভারের পরের দুই বলে ম্যাচ ঠিকই জিতে নেয় চেন্নাই। পঞ্চম বলে লং অন বাউন্ডারির কাছ থেকে ২ রান নিয়ে নেন স্যান্টনার। শেষ বলে তখন বাকি ৪ রান। ওয়াইড করে বসেন স্টোকস। পরের বলে সেই লং অন বাউন্ডারি দিয়েই ছক্কা মেরে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন স্যান্টনার।
এসএএস/এমএস