ক্যাম্পাস

আন্দোলনের মুখে ছুটির আবেদন করেছেন ববি উপাচার্য

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের মুখে উপাচার্য (ভিসি) প্রফেসর ড. এসএম ইমামুল হক ছুটির জন্য আবেদন করেছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে ছুটির আবেদন করেন তিনি।

Advertisement

উপাচার্যের পক্ষে রেজিস্ট্র্রার ডা. মো. হাসিনুর রহমান সেই আবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে পৌঁছে দেন। আবেদনে ১১ এপ্রিল থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি চাওয়া হয়েছে।

রেজিস্ট্র্রার ডা. মো. হাসিনুর রহমান জানান, আবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে ছুটিকালীন সময় ট্রেজারার ড. একেএম মাহাবুব হোসেন খান উপাচার্যের রুটিনমাফিক কাজ পরিচালনা করবেন। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সিন্ডিকেট সভা না থাকায় পরবর্তী সিন্ডিকেট সভায় ছুটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। ওই আবেদনে ছুটি শেষে ২৬ এপ্রিল উপাচার্যের যোগদানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়। তবে এ ছুটিতে সন্তুষ্ট নয় শিক্ষার্থীরা ।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, আন্দোলন বা উদ্ভুত পরিস্থিতি নিরসনে ভিসির পদত্যাগের বিকল্প নেই। ভিসি পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

Advertisement

এদিকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) প্রফেসর ড. এসএম ইমামুল হকের পদত্যাগ দাবিতে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করে আজও বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কে অবস্থান করে টায়ার জ্বালিয়ে, গাছ ও ইট ফেলে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের দুই প্রান্তে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন তৈরি হয়। এতে করে দুই প্রান্তে আটকে পড়া বাসের যাত্রীরা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। বিশেষ করে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটাগামী বাসের যাত্রীদের বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কেউবা আবার দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে হেঁটেই রওনা দিয়েছেন।

এদিকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি ৮ দফা দাবি আদায়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষক নেতারা।

উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন যৌক্তিক উল্লেখ করে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর মিয়া বলেন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে শিক্ষক নির্যাতনের কারখানায় পরিণত হয়েছে। এখানে শিক্ষার কোনো পরিবেশ নেই। এখানে শিক্ষক-ছাত্র-কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিপন্থী আইন করা হয়েছে।

Advertisement

আবু জাফর মিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৮তম সিন্ডিকেটের ৯৫২ নম্বর আলোচ্যসূচি অনুযায়ী গ্রহণ করা সিদ্ধান্ত বাতিল, জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী শিক্ষকদের পদোন্নতি বিভাগীয় চেয়ারম্যান নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদন্নোয়নে অনিয়ম বন্ধ করা, সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক নিয়োগে অনিয়ম ও অস্বচ্ছতা দূর, শিক্ষা ছুটিতে অনিয়ম ও অস্বচ্ছতা দূর করা, সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির অসঙ্গতি দূর, চাকরি স্থায়ীকরণে ইচ্ছাকৃত বিলম্ব না করা, নৈমত্তিক ও মেডিকেল ছুটি প্রদানসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে ৮টি অনিয়ম উল্লেখ করে এগুলো বন্ধ করার দাবি জানানো হয়। আবু জাফর মিয়া বলেন, ৮ দফা দাবি আদায়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রতিদিন সকাল থেকে ২ ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, তাদের রাজাকারের বাচ্চা বলায় এ উপাচার্য ক্যাম্পাসে ফিরে আসার আর কোনো যৌক্তিকতা নেই। তাকে ঘটনার পর থেকেই অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। ভিসিকে ১৫ দিনের ছুটিতে নয়, হয় তার কর্ম মেয়াদকাল ২৮ মে পর্যন্ত ছুটি নতুবা পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

প্রসঙ্গত একটি অনুষ্ঠানে উপাচার্য শিক্ষার্থীদের ইঙ্গিত করে ‘রাজাকারের বাঁচ্চা’ বলে উক্তির প্রতিবাদে ২৭ মার্চ সকাল থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।

সাইফ আমীন/এমএএস/পিআর